কলাপাতায় শুয়ে ছিলেন মানিক, বাঁচার জন্য টাকা অফার করেন!

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সমালোচিত টক-শো আলোচক এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে  সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় আটক করেছে বিজিবি। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে কানাইঘাটের দনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয় হয়েছে বলে একাধিক সূত্র বলছে।

তবে মানিক শুক্রবার দিনে ভারতে অনুপ্রবেশ করে ফের সন্ধ্যার দিকে বাধ্য হয়ে এপারে ফিরে আসেন এবং এসময়ই বিজিবি’র হাতে আটক হন বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে।

 

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে- আটকের পর দনা বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাকে ক্যাম্পে নিয়ে গেছেন এবং কানাইঘাট থানাপুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

বিজিবি ক্যাম্পে মানিকের থানার বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন।

 

 

স্থানীয় একাধিক সূত্র বলছে, শুক্রবার দিনের কোনো এক সময় সাবেক শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে দনা সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। কিন্তু সেখানে তাকে স্থানীয় কিছু লোক আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তার নাম-পরিচয় জানান। এসময় ভিডিও চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শামসুদ্দিন মানিককে নিজের পরিচয় দিয়ে একটি ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে- টাকা লাগলে আমি দিবো, আমার ভাই-বোন দিবেন, আমি এদেশে এত কষ্ট করে এসেছি কি বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য?

এসময় তিনি ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় কলাপাতায় শুয়েছিলেন।

তবে আরেকটি সূত্র বলছে- দনা পাতিছড়া গ্রামের একজনের সহায়তায় অবৈধভাবে শুক্রবার বিকেলের দিকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। পরে তাকে দনা বিজিবির সদস্যরা আটক করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান।

এদিকে, আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে- বিজিবির হাতে আটকে পর তিনি ভয় পাচ্ছিলেন- তাকে ছাত্র-জনতা বা সাধারণ লোক মারধর করবে বলে। তবে এসময় বিজিবির পক্ষ থেকে রক্ষা করা হবে আশ্বাস প্রদান করা হয়।

শেষ খবর পাওয়া (শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা) পর্যন্ত দনা বিজিবি ক্যাম্পে থাকা দেশের আলোচিত-সমালোচিত সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিককে দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করেছেন।

 

উল্লেখ্য, হাসিনা সরকার পতনের আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আলোচনার এক পর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে সঞ্চালকের উপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। পুরো অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার সঞ্চালকের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন এবং উচ্চবাচ্য করেন।

এখানেই শেষ নয়, অনুষ্ঠান শেষে স্টুডিও ছাড়ার আগে সঞ্চালককে প্রকাশ অযোগ্য ভাষায় গালি দেন বিচারপতি মানিক। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে অবশ্য তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন এ বিষয়ে।

 

এদিকে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনরে পর আত্মগোপনে চলে যান শামসুদ্দিন মানিক। পরে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) এই সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে জিয়া পরিবার নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলামের আদালতে জিয়াউর হক নামে এক আইনজীবী মামলার আবেদন করেন।

মামলায় অভিযোগ- শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর চ্যানেল আই’র টকশো ‘মেট্রোসেম টু দ্য পয়েন্টে’ জিয়াউর রহমানকে রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিহিত করেন। গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এক সেমিনারে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি ছিলের মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী।

২০১৩ সালের ১৯ জুলাই ভিন্ন অনুষ্ঠানে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেনন জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এছাড়া আসামিরা বিভিন্ন সময় জিয়া পরিবার নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছে বলে মামালর এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মানিক অবসরে যান। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক-শোতে কথা বলতেন তিনি।

 

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *