কুলাউড়ায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা, ঠাঁই হয়নি ত্যাগীদের, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মৌলভীবাজার

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত সোমবার ২০ জানুয়ারি রাতে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের যৌথ স্বাক্ষরে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা বিএনপির ২১ সদস্য নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা এবং জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে এই কমিটিতে মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পদবঞ্চিত, অবমূল্যায়নের শিকার নেতাকর্মীদের পক্ষের অনুসারীরা দেশ-বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা করছেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঘোষিত উপজেলা আহবায়ক কমিটিতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন- আহবায়ক রেদওয়ান খান, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বদরুল হোসেন খান, যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল জলিল জামাল ও শওকতুল ইসলাম শকু, সদস্য এ এন এম খালেদ লাকী, ময়নুল হক বকুল, জয়নাল আবেদীন বাচ্চু, শামিম আহমদ চৌধুরী, এম এ মজিদ, আজিজুর রহমান মনির, আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, বদরুজ্জামান সজল, ডা. মো. তারু খান, আবু সুফিয়ান, ফারুক আহমদ পান্না, আকদ্দস আলী, রুমেল খান, হারুন মিয়া, কমর উদ্দিন কমরু, আব্দুল মুক্তাদির মুক্তার ও কামরুল ইসলাম পাখি।
আহবায়ক কমিটিতে বাদ পড়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি রফিক আহমদ ও রফিক মিয়া ফাতু, প্রচার সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস ছালাম ও দেলোয়ার হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সারোয়ার আলম বেলাল, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সুরমান আহমদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির মনু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, যুব বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মুহিত বাবলু, সদস্য জয়নুল ইসলাম জুনেদ, কামাল আহমদ, মনিরুজ্জামান হেলাল, বিএনপি নেতা মুহিতুর রহমানসহ অনেকে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য সুফিয়ান আহমেদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আমি দুঃখিত লজ্জিত। যাদের নিয়ে কুলাউড়ার রাজপথে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো পথে প্রান্তরে আন্দোলনের সারথি তাদের মধ্যে সারোয়ার আলম বেলাল, আব্দুল মুক্তাদির মনু, শেখ শহীদুল ইসলাম, সুরমান আহমেদ, সাইফুল ইসলাম মেম্বার ছিলেন অন্যতম। বিগত সময়ে হরতাল-অবরোধ, জেল, চুর-পুলিশ খেলা যাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল আজ তারা বিএনপি নামক সংগঠনে অপ্রাসঙ্গিক। আর ঘরে বসে আন্দোলনে অংশ না নেওয়ার জন্য হুমকি দিত তারা সদর্পে কমিটিতে। নীতি নির্ধারকদের কথা এবং কাজে এত ব্যবধান নিঃসন্দেহে দায় আপনাদের নিতেই হবে। কিভাবে, কোথায়, কখন পরিস্থিতির উদ্ভব হবে জলন্ত প্রমান শেখ হাসিনা।’
উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মাজহারুল ইসলাম জনি ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘আহবায়ক কমিটি ঘোষণায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা এবং জেল-জুলুমের মুখোমুখি হয়েছেন, তাদের প্রতি এই কমিটিতে অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হয়েছে। দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, অভিজ্ঞ ও ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে কমিটিতে এমন কিছু ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা বিগত সময়ে দলীয় আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ও নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে যারা দলের দুঃসময়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের পরিশ্রম ও ত্যাগের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। নেতাদের সম্মান, অভিজ্ঞতা ও ত্যাগকে উপেক্ষা করা একটি রাজনৈতিক দলের ভেতরে ভাঙনের ইঙ্গিত বহন করে। জেলা থেকে অনুমোদিত এই কমিটিতে স্থানীয় নেতাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে, যা একটি গণতান্ত্রিক দলের নীতিমালার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যারা বিগত ১৫ বছরে দলের পক্ষে কোনো কার্যকর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি, তারা এখন সুযোগ বুঝে নিজেকে ত্যাগী নেতা হিসেবে উপস্থাপন করছেন। এটি দলের ভেতরে হতাশা এবং ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দলীয় ঐক্য পুনরুদ্ধার ও ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করার জন্য কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃত্বের প্রতি জোরালো আহ্বান জানানো প্রয়োজন। উপজেলা বিএনপির এই সংকট যদি দ্রুত সমাধান না করা হয়, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব দলীয় কর্মীদের মনোবলে আঘাত করবে এবং ভবিষ্যতের আন্দোলনকে দুর্বল করে দেবে।’

সাবেক পৌর কাউন্সিলর কায়ছার আরিফ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘কুলাউড়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে প্রবীণ ও নবীনদের সিরিয়াল বিবেচনা করা উচিত ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে এর একটি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।’
উপজেলা আহবায়ক কমিটিতে পদবঞ্চিত আব্দুল মুক্তাদির মনু তাঁর ফেসবুকে লিখেন, ষড়যন্ত্র করে সরানো যাবেনা। বিএনপি রক্তের সাথে মিশে আছে এত সহজ না। ছিলাম আছি থাকবো।
উপজেলা আহবায়ক কমিটিতে পদবঞ্চিত সারোয়ার আলম বেলাল বলেন, দলের দুঃসময়ে সবসময় রাজপথের সকল আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু দলের সুসময়ে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। দলের যে কোন প্রয়োজনে সবসময় পাশে থাকবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভি করেননি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *