সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দুদিন পর সোমবার দুপুরে উড়োজাহাজে করে সিলেটে পৌঁছেছেন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে গেলেও মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া আটজন নেতা তার পাশে ছিলেন না।
সিলেট সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১১ জন। এদের মধ্যে সোমবার আনোয়ারুজ্জামানকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন কেবল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছালেহ আহমদ সেলিম ও আরমান আহমদ শিপলু।
মনোনয়নবঞ্চিত আনোয়ারুজ্জামানকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত না হওয়ায় দলের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে মনে বলে করছেন অনেকে। তবে এ প্রসঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে কোনো বিভেদ নেই। নৌকাকে বিজয়ী করতে সকলেই ঐক্যবদ্ধ বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হয়তো মনের চাপা কষ্ট থেকে মনোনয়নবঞ্চিত কয়েকজন নেতা বিমানবন্দরে যাননি। তবে ধীরে ধীরে বিষয়টা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দুই–চার দিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। মনোনয়ন না পাওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহ বা বিভেদের কোনো ঘটনা দলে ঘটবে না। এর কোনো আভাসও আমরা পাচ্ছি না। ঐক্যবদ্ধভাবেই আমরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করব।’
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১১ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান ছাড়া বাকি সবাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা। আনোয়ারুজ্জামানকে গত শনিবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরে সিটি নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই।
সোমবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ঢাকা থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ সময় তাকে স্বাগত জানাতে হাজারো নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।
বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকা মনোনয়নবঞ্চিত ছালেহ আহমদ সেলিম বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। তবে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যার হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছেন, আমরা তার সঙ্গেই আছি। দলে প্রতীক পাওয়া না-পাওয়া নিয়ে কোনো বিভেদ নেই। নৌকার বিজয় প্রশ্নে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা কেন বিমানবন্দরে এলেন না, তা আমার জানা নেই।’
বিমানবন্দরে অনুপস্থিত থাকা বাকি আটজন নেতা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ ও আবদুল খালিক, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল, আজাদুর রহমান আজাদ, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম। তাদের মধ্যে জাকির হোসেন ও আজাদুর রহমান দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর জরুরি প্রয়োজনে দেশের বাইরে গেছেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নগরের দুটি পৃথক স্থানে ইফতার বিতরণের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। তাই বিমানবন্দরে যেতে পারিনি। এর বাইরে অন্য কোনো কারণ ছিল না। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী করেছেন, তার পক্ষেই আমরা আছি।’
আরেক মনোনয়ন বঞ্চিত মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম বলেন, ‘ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় বিমানবন্দরে যেতে পারিনি। তবে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেব।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত এক নেতাসহ ওয়ার্ড পর্যায়ের পাঁচজন নেতা বলেন, গত দুটি সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি হঠাৎ ঘোষণা দেন, মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলের উচ্চপর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়েছেন। মহানগরের রাজনীতিতে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ না থাকায় মনোনয়ন পাওয়ার পরও আনোয়ারুজ্জামানকে দলের একটা অংশ মেনে নিতে পারছে না। ওই অংশটি ভেতরে–ভেতরে ক্ষুব্ধ।
২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়। এই মহানগরের আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার, ওয়ার্ড ৪২টি। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এবার পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রথম চারবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন।
শেয়ার করুন