আইনের শাসন ও কিছু কথা
॥ ড. মুহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী ॥
বর্তমানে কঠিন সময় পার করছে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া লাল সবুজের বাংলাদেশ। ক্ষমতাসীনদের অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশাল কারাগার। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। হামলা-মামলা, খুন-গুম, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করা আজ বড় অপরাধে পরিনত হয়েছে। হাজারো সঙ্কটের পর স্বৈরাচারমুক্ত দেশের স্বপ্নে বিভোর তরুণ প্রজন্ম। নতুন ভোরের প্রত্যাশায় বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে চড়িয়ে থাকা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নেতৃবৃন্দের পরিবার ও স্বজন।
২০২৪ সালের রমজানের শুরুতে পারিবারিক আমন্ত্রণে লন্ডনে গিয়েছিলাম। আমার মেঝোভাই, ছোট ভাই এবং ছোট বোন হিথ্রো বিমানবন্দরে আমাকে স্বাগত জানান। আমরা আমার ভাইয়ের গাড়িতে উঠি এবং ড্রাইভারের সিটের পাশে বসি। তখন আমার প্রতি ভাই এবং বোনের প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখে আমি অবাক হই। তারা এক কণ্ঠে বলে উঠলো- আমরা আপনার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন, আপনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তাই আপনাকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসতে হবে। কারণ বাংলাদেশ এমন একটি দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে আইনের শাসন নাই, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই।
এক পর্যায়ে আমার মেঝো ভাই বলল, বড় ভাই আপনার কি মনে আছে আমি ১৯৯০ সালে মদিনার কিং আব্দুল আজিজ সেকেন্ডারি কলেজ থেকে পাশ করার পর কম্পিউটারে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য সৌদি আরবের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করতে চেয়েছিলাম? আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এবং সাবজেক্ট এর গুণগত মান সম্পর্কে চিন্তা করিনি। বরং আমি এমন একটি দেশে যাওয়ার জন্য আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলামা যেখানে আইনের শাসন সেই রাষ্ট্র সমাজের মূল ভিত্তি। তখন আপনি আমাকে বলেছিলেন- তোমাকে আমি প্রফেসর অ্যালবার্ট ভেন ডিসির দেশে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি কে? আপনি বলেছিলেন- তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক আইনের অধ্যাপ এবং তিনিই প্রথম ‘আইনের শাসন’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন।
মেঝো ভাই বলল হ্যাঁ, মনে আছে। সেই আমি এখন দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, কবে দেখব বাংলাদেশে আইনের শাসন? আমার ভাই একই প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি করে বলে- বাংলাদেশে আইনের চোখে সব মানুষ কবে সমান হবে?
তখন আমি বললাম- ১। আমি বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশের সকল মানুষ, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সত্ত্বা, সরকারী বা বেসরকারী যাই হোক না কেন, রাষ্ট্র নিজেও জনসমক্ষে জারি করা আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। ২। যখন আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হবে। ৩। যখন বাংলাদেশের আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিধি ও মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ঠিক তখনই আমরা বলতে পারি- বাংলাদেশে আইনের শাসনের জয় হয়েছে।
তখন আমরা ইংরেজিতে বলি ” Rule of the law will win.”
আমার ছোট বোন একজন ডাক্তার ,সে একটি প্রতিবেদনের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১২৪ তম র্যাঙ্কিংয়ে তাদের গ্লোবাল রুল অফ ল ইনডেক্সে প্রকাশ করেছে। সেখানে আমরা খুবই দুর্বল অবস্থানে আছি। এই অবনতি শুধু আইনের শাসনে নয়, গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার সূচকেও যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়ছি। এই রিপোর্ট করার জন্য বিদেশী সংস্থার কোন প্রয়োজন নেই, আমরা আমাদের নিজের চোখ দিয়ে দেখতে পারি। এই সূচকটি ৭টি বিষয় বিবেচনা করে করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রক ক্ষমতার প্রয়োগ, ফৌজদারি বিচার ও দেওয়ানি বিচারের অ্যাক্সেস, জননিরাপত্তা এবং সরকারি তথ্য প্রকাশ। এগুলোর কোনোটিতেই বাংলাদেশের অগ্রগতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা আমাদের আগের র্যাঙ্ক ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছি।
তখন আমি তাকে বললাম- আমার প্রিয় বোন, প্রথমত- আমার বাবা (আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করুন) তিনি বাংলাদেশকে ভালোবাসতেন এবং তিনি আমাদের দেশকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে আমাদের বাবা সৌদি আরবে প্রবাসীদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আর্থিক অনুদান সংগ্রহে অংশ নিয়েছিলেন ,যা মুক্তিযুদ্ধের কাজে সহায়তা করার জন্য তখন ব্রিটেনে পাঠানো হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত- স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সময়ে সবাই যদি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায় এবং আমরা রাজনীতিবিদ হিসেবে পথ সংশোধনের জন্য কাজ না করি তাহলে দেশের জনগণকে ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে কে রক্ষা করবে?
আমার ছোট বোন আমার কথায় বাধা দিল, যেন সে আমার কথা পছন্দ করে না। সে বলল- বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের লজ্জার বিষয় যে আমরা আইনের শাসনের নীতি বাস্তবায়নে নেপাল রাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। দেখুন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট নেপালের বিষয়ে কি বলছে- আইনের শাসনের দিক থেকে নেপাল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তালিকায় ৭০তম স্থানে রয়েছে। নেপালের পরেই রয়েছে শ্রীলঙ্কা ৭৬তম এবং ভারত ৭৯তম স্থানে।
এখানে আমার ছোট ভাই হস্তক্ষেপ করে বলে- আমি যখন ১৯৯৯ সালে ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ছিলাম তখন আমার বড় ভাই সামাজিক, ধর্মীয় ও দাতব্য ক্ষেত্রে আগ্রহী ছিলেন। তিনি শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছিলেন ,তাই দেশে অলাভজনক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিকূল সময়ে ত্রাণ প্রদান করেন।
কিন্তু আমার বড় ভাই রাজনৈতিক কাজের দিকে ঝুঁকলেন যখন তিনি দেখলেন বাংলাদেশে আইনের শাসনের নীতি প্রয়োগ হচ্ছে না।
আমার ছোট ভাই আরো বললো- আমার মনে আছে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে, যখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে ফখর উদ্দিন-মঈন উদ্দিন সমর্থিত সরকারের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি দেশে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন। এখন আমার ভাই একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সদস্য।
আমি মনে করি- আমার ভাইয়ের পক্ষে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছেড়ে ব্রিটেনে অভিবাসন করা কঠিন হবে।
দ্বিতীয়ত: এখন বেগম খালেদা জিয়া একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় বন্দী এবং অসুস্থ। এই অবস্থায় উনাকে রেখে আমার ভাইয়ের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া ঠিক নয়।
তৃতীয়ত: বাংলাদেশের কারাগারে বর্তমানে হাজার হাজার বিরোধী নেতাকর্মী, উলামা-মাশায়েখ বন্দী রয়েছেন। দেশ জাতির এই চরম ক্রান্তিলগ্নে আমার ভাইয়ের জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ছেড়ে আসা কঠিন।
তখন আমি বললাম, ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতা গ্রহণের পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রের নীতি থেকে শেখ হাসিনার স্পষ্ট বিচ্যুতি ঘটেছে। আইনের শাসনের নীতির প্রতি তার বিরূপ মনোভাব দেখা দেয়। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ট্রাজেডীতে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের উপর তার সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিরোধী দলের নেতা যেমন- ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম ও দিনারসহ ৬০০ জনেরও বেশি লোককে জোরপূর্বক গুম করেছে।
সেই সময় গাড়ির চালকের আসানে থাকা আমার ভাই ঘোষণা করলেন, আমরা সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত সুন্দর শহর পোটস মাউতের উপকণ্ঠে এসেছি। এখানে আপনাকে স্বাগতম এবং আমাদের শহরে স্বাগতম। আমার ছোট বোন বলল আজকে আমাদের দ্বিতীয় রোজা এবং আমার বড় ভাই এর পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রোজা।
তখন আমি বললাম: তোমরা আমার পরিবার, আমি আমার জন্য তোমাদের ভয়ের মূল্যায়ন করি। বিশেষ করে বাংলাদেশে আইনের শাসনের বর্তমান অবনতির বিষয়ে। যে কেউ বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুসরণ করে নোট করে যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণ হয়ে গেছে এবং বিচার একপেশে হয়ে গেছে। আমাদের বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। রমজান মাস তাকওয়ার মাস এবং যেহেতু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, তাই তাদের উচিত ছিল মদিনা সরকারের উত্তরাধিকার অনুসরণ করা। আইনের শাসন ইসলামী ঐতিহ্য ও সভ্যতার অংশ। এটি ১৪৪৫ বছর আগে মদিনা সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত হয়েছিল। এটি এমন একটি নীতি যা বাংলাদেশী মুসলমানদের অবশ্যই পালন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ এটি একটি প্রামাণিক সাংবিধানিক নীতি। মদিনা সরকারের অনুমোদিত এবং কার্যত প্রয়োগ করা হয়েছিল। শান্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশী সমাজে আইনের শাসন অপরিহার্য এবং এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অপরিহার্য।
হযরত আবদুর রাজ্জাক তার মুসান্নাফে আবু সাঈদ আল-খুদরি থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন: আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়ের ইচ্ছায় তার ঘর থেকে বের হয়েছিলেন এবং এক ব্যক্তি তার উটের লাগাম ধরেছিলেন এবং বলল , আমার প্রয়োজন হে আল্লাহর রসূল (সাঃ) এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ আমাকে ছেড়ে দাও, তোমার প্রয়োজন পূরণ হবে। তিনি তিনবার তা করলেন, কিন্তু লোকটি উনার কথা মানলোনা। তাই নবী (সাঃ) চাবুক তুলে তাকে আঘাত করলেন এবং বললেন: ‘আমাকে ছেড়ে দাও’।
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নামাযের ইমামতি করলেন এবং যখন তিনি নামায শেষ করলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আমি যাকে আগে চাবুক মেরেছি সে কোথায়? লোকেরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলল ঃ আল্লাহর রসূলের সাহাবীগণ, এ কে যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চাবুক মেরেছেন? অতঃপর লোকটি সারির পেছন থেকে এসে বললঃ আমি আল্লাহর ক্রোধ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বললেনঃ কাছে এসো এবং চাবুক নাও আর আমাকে আঘাত কর। অর্থাৎ, একজন রাষ্ট্রপ্রধান জনগণকে বলতেছেন- ‘আমার কাছ থেকে তোমার অধিকার প্রতিষ্ঠিত কর।’ লোকটি বলল: আমি আপনাকে ক্ষমা করলাম। আল্লাহর রসূল বললেন ঃ তুমি কি আমাকে ক্ষমা করেছ?
লোকটি বলল ঃ হে আল্লাহর রসূল (সাঃ), আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘যার হাতে আমার প্রাণ, কোন মুমিন অন্য মুমিনের উপর জুলুম করে না। তাকে দুনিয়াতে তার অন্যায়ের প্রতিদান দেবেন না, তবে আল্লাহ তার উপর কিয়ামতের দিন তার প্রতিশোধ নেবেন।’
মদিনার সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানকে দেখুন, যিনি আইনের সামনে সমতা অর্জন করেন এবং এটিকে একটি সাংবিধানিক নীতি ঘোষণা করেন যার মাধ্যমে আইনের শাসন অর্জিত হয়। আইনের শাষনের আরেকটি গল্প এখানে দেখুন যেখানে অপরাধির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর আইন প্রয়োগে পক্ষপাতিত্ব না হওয়ার গল্প।
হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, মাখযুমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার (প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে) কুরাইশগণ বিভক্ত হয়ে পড়লেন। তাঁরা বলল, কে এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কথা বলতে (সুপারিশ করতে) পারে। তখন তারা বললেন, এ ব্যাপারে উসামা (রাঃ) ব্যতীত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় ব্যক্তি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথোপকথন করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদের ব্যপারে সুপারিশ করতে চাও? অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগন ধ্বংস হয়েছে এই কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করত, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! যদি ফাতিমা বিনত মুহাম্মদও চুরি করতো, তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হতো।
সুতরাং, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ এবং ফাতিমা বিনতে আল-আসওয়াদ আল-মাখজুমিয়া মদিনা সরকারের আইনের কাছে সমান,তার এবং রসূলের কন্যার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। একজন মানুষ বিচার বিভাগ দ্বারা শাস্তি প্রমাণিত হলে তা কার্যকর করতে হবে এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটাই ছিল মদিনার সরকারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্য।
চার খলিফাদের সরকার নবীর উদাহরণ অনুসরণ করেছিলেন- আইনের সামনে লোকদের নিষ্পত্তি করতে, শাস্তির ক্ষেত্রে এবং তারা তাদের মধ্যে পার্থক্য করেনি। শাসক এবং শাসিত।
একদা উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) জনগণের সম্মুখে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, আমি আমার কর্মচারীদেরকে এজন্য প্রেরণ করি না যে, তারা আপনাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালাবে এবং আপনাদের সম্পদ ছিনিয়ে নিবে। যদি কারো উপর এ ধরণের কোনো কিছু করা হয়ে থাকে তাহলে সে যেন আমার নিকট অভিযোগ করে। আমি তার প্রতিশোধ নিবো। আমর ইবনুল আস (রাঃ) বললেন, যদি কোনো ব্যক্তি তার কোনো নাগরিককে আদব শিখানোর জন্য শাস্তি দেয় তাহলে কি তার কিসাস নেয়া হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সেই পবিত্র সত্ত্বার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! জেনে রাখো! আমি তার কিসাস গ্রহণ করবো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তার নিজের বিরুদ্ধে কিসাস কার্যকর করতে দেখেছি।
একটা পর্যায়ে গাড়ি থেকে নেমে আমার মেঝো ভাইয়ের বাসায় ঢোকার পর রোজা ভাঙতে তখনও কিছু সময় বাকি ছিল। আমি পরিবারের সাথে ইফতারের টেবিলে বসলাম এবং আমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলে বললাম, হে আল্লাহ! বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের সফলতা দান করুন। তারা সবাই বলেছিলেন- আমীন। শেষ পর্যন্ত আমার পরিবার সম্মত হয়েছে যে আমি বাংলাদেশে থাকব। সোনার বাংলাদেশ ছেড়ে যাব না এবং আমি দেশের জনগণের অন্যায় ও নিপীড়ন প্রতিরোধে কাজ করব।
শেষ পর্যায়ে আমার ছোট বোন বলল আল্লাহ আপনাকে রক্ষা করুন। মানবতার সেবায় এবং বাংলাদেশে আইনের শাসনের নীতি প্রতিষ্ঠায় আপনাকে সফল করুন। আমীন।
আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছি। আর এই দৃশ্য দেখে বিশে^র বিভিন্ন দেশে বসবাসরত আমাদের পরিবার, স্বজনেরা উদ্বিগ্ন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাদেরকে বাস্তবতা বুঝাতে হবে, তাদের ভেতরে থাকা দেশপ্রেমের চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
লেখক
ড. মুহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী
উপদেষ্টা:বিএনপি চেয়ারপার্সনের।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।