রাসেল আহমদ গোয়াইনঘাট থানাধীন:
গোয়াইনঘাট থানার ৬নং ফতেপুর ইউনিয়নের নয়াগ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে। পেশায় তিনি সিএনজি অটোরিকশা মেকানিক পাশাপাশি ফতেপুর বাজারে তার ‘রাসেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দীর্ঘ ৯ বছর থেকে তিনি ফতেপুর এলাকায় সুনামের সাথে গাড়ি মেরামতের কাজ করে আসছেন। সম্প্রতি রাসেলের পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখনো নতুন বউকে ঘরে তুলা হয়নি তার। এরমধ্যে তার জীবনে নেমে আসে কালো ছায়া। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি একটি সাজানো মামলার আসামি। থানায় নিয়ে করা হয়েছে শারীরিক নির্যাতন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (৯ ডিসসেম্বর) মৌলভীবাজার থেকে সাদা পোশাকে মৌলভীবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন যান। চুরি যাওয়া সিএনজি অটোরিকাশ উদ্ধার করতে ভোর ৮টায় তারা রাসেল আহমদের ওয়ার্কশপে যান। ওয়ার্কশপ বন্ধ দেখে ডিবি পুলিশ ফতেপুর সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সভাপতি গুলজার আহমদকে ঘটনাটি অবহিত করেন। গুলজার বিষয়টি অবগত হয়ে রাসেলকে তার ওয়ার্কশপে আসতে বলেন। ডিবি পুলিশ আসার বিষয়টি জেনে রাসেল আহমদ তার কর্মচারীর মাধ্যমে ওয়ার্কশপটি খুলতে বলেন এবং তিনি নিজেও তার ওয়ার্কশপে আসেন। ঘটনাস্থলে কাজ করার জন্য ড্রাইবারদের ৩টি সিএনজি অটোরিকশা রাখা ছিল। রাসেল আহমদ আসার পর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আসা এসআই পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী তাকে জিজ্ঞাসা করেন সিএনজি অটোরিকশাগুলো কার। রাসেল তখন অটোরিকশা তিনটির মালিকের পরিচয় দেন। তখন এসআই পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী একটি অনটেস্ট গাড়ির ব্যাপারে থাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। রাসেল বলেন অনটেস্ট গাড়িটি রোববার (৮ ডিসেম্বর) তার ওয়ার্কশপে কাজের জন্য দিয়ে গেছেন রামনগর গ্রামের আজু মনাইর ছেলে কামরুল ইসলাম। তখন রাসেল কামরুলকে ফোন দিয়ে অটোরিকশার ব্যাপারে ডিবি পুলিশ আসার কথা জানান এবং তাকে ওয়ার্কশপে আসতে বলেন। একথা জেনে কামরুল ইসলাম মুঠোফোন বন্ধ করে দেন। কামরুল না আসায় ওয়ার্কশপ মেকানিক রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মৌলভীবাজার নিয়ে যায় ‘ডিবি পুলিশ’। এসময় উপস্থিত স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, তারা রাসেল আহমকে আটক করেননি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসাবদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
তবে মৌলভীবাজার থানায় গিয়ে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। উল্টো ওর্য়াকশপের মালিক ও মেকানিক রাসেল আহমদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে বানিয়ে দেয় ‘আন্তঃজেলা চোর চক্র’র সদস্য। খোঁজ নিয়ে যানা গেছে রাসেল আহমদের বিরুদ্ধে সিলেটসহ সারা দেশে কোনো ধরনের মামলা নেই। রাসেলকে মৌলভীবাজার সদর থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে হারিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিশেহারা অবস্থায় আছে ১১ সদস্যের পরিবার। রাসেলের বাবা মা তাদের নিরপরাধ ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন।
মেকানিক রাসেল আহমদের পিতা ফয়েজ উদ্দিনের দাবি তার ছেলেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশ আসল আসামিকে না আটক করে তার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গিয়ে উল্টো ‘চোর’ বানিয়ে দিয়েছে। তারা আসল আসামি কামরুলকে না পেয়ে তাঁর নিরপরাধ ছেলেকে নিয়ে অপরাধী সাজিয়েছে। এর জন্য তিনি আল্লাহর কাছে বিচার চান। এবং বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানান।
খেলাফত মজলিস গোয়াইনঘাট উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আহমদ চৌধুরী জানান, ডিবি পুলিশ রাসলকে ওয়ার্কশপে আসার কথা বললে আমি তাকে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়ানো দেখে আমার মোটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর সাদা পোশাকে একদল পুলিশ দেখতে পাই। তারা একটি অনটেস্ট সিএনজির ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ওই সময় সিএনজি অটোরিকশার মালিককে ফোন দিতে বলেন। রাসেল ওই সিএনজি অটোরিকশার মালিককে ফোন দিলে সে ওয়ার্কশপে আসছে বলে ডিবি পুলিশের খবর পেয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়। পরে সিএনজি অটোরিকশাটি চুরির জানিয়ে পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী নামের এক কর্মকর্তা রাসেল ও সিএনজি অটোরিকাশা নিয়ে মৌলভীবাজার রওনা দেন। ৫ আগস্টের পর তবে পুলিশ শুনেছি সংশোধন হয়েছে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয় দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানী ও মামলা দেওয়া হচ্ছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানায় রাসেলকে দেখতে এক সংবাদকর্মী গেলে মেকানিক রাসেল আহমদ তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির আদায়ের চেষ্টা করেছেন মৌলভীবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী বলে জানান।
তবে থানায় নিয়ে নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তির আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তী।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, রাসেলকে কোনও ধরেনর নির্যাতন করা হয়নি। রাসেল আহমদকে ওয়ার্কশপের মালিক হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে নাকি চোর হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ সরকারক জানান, মেকানিক রাসেল আহমেদের বিরুদ্ধে থানায় কোনও মামলা নেই।