কাজে ফেরেননি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারতীয় কর্মকর্তারা

জাতীয়

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে বিদ্যুৎ স্থানান্তর করতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পগুলোর দায়িত্ব পাওয়া ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখনো কাজে ফেরেননি। ফলে এই প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, “কেইসি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও ট্রান্সরেল লাইটিং লিমিটেডের (টিটিএল) কয়েকজন কর্মী ফিরে এলেও লারসেন অ্যান্ড টুব্রো লিমিটেড (এল অ্যান্ড টি) বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ এখনো ফিরে আসেননি।”

এই কর্মকর্তা আরও জানান, ফিরে আসা কর্মীদের বেশিরভাগই কেইসির স্থানীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অস্থায়ী কর্মী এবং মধ্যম স্তরের কর্মকর্তা কিন্তু এখনো কোনো সিনিয়র কর্মকর্তা সাইটে ফিরে আসেননি।

তবে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের আরেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এল অ্যান্ড টির ভারতীয় কর্মীরা ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পগুলোতে পুনরায় যোগ দেবেন বলে আশা করছেন তারা। তিনি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করছি তারা আবার কাজ শুরু করবে।”

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সব কর্মী বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। এখন তাদের ফিরিয়ে আনতে বিলম্ব হচ্ছে। যার ফলে ভারতীয় ঠিকাদারদের দায়িত্বে থাকা সঞ্চালন প্রকল্পগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশ জুড়ে ১৭টি সঞ্চালন প্রকল্পে দায়িত্বে রয়েছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। দায়িত্বপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে- এল অ্যান্ড টি, ট্রান্সরেল ও কেইসি। এই সঞ্চালন প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা বলেন, “ভারতীয় ঠিকাদার কর্মীরা আকস্মিক চলে যাওয়ায় এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ভারতীয় অন্যতম শীর্ষ ঠিকাদার লারসেন অ্যান্ড টুব্রোকে পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য প্রধান প্রধান চুক্তিগুলো দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ৪০০ কেভি ও ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের দায়িত্ব পেয়েছে যেগুলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের গ্রিড সিংঙ্ক্রোনাইজেশন এবং টেস্টিং প্রক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর কাজ ২০২৫ সালের প্রথম দিকে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

প্রাথমিকভাবে এক্সিম ব্যাংক থেকে ৮,২১৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকারের ১,৫২৭ কোটি টাকা এবং পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের ১,২৩৫ কোটি টাকা অর্থায়নে সঞ্চালন প্রকল্পটিতে আনুমানিক ১০,৯৮১ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি জানায়, সঞ্চালন প্রকল্পে পাঁচটি বড় অংশ রয়েছে- ১৩ কিলোমিটার রিভার ক্রসিংসহ ৪৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন; ৭ কিলোমিটার রিভার ক্রসিংসহ ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন; ৪০০ কেভি পাঁচটি বে এক্সটেনশন; ২৩০ কেভি চারটি বে এক্সটেনশন এবং ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ সুরক্ষা, সুরক্ষা ব্যবস্থা, জরুরি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার গুণগত উন্নয়ন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *