তানজিল হোসেন, গোয়াইনঘাটঃ
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ২০২২ সালের জুন মাসে
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সিলেটবাসী। মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে সিলেটের ১১টি উপজেলাসহ পুরো সিলেট বিভাগ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। সেই সময়ে দিনে এবং রাতে সমান তালে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অজানা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটায় সিলেটবাসী। অবস্থা এতই বেগতিক হয় যে, অনেক মানুষ শেষ পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে অক্ষম হয়ে পড়েন। সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটসহ অধিকাংশ উপজেলায় বন্যার প্রবল স্রোতে হাজার হাজার খড়ের ঘর, আধাপাকা ঘর ও মাটির ঘর বিধ্বস্ত হয়। তখন বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের সালুটিকর করেরগাওঁ গ্রামের অসহায় দিনমজুর আসাদুল মিয়ার বসতঘর বিধ্বস্ত হয়। আসাদুল মিয়া তার স্ত্রী, প্রতিবন্ধী ১ ছেলে সহ ছোট ছোট আরো ৪ সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। তিনি তার সহধর্মিণী এবং সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে রাত্রী যাপন করে আসছিলেন। সে সময়ে সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষের পাশে দেশবাসী দাঁড়ায়। ঠিক সেই সময়ে রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের টিফিনের ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমানের নিকট হস্তান্তর করেন। ইউএনও তাহমিলুর রহমান ঢাকা কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীর টিফিনের ৪০ হাজার টাকার সাথে সরকারি আরো ৪০ হাজার টাকা যোগ করে গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের সালুটিকর করেরগাওঁ গ্রামের অসহায় দিনমজুর আসাদুল মিয়ার বিধ্বস্ত বসতঘর নির্মাণ করে দেন।
এ ব্যাপারে ঘরের মালিক আসাদুল মিয়া বলেন, বন্যায় আমার বসতঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ার পর গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান এবং ঢাকার কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে আমার ঘর নির্মাণ করে দিবেন এমন স্বপ্ন দেখতে পারেনি। আমি গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান ও কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ বিষয়ে কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ, প্রাবন্ধিক ও শিশু সাহিত্যিক মোঃ
মো. রহমত উল্লাহ্ বলেন, ভয়াবহ বন্যায় যখন সিলেটবাসী দুঃখ-কষ্টে নিমজ্জিত ছিলো ঠিক তখন সারাদেশের মানুষের সাথে কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও সহায়তার হাত বাড়ায়। শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলীকে আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ও সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমি সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলাম। প্রতি ক্লাস থেকে নেতা নির্বাচন করে কিছু সংখ্যক অতি উৎসাহী শিক্ষার্থীদের আমি দায়িত্ব দিয়েছিলাম অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সামান্য আর্থিক অনুদান সংগ্রহের জন্য। তারা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে এইরূপ মানবিক কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা জমা করেছে। তখন এমনও লক্ষ্য করা গেছে যে, কেউ কেউ কয়েকদিনের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বন্যার্তদের সহায়তায় জমা দিয়ে দিয়েছে। এ কাজে সক্রিয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমি তখন পরম তৃপ্তি লক্ষ্য করেছি। এতে করে শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলী বৃদ্ধি পেয়েছে, নেতৃত্ব দানের যোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, সবাই মিলে কাজ করার যোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যের জন্য ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। কারো বিপদে এগিয়ে আসার শিক্ষা অর্জিত হয়েছে। ধনী দরিদ্র সবাই এক কাতারে দাঁড়াবার শিক্ষা অর্জিত হয়েছে। অর্থের হিসাব রাখার যোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক সততা বজায় রাখার যোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এমন আরো অনেক গুণাবলী অর্জিত হয়েছে। আশা করি এই শিক্ষা নিয়ে তারা দেশ ও জাতির সেবায় নিবেদিত হবে একদিন এবং তাদের দেখাদেখি এগিয়ে আসবে তাদের উত্তরসূরীরা। আমি সে টাকা সিলেট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট পৌঁছে দিয়েছি। তাতে যে পরিবার উপকৃত হয়েছে কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের পক্ষ থেকে সে পরিবারের জন্য রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আমরা আশা করি সে পরিবার থেকেও যোগ্য শিক্ষার্থী ও কর্মী তৈরি হবে একদিন। যে অন্যের সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, ঢাকার কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের সহযোগিতা ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে অসহায় একটি পরিবার পেলো বসতঘর। এজন্য কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শেয়ার করুন