ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের আপত্তির মুখে বিলটি পাস হয়। বিরোধী দলের দাবি, এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।
অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে দাবি করেছেন, ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০২৩’ উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিরোধী দলের বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি হয়।
বিদ্যমান আরপিও অনুযায়ী, অনিয়ম বা বিরাজমান বিভিন্ন অপকর্মের কারণে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যদি মনে করে, তারা আইনানুগ নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না, তাহলে নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এখন এই ক্ষমতা সীমিত করে ইসিকে শুধু ভোটের দিন নির্দিষ্ট সংসদীয় আসনের (অনিয়মের কারণে) ভোট বন্ধ করতে পারার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(ক) ধারায় বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হইবেন না, তাহা হইলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র [বা, ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায়] নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে।’
আরপিওর সংশোধনী অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করে ফেলার পর কোনো আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না ইসি। যেসব ভোটকেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসবে, শুধু সেসব ভোটকেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর তদন্ত সাপেক্ষে ফলাফল বাতিল করে ওইসব কেন্দ্রে নতুন নির্বাচন দিতে পারবে ইসি।
সংশোধনীতে আরপিওর ৯১ ধারার (এ) উপধারায় ‘ইলেকশন’ শব্দের বদলে ‘পোলিং’ শব্দ প্রতিস্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’। আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। এই সংশোধনীর ফলে নির্বাচন কমিশন অনিয়মের কারণে শুধু ভোটের দিন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো সংসদীয় আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ‘ইলেকশন’ শব্দটি থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারত।
সংশোধিত আরপিওতে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা গণমাধ্যমকর্মী এবং পর্যবেক্ষকদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সরকারি সেবার বিল পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে মনোনয়ন দেওয়ার সাত দিন আগে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হতো।
সংবিধান অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর আগে আরপিওতে সংশোধনী আনা হলো।
শেয়ার করুন