ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্ত আরো উর্ধ্বমুখী

জাতীয়

চলতি মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। গত মাসের তুলনায় মৃত্যুর হারও বেশি চলতি মাসে। গত মাসে গড়ে দৈনিক ১১ জন করে মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। সেখানে এ মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৩ জনের বেশি প্রাণ হারাচ্ছেন। দিন যত যাচ্ছে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মিছিল ততই দীর্ঘ হচ্ছে।চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে, আগের কোনো মাসের দুই সপ্তাহে এত মৃত্যু হয়নি। আগের কোনো মাসে গড়ে প্রতিদিন এত মৃত্যু দেখা যায়নি। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হলো ১৯৭ জনের।জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে ঢাকার চেয়ে বাইরে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকার চেয়ে বাইরে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে দ্বিগুণ হারে। আর ঢাকার পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলোতে মৃত্যুও বেড়ে গেছে।এ অবস্থায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৯০ জনের মৃত্যু হলো।

শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ২ হাজার ১২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৭১ হাজার ৫০৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯০ হাজার ৪৬১ জন।
এদিকে, চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৮৫ জনের। গত আগস্ট মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ১৬৫ জন। তবে আগস্ট মাসে এ সময়ে রোগীর সংখ্যা এ মাসের চেয়ে সামান্য বেশি ছিল।চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ডেঙ্গু যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অনেক কিছুই প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। সেখানে কার্যকর উদ্যোগ দেখছি না।’এবার মৃত্যুহার এত বেশি হওয়ার কারণ কী-জানতে চাইলে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, এবার ডেঙ্গুর লক্ষণে কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আগে যেমন জ্বরের পাশাপাশি গা ব্যথা, চোখ ব্যথা, রক্তা জমা বা র‌্যাশ-সেগুলো এবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না।

পাতলা পায়খানা, কাশির মতো লক্ষণ এবার যুক্ত হয়েছে। লক্ষণে পরিবর্তন হওয়ায় ডেঙ্গু বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে যে ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকি বেড়ে যায়।এর আগে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর-২৮১ জন। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *