উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা নদীর পানি। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
রোববার (১৮ জুন) বিকেল ৩টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভাটি এলাকায় বাড়ছে পানির চাপ। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বেড়েছে। ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। রাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ও উজানের ঢলে ধু ধু বালুচর এলাকা এখন পানিতে টইটম্বুর। তিস্তার চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বাদাম, পাট ও মৌসুমি ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
পাউবো ডালিয়া পয়েন্ট সূত্রমতে, শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যার পর কিছুটা কমতে শুরু করলে রোববার ভোর থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে পানি। তবে ডালিয়ার ভাটি এলাকায় ধীরে ধীরে পানি প্রবেশ করছে।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। চর এলাকায় চাষাবাদের জন্য বসবাসরত লোকজন গ্রাম এলাকায় চলে আসছেন। নৌকায় করে চরের ফসল নিয়ে আসছেন উঁচু এলাকায়।
চর সিন্দুর্নার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কয়দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কালকেও (গতকাল) পানি বাড়ছিল। আজ আবারও বাড়তে। আমাদের বাদাম, পাটক্ষেত ডুবে গেছে।’
হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, রাত থেকে তিস্তায় পানি বাড়ছে। কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে বলে শুনেছি। এলাকাগুলোতে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম সারোয়ার বলেন, তিস্তায় পানি বেড়েছে। নিচু এলাকায় পানি ঢুকছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের তাদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে। তবে জরুরি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সজাগ রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তার বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। মহিষখোঁচা এলাকায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
শেয়ার করুন