অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ নির্বাচন করা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এরআগে ভোর সাড়ে ৬টায় রাজধানীর নিউ মার্কেটের কাছে বলাকা সিনেমা হলের সামনে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশাল প্রভাতফেরি আজিমপুর কবরস্থানে যায় রিজভীর নেতৃত্বে। সেখানে ভাষা শহীদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং ফাতেহা পাঠ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে বিএনপির প্রভাতফেরি। নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে। রিজভীর নেতৃত্বে শহীদ মিনারের বেদীতে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ নির্বাচন করা এবং তার সঙ্গে আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজ আছে, বিভিন্ন সংস্কার আছে, যেটা প্রয়োজনীয় সংস্কার সেটা যে সময় আছে, সেই সময়ে করা সম্ভব। কিন্তু জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে, যে দেশের জনগণ এবং তরুণ প্রজন্ম আজকে যাদের ১৮ বছর বয়স, যাদের একুশ বছর বয়স তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি, ভোট কী তারা জানে না। কারণ ১৭ বছর ভোট হয়েছে আপনার চতুষ্পদ জন্তু দিয়ে ভোটকেন্দ্রে দিনের ভোট রাতে করেছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছে, ভোট ধ্বংস করেছে। এগুলো থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করার জন্যই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ‘আগে স্থানীয় সরকার না পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এই বিতর্কে আমার মনে হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। বরং এই সরকারকে প্রথমেই জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ তাদের নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করবে তারাই নির্ধারণ করবে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন না অন্যান্য নির্বাচন কখন হবে। আপনারা দেখেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী জিতেছে, সিলেট সিটি নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান জিতেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনে মোহাম্মদ হানিফ জিতেছে, বিএনপির সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করায় বিরোধীরা জিতেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সেটা হয়নি।’
খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে দেয়া তথ্য সঠিক নয় জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘আমাদের কিছু কিছু নেতা বা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি হবে, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। কিন্তু এটা আমাদের দল বিএনপির অবস্থান নয়। এই কথাটা আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম।
তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা অম্লান চেতনা, এই চেতনা কোনোদিন ম্লান হবে না। যদি আবারো কোনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, কোনো ধরনের ডিক্টেটরের উত্থান ঘটে- একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দামাল ছেলেদের, এদেশের জনগণকে আবারো রাজপথে লড়াইয়ে নামতে উদ্বুদ্ধ করবে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, ৫২’ এর একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছে এমন একটি চেতনা, এমন একটি বৈপ্লবিক আদর্শ যা আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে-যেটাকে কখনোই ধ্বংস করা যায় না, যেটিকে কখনোই ম্লান করা যায় না। একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে অনাধিকাল ধরে যতদিন পৃথিবীর মানুষ এবং আমাদের সমাজ-সংসার থাকবে ততদিন একুশ আমাদেরকে সাহস যোগাবে এবং লড়াই করতে উদ্ধুব্ধ করবে।’
এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী সপু, আমিনুল হক, ইশরাক হোসেন, মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়নসহ দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ার করুন