তিন সমস্যায় নাকাল সিলেট নগরবাসী

সিলেট

কয়েক মিনিটের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অসহনীয় যানজট, উন্নয়নের নামে বছরজুড়ে সড়কে খুঁড়োখুড়ি। এই তিন সমস্যায় সিলেট নগরবাসীকে নাকাল হতে হলেও দুর্ভোগ লাঘবে নেই নগরকর্তাদের মাথাব্যথা। 

উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সমস্যা দূর হওয়ার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে আরও ভোগান্তি। এজন্য সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়নকেই দায়ি করছেন বিশিষ্টজনেরা। আর ভোগান্তি লাঘবে একেক সময় একেক ধরণের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা।

আকাশে মেঘ দেখলেই এখন শিহরে ওঠেন সিলেট নগরবাসী। এই বুঝি নামলো ঝুম বৃষ্টি। আর কয়েক মিনিটের ভারী বর্ষন মানেই তো বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, রাস্তাঘাটে হাঁটু পানি। অথচ ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ছড়া-খাল উদ্ধার ও সংস্কার, ড্রেনেজ নির্মাণসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা। কিন্তু হাজার কোটি টাকা ব্যয়েও জলাবদ্ধতার অভিশাপমুক্ত হতে পারেননি নগরবাসী। উল্টো বৃষ্টি হলেই পানিতে ভাসতে হচ্ছে তাদেরকে। এজন্য জলাবদ্ধতা নিরসনে অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নকে দায়ি করছেন সচেতন মহল।

জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে নগর কর্তৃপক্ষও একেক সময় একেক কথা বলছেন। গত মে ও জুলাই মাসে সিলেট নগরীতে ভয়াবহ বন্যা ও জলাবদ্ধতা দেখা দিলে ওই সময় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এর কারণ হিসেবে সুরমা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়াকে দায়ি করেছিলেন। সুরমা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় নগরীর ছড়া-খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু সুরমা নদীর পানি নামার পরও বৃষ্টি হলে নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বোল পাল্টান মেয়র ও প্রকৌশলীরা। তখন বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের নির্মাণ কাজ ও নির্মাণাধীন ড্রেনে ঠিকাদাররা নির্মাণ সামগ্রী ফেলে রাখাকে দায়ী করেন তারা।

একপর্যায়ে তারা জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে অসময়ে বৃষ্টিপাত ও ছড়া-খালে নাগরিকদের ময়লা আবর্জনা ফেলাকেই চিহ্নিত করেন। এ নিয়ে নগরভবন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক সমালোচনায়ও পড়তে হয়।

এদিকে, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সিলেট নগরীর যানজট। বেশ কয়েক বছর আগেই নগরী থেকে তুলে দেয়া হয়েছে ইজিবাইক।

ব্যাটারিচালিত রিকশাও নগরীর সড়কে নিষিদ্ধ। সড়কের উপর চাপ কমাতে কোর্টপয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা ও বারুতখানা থেকে জল্লারপাড় ব্যস্ততম এসব সড়কে প্যাডেল চালিত রিকশাও তুলে দেয়া হয়েছে। প্রায় ৬ ফুট করে রাস্তাও প্রশস্ত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও কমেনি যানজট। উল্টো দিন দিন অসহনীয় হয়ে ওঠছে যানজট। যানজট বৃদ্ধির জন্যও নগরবাসী অপরিকল্পিত উন্নয়নকে দায়ি করছেন। তাদের মতে, উভয় পাশে সড়ক ৩ ফুট করে প্রশস্ত করা হলেও সড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা কোন লেন তৈরি হয়নি। ফলে সড়কে যানবাহনের চাপ কমছে না। এছাড়া অবৈধ পার্কিং ও হকারদের দৌরাত্ম বন্ধ করতে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হওয়ায় যানজট বেড়েই চলছে।

অপরদিকে, উন্নয়ন কাজের নামে সারাবছর নগরীর রাস্তাঘাটে চলে খুঁড়োখুড়ি। একটি কাজ শুরু হলে সেটি ফেলে রাখা হয় বছরের পর বছর। এতে একদিকে যেমনি যান ও জন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, তেমনি ধুলোবালির কারণে মানুষ নানারকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শুষ্ক মৌসুমে পুরো নগরীর পরিবেশ ধুলোর রাজ্যে পরিণত হয়। এনিয়ে নাগরিক সমাজ বিভিন্ন সময় প্রতিবাদী হলেও নগরভবন কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এছাড়া উন্নয়ন কাজের জন্য নগরভবন কর্তৃপক্ষ নগরীকে অরক্ষিত অবস্থায় রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্মাণাধীন অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে আবদুল বাছিত মোহাম্মদ নামের একজন কবি ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ালেও নগরভবন কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এখনো কোন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে নগরীর রাস্তাঘাট, ড্রেন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। যে কারণে নগরবাসীকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে।

নাগরিক বিড়ম্বনা প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজগুলো একটি পরিকল্পনার অধীনেই হচ্ছে। ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন। যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশন প্রায়ই হকার উচ্ছেদে অভিযান চালায়। বেশিরভাগ রাস্তা ৬ ফুট করে প্রশস্ত করা হয়েছে, একটি পুরনো শহরে এরচেয়ে বেশি প্রশস্ত করা সম্ভব নয়। এতটুকু প্রশস্ত করতে অনেকের দোকানপাট ভাঙতে হয়েছে। ঠিকাদারদের সবসময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে নির্মাণ কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের নিয়মিত তদারকিও রয়েছে। এরপরও মাঝে মধ্যে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায়। যা খুবই দুঃখজনক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *