সিলেটের ওসমানীনগরে বাসা থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের ছয়দিনেও জ্ঞান ফিরেনি মেয়ে সামিরা ইসলামের। তার কিডনি ও লিভার কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
এদিকে, ছয়দিনেও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অচেতন অবস্থায় মারা যাওয়া বাবা ও ছেলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ঘটনার রাতে খাওয়া খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদন আসলেই জট খুলবে রহস্যের- এমনটা দাবি করছে পুলিশ। তবে এর জন্য আরও অন্তত ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে মারা যাওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাদিকুল ইসলামকে। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় তাদেরকে এখনই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে না। তবে এখনো জ্ঞানহীন অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রফিকুল ইসরামের মেয়ে সামিরা ইসলাম।
ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল গাফ্ফার রবিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেটভিউ-কে জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর সামিরার একবারের জন্যও জ্ঞান ফিরেনি। তার কিডনি ও লিভার কাজ করছে না। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
এদিকে, হাসপাতালে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাদিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তিনি জানান, ‘তারা সঠিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। তাই তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’
এই অবস্থায় অচেতন অবস্থায় মারা যাওয়া রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামের ময়নাতদন্ত ও ঘটনার রাতে খাওয়া খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদন হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার। এজন্য আরও অন্তত ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন। এরপর ঢাকায় একসপ্তাহ থেকে গত ১৮ জুলাই তাজপুর স্কুল রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন । ২৫ জুলাই সোমবার রাতের খাবার খেয়ে স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে বাসার একটি কক্ষে রফিকুল এবং অপর দুটি কক্ষে শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও শ্যালকের মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
মঙ্গলবার সকালে বাসার অন্যান্য কক্ষে থাকা আত্মীয়রা ডাকাডাকি করে রফিকুলদের কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন দেন। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে ওসমানীনগর থানাপুলিশের একটি দল গিয়ে দরজা ভেঙে অচেতন অবস্থায় পাঁচ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রফিকুল ইসলাম ও মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাকি তিনজনকে হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়।
ময়না তদন্ত শেষে ঘটনার পরদিন বিকেলে মৃত বাবা-ছেলের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের বড় ধিরারাই গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
শেয়ার করুন