পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গত মে মাসে রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহানকে কানাডায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আওয়ামী ঘরানার হিসেবে তার আছে পরিচিতি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কানাডায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বিদেশে পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসরদের পুনর্বাসন করছেন।
জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাহিদা সোবহানের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতাদের সরব উপস্থিতিতে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। শেখ হাসিনার এসব সমর্থকরা গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে টরন্টোতে সভা সমাবেশ করেছেন এবং এবং প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কানাডা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসমা আহমেদ, ফজরুল করিম, নওশের আলী, শাকিল আহমেদ, শরীফুল ইসলাম, তাসনুভা বাশার, ফারহানা খান, নাইমা ফেরদৌসী, রাসেল রহমান সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ ও মহিলা লীগের উপস্থিত সকলেই বক্তব্য রাখেন।
অভিযোগ রয়েছে হাইকমিশনার নাহিদা সোবহান যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকসহ কানাডায় পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তিনি আওয়ামী লীগকে কানাডায় পুনর্বাসনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মতবিনিময় সভা সম্পর্কে কানাডায় জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী কমিউনিটি নেতা তানভীর কোহিনুর বলেন ‘বর্তমান বাংলাদেশ সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণিত করতে যারা দিনভর কাজ করছেন, সেই তাদেরকে নিয়েই এই হাইকমিশনার কীভাবে মতবিনিময় ও নৈশভোজ করেন। মতবিনিময় সভায় হল ভর্তি শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী দোসররা উপস্থিত ছিলেন। তাদেরই তিনি নানা সুবিধা দিচ্ছেন।’
স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা বলেন, অনুষ্ঠানে যারা জুলাই-আগস্ট আন্দোলন করেছেন তাদের সাথে কোন রকমের যোগাযোগ করা হয়নি। অনুষ্ঠানে স্মারকলিপিতে নাহিদা সোবহান গণতন্ত্রের বিজয়ের পরমুহূর্তে কানাডা হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় অথচ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কানাডায় এসেছেন জুলাইয়ের পর কিন্তু মে মাসে তাকে জর্ডান থেকে কানাডার হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয় যখন শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকারের দায়িত্বে ছিলেন।
বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার) ১৫তম ব্যাচের একজন কূটনীতিক হিসেবে নাহিদা সোবহান ১৯৯৫ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তিনি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জর্ডানের পাশাপাশি রাষ্ট্রদূত হিসেবে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন।
কূটনৈতিক হিসেবে নাহিদা সোবহান জেনেভা, রোম ও কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। জর্ডানে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতিসংঘ ও বহুপক্ষীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক অণু বিভাগের মহাপরিচালকের পদে ছিলেন।
নাহিদা সোবহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশে ও বিদেশে বেশ কিছু পেশাগত প্রশিক্ষণ কোর্স করেছেন।