গরমে যোগান কম, সবজির দাম আকাশছোঁয়া

সিলেট

মুনশী ইকবাল: প্রকৃতির গরম এসে লেগেছে সিলেটের সবজি বাজারে। প্রতিটি পণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। সবচেয়ে বেশি ২শ টাকা থেকে ৪শ টাকা বিক্রি হচ্ছে ধনেপাতা। আর কাচামরিচ ৮০ থেকে ১৪০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন একদিকে তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে যোগান কম তাই সবজির দাম চড়া। ঈদের পর থেকেই সবজির দাম উর্ধ্বগতিতে। এরমধ্যে এখন সবজির মৌসুম নয় তাই শীতের মতো সবধরনের সবজির ফলন গরমে হয়না। তাছাড়া গরমে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে যা সবজি মিলে তা থেকেও পচে গলে আরও কমে যায়। দাম বাড়ায় কমেছে বিক্রিও। অনেক খুচরা বিক্রেতাদের দেখা গেছে অলস সময় পার করছেন। একদিকে ক্রেতা কম অন্যদিকে প্রচন্ড গরমে সবজি নষ্ট হচ্ছে। তাই লাভের চেয়ে পুঁজি টিকিয়ে রাখতেই ঘাম ছাড়তে হচ্ছে অনেক বিক্রেতাকে। দ্বিগুণ তিনগুণ দামে নাকাল হয়ে নাভিশ্বাস উঠছে ক্রেতাদেরও। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাছ মাংস খাওয়া তো ভুলেই যাচ্ছি, সবজি দিয়ে টিকে ছিলাম তাও মনে হয় ছাড়তে হবে। সিলেটে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সাথে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
সিলেটের সোবহানীঘাটে সবজির সবচেয়ে বড়ো পাইকারি বাজার। এখানে কথা হয় পাইকারি বিক্রেতা শফিকের সাথে।

 

তিনি বলেন ঈদের পর থেকেই সবজির যোগান একেবারেই কম, সেই তুলনায় চাহিদা বেশি, তাই ভোরে আলো ফুটার আগেই বেশিরভাগ সবজি শেষ হয়ে যায়। যোগান কম থাকলে জিনিসের দাম বেশি থাকে, তাছাড়া কদিন থেকে প্রচন্ড গরম পড়েছে এতে অনেক সবজি রাস্তায়ই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দাম বাড়ার এটাও একটা কারণ। যোগান কেমন কম জানতে চাইলে এক ব্যবসায়ী বলেন আগে যেখানে ১০ থেকে ১২ ট্রাক সবজি এসে বাজারে নামতো এখন সেখানে মাত্র ৩ থেকে ৪ ট্রাক সবজি আসছে, যা আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। তিনি বলেন গত কয়েকদিন থেকে সারাদেশে তীব্র গরম পড়েছে। বাজারে যে সবজি পাওয়া যায় তার বড়ো একটা অংশ আশে উত্তরবঙ্গ থেকে। এসব অঞ্চলে গরম আরও বেশি। তাই অনেক জায়গায় মাঠেই রোদে ফসল নষ্ট হচ্ছে, পরিবহনে গরমে নষ্ট হচ্ছে। এসব মিলিয়ে যোগান একেবারেই কম। যোগান না বাড়লে দামের ব্যাপারে কিছুই করা যাবে না।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর বন্দরবাজারে বাজার করতে আসা এক ক্রেতা জানান, সবকিছু খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি দামের জ¦ালায়। এখন বাকি ছিল সবজি দিয়ে কোনোরকম খেয়ে বাঁচা, কিন্তু জিনিসপত্রের যা দাম দেখছি কী খেয়ে বাঁচবো দিশা পাচ্ছিনা। কাল যে সবজি একদামে কিনি পরদিন এসে দেখি দাম বেড়ে গিয়েছে। দাম বাড়ারও কোনো সিস্টেম পাই না। একলাফে অর্ধেক বেড়ে যায়।

খুচরা সবজি বিক্রেতা গোবিন্দ জানান বাজারের অবস্থা খুব খারাপ। দামে আগুন তাও ভোর চারটার দিকে যাই। একটু দেরি করলে আর সবজি পাওয়া যায় না, সব শেষ হয়ে যায়। তখন নিচে পড়ে থাকা সবজি ভোরের চেয়ে বেশি দামে আনতে হয়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়ে। তারউপর কোনো সবজি বাছাই করে আনা যাবে না। পাল্লায় যা উঠবে পচা হোক মজা হোক আনতে হবে। নইলে পাইকার সবজি বিক্রি করবে না। এতে যে দামে আমরা সবজি কিনি তা এনে পরিষ্কার ও বাছাই করে আরও কমে যায়। গরমে এবং রোদে অনেক সবজি নষ্ট হয়, সারাদিন পানি দিয়ে কত আর টিকানো যায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম ডাবল হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের সাথে প্রতিদিন বাকবিতন্ডা হয়। এখন বাধ্য হয়ে অনেক সবজি আর আনি না। পাইকারি বাজারেই দাম যদি ২শ ৩শ হয় তাহলে খুচরা কতো বিক্রি করবো? তাই পরিশ্রম, কষ্ট আর দাম সব মিলিয়ে টিকে থাকা দায় হচ্ছে।

মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরনের সবজির দাম বেড়েছে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৫০টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৫০ টাকা। ঢেড়ষ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০-৩৫টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৩০ টাকা। পটল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৫০ টাকা। চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৪০টাকা। ঝিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৪৮ টাকা। কুমড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস ৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৬০-৬৫ টাকা। লাউ বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৭০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৫০-৬০ টাকা। করোলা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০টাকা, যা পাইকারি বাজারে কেনা পড়ছে ৬০ টাকা। যে শসা রোজায় বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। সবচেয়ে বেশি ধনে পাতা বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২শ টাকা, যা পাইকারি বাজারেই এখন কেনা পড়ছে ৩শ টাকা। কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ টাকা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *