আওয়ামী লীগের কয়েছ এখন জামায়াতের সক্রিয় সদস্য

সিলেট

বিগত আওয়ামী লীগের আমলের পুরোটা সময় ছিলেন দাপুটে নেতা। আওয়ামীলীগের নাম পরিচয় ব্যবহার করে নানারকম প্রভাব খাটিয়েছেন। সিলেটের পাহাড় টিলা কেটে সাবার করেছেন। ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে নিজ নামে রেকর্ড করেছেন প্রায় ১ একর ভূমি। জুলাই আগষ্টের অভ্যুত্থানে ভূমিকা থাকায় একাধিক মামলায় আসামীও করা হয় তাকে। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগার মিসবা উল ইসলাম কয়েছ এখন জামায়াতের সক্রিয় কর্মী!

পুলিশ এই ভূমিখেকোকে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার করেলে মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে নিজেকে জামাতের সক্রিয় কর্মী দাবি করেছেন মিসবাহ কয়েছ । দাবির পক্ষে প্রমাণ হিসেবে সিলেট মহানগর জামাতের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী স্বাক্ষর করা প্রত্যয়নপত্রও আদালত ও বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছেন।

বিগত আওয়ামী লীগ আমলে মিসবা উল ইসলাম কয়েছের অপকর্ম নিয়ে সংবাদপত্রে একাধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নাম পরিচয় ব্যবহার করে এই কয়েছ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করে হয়রানীও করেন ।

৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর আত্মগোপনে থাকা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলেনার কথিত পার্টনার ও আলোচিত ভূমিখেকো মিসবা উল ইসলাম কয়েছকে গত ১২ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এসময় পুলিশ জানায় কয়েছের বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় একটিসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলা রয়েছে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় এবং বাকি ছয়টি মামলা কোতোয়ালি থানায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের নানা প্রভাবশালী মহলে কয়েছ পরিচিত একজন ‘ভূমিখেকো’ হিসেবে। সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মিসেসে হেলেন আহমদের মালিকানাধীন এইচএম কর্পোরেশন ও আহমদ হাউজিং এর ব্যাবসায়ীক অংশিদার  পরিচয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের স্ত্রী সেলিনা মোমেনের সঙ্গে হেলেনার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই সম্পর্ককে ব্যবহার করে কয়েছ ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে গড়ে তোলেন ‘মোমেন ফাউন্ডেশন’। এর পেছনের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন কয়েছ নিজেই।

হেলেনার সহায়-সম্পত্তিকে কেন্দ্র করে যেসব অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে, তার বেশিরভাগেই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন কয়েছ। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও জনতার আন্দোলন প্রতিহত করতে হামলার ক্ষেত্রেও তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বড়শালা এলাকার টিলা রকম ভূমির শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে ভুয়া মামলার রায় দেখিয়ে ডি.পি ১৪৯৯ ও ১৫৭৮ নং খতিয়ান হতে ৫৮০৯, ৫৮১০, ৫৮১১ ও ৬৪০১ দাগের ভূমি কর্তন করে হেলেন আহমদের আইনজীবী ও ব্যবসায়িক এই অংশীদার নিজের নামে রেকর্ড করার সুযোগ লাভ করেন আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে-যা সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ১২ এপ্রিল পুলিশ তাকে আটক করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এর পর মিসবা উল ইসলাম কয়েছ এসব মামলায় জামিন বগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে তিনি প্রতিটি মামলায় আইনজীবীর মাধ্যমে নিজেকে জামায়াতে ইসমলামীর কর্মী দাবি করেন। প্রমাণ হিসাবে একটি প্রত্যয়ন পত্র প্রদর্শন ও দাখিল করেন। মামলার রেকর্ড সমুহ থেকে এই প্রত্যয়ন পত্রের কপি আসে ‘ইমজা নিউজ’ এর হাতে। সেখানে দেখা যায় প্রত্যয়ন পত্রটি ইস্যু করা হয় ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ইংরেজি তারিখে। প্রত্যয়ন পত্রটি স্বাক্ষর করেছেন সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো: শাহজাহান আলী।

মো: শাহজাহান আলী স্বাক্ষরিত প্রত্যয়পত্রে বলা হয়, ‘এডভোকেট মোহাম্মদ মিসবা উল ইসলাম, পিতা-মরহুম আলহাজ মোহাম্মদ নিমার আলী, মাতা-মোছাম্মত হোসনে আরা বেগম, জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৫০৭৬৪৬৪৩৫২ ঠিকানা। এইচ এম ভবন, ফরিদাবাদ, বড়শলা, পো: সিলেট ক্যাডেট কলেজ, থানা-এয়ারপোর্ট, এসএমপি সিলেট। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় কর্মী।

আমার জানা মতে তিনি বৈষম্য বিরোধী আন্দলনের পক্ষে আন্দোলন করেছেন। দক্ষিন সুরমা থানার মামলা নং ০৩। তারিখ ০৭/১১/২০২৪ ইং। যাহা দক্ষিন সুরমা জি আর ১৮৮/২০২৪ উক্ত মামলার এজাহারে বর্ণিত ১৮ নং আসামী (মিসবা কয়েছ, ৪৫ পিতা-নিমার আলী, ঠিকানা, খানা গোলাপ গঞ্জ, সিলেট)। উক্ত ১৮ নং বিবাদীর নাম ঠিকানার সহিত তাহাঁর নাম ঠিকানার আংশিক মিল রহিয়াছে। ঠিকানার মিল নাই। বিগত ১৫ বছর একটি কুচক্রি মহল হয়রানী করার জন্য এডভোকেট মোহাম্মদ মিসবা উল ইসলাম এর বিরুদ্ধে নামে-বেনামে একাধিক মিথ্যা মামলা এবং বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা কাল্পনিক অভিযোগ দায়ের করিয়াছে যাহা তদন্তে মিথ্যা সাজানো প্রমানিত হইয়াছে। আমার ধারনা হচ্ছে উক্ত মামলার সংবাদ দাতা/বাদীর অজ্ঞাতে ঐ কুচক্রি মহল তাহাঁকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে উক্ত মামলার এজাহারে তাঁহার আংশিক নাম ঠিকানা ঢুকাইয়া “স্বাধীন বাংলাদেশ” নামক ফেইক আইডির মাধ্যমে তাঁহার ছবি সংযুক্ত করিয়া উক্ত মামলার রেফারেন্স দিয়ে একাধিকবার পোষ্ট ও শেয়ার করে গ্রেপ্তার করানোর অপচেষ্টাসহ অভিযোগপত্রে তাঁহার সঠিক নাম ঠিকানা ঢুকানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে।

এমতাবস্থায় উক্ত মামলাটির তদন্ত রিপোর্ট/অভিযোগপত্র প্রদান করার সময় ন্যায় বিচারের স্বার্থে তাঁহাকে উক্ত মামলার দায় হইতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে সবিনয় অনুরোধ করা যাচ্ছে’।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বর্ণিত প্রত্যয়ন পত্রে একটি কপি সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মো: শাহজাহান আলীর ব্যবহৃত হোয়াটআপ নাম্বার ০১৭১৫৬১০৯২৭ এ প্রেরণ করে এ প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, প্রত্যয়ন পত্রটি সঠিক এবং তার স্বাক্ষরিত।

এসময় তিনি জানান, প্রত্যয়ন করা মিসবা উল ইসলাম কয়েছ এক সময় সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্র শিবিরের সাথে জড়িত ছিল। সে তাঁর পূর্বপরিচিত। সে হিসেবে তিনি তাকে জামায়াতের কর্মী বলে প্রত্যয়ন করেছেন।
এসময় মিসবা উল ইসলাম কয়েছ কবে জামায়াতের কর্মী হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন সিলেট নগরীতে ১০হাজারের বেশী জামায়াতের কর্মী রয়েছে। কে কখন কিভাবে সদস্য হয়েছে তা বলা মুশকিল। তবে কারো কোন ব্যক্তিগত অপরাধের দায় জামায়াতে ইসলামী নেবেনা বলে মোঃ শাহজাহান আলী দাবি করেন।

ইমজা নিউজ

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *