সিলেটে দুই তরুণীকে হোটেলে আটকে রেখে দল বেঁধে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার অন্যতম আসামী তানজিনা আক্তার তানিয়া ( ২৫) নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছেন।
তানজিয়া আক্তারের পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, এ ধর্ষণকাণ্ডের ঘটনায় তিনি কোনভাবেই জড়িত নন। তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে ঘটনার বিস্তারিত জানতে তানিয়ার সাথে যোগাযোগ করে কথা বলতে সমর্থ হয় সিলেট লাইনের অনুসন্ধানী দল।
একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন, রক্তদানের কথা বলে আমি নাকি চম্পা ও রিয়াকে হোটলে নিয়ে গিয়েছি, যা ডাহা মিথ্যা। বর্তমান সময়ে চারদিকে সিসি ক্যামেরা সক্রিয়। কোথাও কোন সিসি ফুটেজে আমার সম্পৃক্ততা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।এইদিন আমি এই এলাকায় যাইনি সুতরাং এই ঘটনায় আমাকে কেন জড়ানো হয়েছে তা আমার বোধগম্য নয়।এসময় তিনি দাবী করেন তাকে ফাসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে একটি চক্র কাজ করছে।এই ঘটনায় তিনি পুলিশ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।যাতে প্রকৃত ঘটনা আড়াল না পড়ে যায়।তিনি এসময় সিলেট প্রতিদিনকে আরও জানান,আইনের মাধ্যমে ঘটনা মোকাবিলা করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করবেন।
জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে নগরীর পাঠানটুলাস্থ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশের গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলে দুই তরুণী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন।
এ ঘটনায় তারা সিলেটের জালালাবাদ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন (নং-২৯ ও ৩০/ ২৮/০৮/২০২২)।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার নগর গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোহাইমিন রহমান রাহি (৩৩), সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের মৃত তহুর আলীর ছেলে জুবেল (৩১), পাঠানটুলা এলাকার আলী আকবরের ছেলে রানা আহমদ শিপলু ওরফে শিবলু (৩৫), সুনামগঞ্জ সদর থানার হরিনাপাট গ্রামের ফরহাদ রাজা চৌধুরীর ছেলে নাবিল রাজা চৌধুরী (৩৫) ও সুজন (৩৫) এবং অজ্ঞাত আরও ৫/৬ জন ছাড়াও ধর্ষণকাণ্ডে সহায়তাকারী তানজিনা আক্তার তানিয়া (২৫)।
মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে আইএলটিএস পড়ার জন্য সিলেট নগরীতে আসেন বালাগঞ্জ উপজেলার এক তরুণী (১৮)। তার সাথে আরেক নাট্যশিল্পী তরুণীর (২৫) সঙ্গে শাহজালাল উপশহরের একটি বাসায় থাকতেন। সে সুবাদে ওই এলাকার স্নেহা বিউটি পার্লারের গিয়ে তানজিনা আক্তার তানিয়া (২৫) নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয়। তানিয়া সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়সিদ্দি গ্রামের দবির মিয়ার মেয়ে। তিনি শাহজালাল উপশহরের এইচ ব্লকের ৪ নং রোডের আলী ভিলা নামক ৫ তলা বাসায় ভাড়াটে থাকেন।
এজাহারসূত্রে আরও জানা যায়, পরিচয়ের এক পর্যায়ে আইএলটিএস করতে আসা তরুণী তানিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে তানিয়া ফোন করে ওই তরুণীকে বলে-তার ভাইয়ের জন্য এবি পজিটিভ রক্ত প্রয়োজন। ওই তরুণীর এবি পজিটিভ রক্ত হওয়ায় রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে যান। এমন ফোন পেয়ে ওই তরুণী তার রুমমেট বান্ধবীকে নিয়ে রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালের সামনে যান। সেখানে গিয়ে তানিয়াকে দেখতে পেয়ে রক্ত দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তানিয়া বলেন, রক্ত দেওয়ার আগে তার এক কাজিনের বাসায় একটু প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন শেষ করে তারা হাসপাতালে যাবেন।
এ কথা বলে কৌশলে ওই দুই তরুণীকে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী গ্রিন হিল আবাসিক হোটেলের ৪র্থ তলায় নিয়ে যান তানিয়া। তাদের দুজনকে কক্ষে বসিয়ে রাখেন। এসময় তানিয়ার সহযোগী কয়েকজন তরুণ ও যুবক এসে ওই দুই তরুণীকে আটকে রাখেন এবং রাত সাড়ে ১১টার থেকে একের পর এক ১০-১২ জন যুবক তাদের দুজনকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। এছাড়াও ভিকটিম এক তরুণীর (১৮) কাছ থেকে তার মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা পয়সা জোরপূর্বক নিয়ে যান তানিয়া ও ধর্ষকরা।
পরদিন (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে ভিকটিম দুই তরুণীকে এক কক্ষে নিয়ে তাদের কাছ থেকে ‘ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি’ এ মর্মে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয় এবং এ কথাগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও করে তাদের ছেড়ে দেন তানিয়া ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পর জিম্মি দশা থেকে ছাড়া পেয়ে ৫ দিন পর দুই ভিকটিম তরুণী জালালাবাদ থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেছেন।
শেয়ার করুন