নগরজুড়ে আরো বেড়েছে খোঁড়াখুঁড়ি

সিলেট

নগরজুড়ে আরো বেড়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। সংস্কার না করেই একের পর এক খোঁড়াখুঁিড়তে পুরো নগরীতে রাস্তায় তৈরী হচ্ছে গর্ত আর এর পাশের্^ হচ্ছে ইট-সুরকির স্তূপ। বছরজুড়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এমন অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ নগরজীবন। তবে সহসা এ থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে খোদ সিসিক। আগামী বর্ষা মওসুম পর্যন্ত চলবে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে জনদুর্ভোগ।

সংস্কার কাজের দোহাই দিয়ে সদ্য কার্পেটিং করা নতুন রাস্তা খুঁড়ে বিধ্বস্ত করে দেয়া হলেও পুনঃসংস্কারের কোন নাম নেই। উন্নয়নের নামে সিসিকের এমন কর্মযজ্ঞ শুধু নগরীর প্রধান প্রধান রাস্তা নয়, ছড়িয়ে পড়ছে পাড়ায় পাড়ায় অলিগলিতে। খোঁড়াখুঁড়ি জনিত কারণে ধূলোয় ধুসর হচ্ছে নগর। ধুলোবালি থেকে বাঁচতে নাকে রুমাল দিয়ে হাঁটাচলা করছেন জনসাধারণ। বিপাকে পড়েছেন স্কুলগামী ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও বয়স্করা। বায়ুদুষণের কারণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন তারা।

শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরবাজারস্থ নগর ভবন সংলগ্ন কুদরত উল্লাহ মসজিদের সামনে থেকে শুরু হওয়া খোঁড়াখুঁড়ির বিস্তৃতি গোটা নগরজুড়ে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই খোঁড়াখুঁড়ি। চলার উপায় নেই সড়কে। অপরিকল্পিত এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পুরো সিলেট শহরে বাড়ছে যানজট। বেড়েছে দুর্ভোগ। প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। একসাথে রাস্তা, কালভার্ট ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে, এর মধ্যে পানির পাইপলাইনের জন্য নতুন করে খোঁড়াখুঁড়িতে সব রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরের উন্নয়নের জন্যই এসব খোঁড়াখুঁড়ি। উন্নয়নের স্বার্থে এ দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে। তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে কাজ হচ্ছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি তারা আমলে নিচ্ছে না।

শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর মিরাবাজার-রায়নগর সড়কে সম্প্রতি নতুন কার্পেটিং করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই নতুন রাস্তাটি খোঁড়াখুঁড়িতে বিধ্বস্ত করে ফেলা হয়েছে। একইভাবে দাদা পীর মাজার থেকে শাহী ঈদগাহগামী সড়কেরও একই অবস্থা। নগরীর ধোপাদিঘীর পাড়স্থ সিটি মসজিদ ও বিনোদিনী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের রাস্তার চিত্র আরো ভয়াবহ। এখানে খোঁড়াখুঁড়িতে কেবল ধুলো উড়ছে। নাইওরপুল থেকে শিশুপার্ক পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা অনেকটা ‘বোরো জমির’ মতো।

এদিকে নগরীর কুদরত উল্লাহ মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে তালতলা হয়ে কাজিরবাজার ব্রিজ মোড় ঘুরে শেখঘাট-লামাবাজারের রাস্তার চিত্রও একই। এখানে মাস খানেক আগে পানির পাইপলাইনের জন্য খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু খোঁড়ার পর ফের মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে সেখান থেকে একদিকে ধুলো উড়ছে। অপরদিকে সৃষ্টি হচ্ছে গর্তের।

নগরীর রিকাবীবাজার থেকে একদিকে ওসমানী মেডিকেল রোড হয়ে কানিশাইল রোড, অপরদিকে বাগবাড়ী হয়ে মদীনা মার্কেটের রোডে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য রাস্তায় চলা দায় হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় দিনের বেলা চলতে গেলে নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হয়।

নগর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরবাজার থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামন হয়ে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত সিসিকের পানি সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি হয়। অপরদিকে কাজিরবাজার, শেখঘাট, নাইওরপুল, মিরাবাজার, শিবগঞ্জ, সুবিদবাজার, পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনের নির্মাণ কাজ। একই সাথে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চলছে ছড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা। সব মিলিয়ে রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা থেকে শুরু করে ইট বালু ও ধুলোবালির স্তুপ। নগরীর সড়ক সম্প্রসারণ, ড্রেন-নালা নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় কয়েক মাস আগে। কিছু এলাকায় কাজ শেষ হলেও সম্প্রতি খোঁড়াখুঁড়ির মাত্রা আরও বেড়েছে। যে হারে দ্রুত খোঁড়াখুঁড়ি হয় সেইভাবে দ্রুত মেরামত না হওয়ায় দুর্ভোগের সময় র্দীঘায়িত হচ্ছে। নগরবাসীর দাবী উন্নয়ন কাজের অজুহাতে একসাথে সব রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি সিসিকের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের বহিপ্রকাশ। অথচ জনদুর্ভোগের বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল সিসিকের।


জানা গেছে, গত জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন পানি সরবরাহের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। একসাথে ড্রেনেজ সম্প্রসারণের কারণে নগরীর আরো বেশ কিছু সড়কে চলে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। এতে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এবং ধুলোবালিতে সড়ক ঢেকে যাওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।

সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ শুরু হয়েছে। ড্রেন পরিস্কারের পর ময়লার স্তুপ রাস্তার পাশে রাখা হলেও দ্রুত সরানোর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছেনা। ফলে এ থেকে দুষিত হচ্ছে বাতাস।

এদিকে বিনা নোটিশে রাস্তা গর্ত করার কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন শহর ও শহরের বাইরে থেকে যানবাহন নিয়ে আসা লোকজন। বিকল্প পথে চলতে গিয়েও লোকজনকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কারণ সবগুলো সড়কের কোথাও না কোথাও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ড্রেন বা গর্ত করে মাটি তুলে রাখা হয়েছে রাস্তায়। এতে করে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা এসব রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা। এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও আটকা পড়তে দেখা গেছে কোনো কোনো স্থানে।

পর্যটনের শহর সিলেটে পর্যটকদের বেড়াতে এসে এমন খোঁড়াখুঁড়ির বিপাকে পড়তে হচ্ছে সহসাই। অপরদিকে মাঝখানে ডিভাইডার দিয়ে পৃথক করা জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের দুই পাশে রাস্তায় বসেছে হকার। এতে করে ফুটপাত দিয়েও চলাচল ব্যাহত হচ্ছে পথচারীর। এমন অবস্থা বন্দরবাজার-তালতলা সড়কে। এখানেও দুই পাশে এখন হকারদের জমজমাট হাট। চলমান খোঁড়াখুঁড়িতে যানবাহন এবং মানুষ চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলেও হকাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।

সিসিকে সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পানির চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮ কোটি লিটার। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি লিটার সরবরাহ করা হয় পানির এসব পাইপলাইন দিয়ে। ৪০-৫০ বছর আগে পানির পাইপলাইন বসানো হয়েছিল। ওই পাইপলাইনগুলো পুরোনো হয়ে গেছে। পুরোনো পাইপলাইনগুলোর বেশ কিছু স্থানে ছিদ্র হয়ে পানি বের হয়। এতে অপচয় হচ্ছে পানির। পাশাপাশি পানিতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ছিদ্র হওয়া পাইপলাইন মেরামত এবং সড়ক সংস্কারে সিটি করপোরেশনের অর্থ খরচ হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দরবাজার এলাকার সিলেট হাসান মার্কেট থেকে শুরু করে কাজির বাজার, সুরমা মোড়, জেল রোড, চৌহাট্টাসহ কিছু এলাকায় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সব পাইপলাইন মেরামত করার কিছু দিনের মধ্যে আবার ছিদ্র তৈরি হয়। এ জন্য ওইসব এলাকার পাইপলাইনগুলো সরিয়ে নতুন করে পানি সরবরাহে প্লাস্টিকের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। এছাড়া নগরীর কিছু স্থানে নতুন করে পাইপলাইন স্থাপন হচ্ছে। এই কাজ আগামী বর্ষা মওসুম পর্যন্ত চলতে থাকবে। তাই সহসা খোঁড়াখুঁড়ি থেকে মুক্তি মিলছেনা নগরবাসীর।

সিসিক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কিছু এলাকায় নতুন পানির পাইপলাইন স্থাপনের জন্য সড়ক কাটা হয়। আবার পাইপলাইন সংযোগ নেওয়ার পর নতুন করে আবার লাইনে ছিদ্র হয়ে পানি অপচয় হচ্ছে। সে সময় সড়কের ওপর পানি জমে থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সিলেটে পানি কিংবা ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইনের জন্য পৃথক জায়গা নেই। তাই রাস্তার উপর দিয়েই এসব লাইন বয়ে গেছে। ফলে কোন সমস্যা হলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিকল্প নেই।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, পুরোনো পানির পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মাঝে মাঝে পানি সড়কে উপচে পড়ে। এতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব পাইপলাইনগুলো মেরামত করলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার সমস্যা দেখা দেয়। তাই নগরজুড়ে নতুন করে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এমনকি পাড়া মহল্লায়ও চলছে নতুন পানির পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। এ কাজ চলবে বর্ষা পর্যন্ত।

তিনি বলেন, খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগ বাড়ে ঠিক আছে। এরপরও একটি সুবিধা পেতে হলে কিছুটা কষ্ট স্বীকার করতে হবে। সিসিকের পাশাপাশি নাগরিকবৃন্দেরও কিছু দায় রয়েছে। আমরা যখন পাইপলাইন স্থাপন কিংবা মেরামত করি তখন পানির লাইন নেয়ার জন্য কাউকে খুঁজে পাইনা। আবার কাজ শেষ হওয়ার পর রাস্তা মেরামত শেষ হলে অনেক নাগরিক পানির লাইন নিতে সিসিকে এসে যোগাযোগ করেন। তখন মানবিক কারণেই আমাদেরকে লাইন দিতে রাস্তা খুঁড়তে হয়। আগে নগরীর ধুলোবালি কমাতে পানি ছিটানো হতো। কিন্তু বর্তমানে আমরা জরুরী ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনমত পানি সরবরাহ করতে পারছিনা। শীঘ্রই আমরা নদীর পানি পাম্পিং করে ছিটানোর একটা উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *