নেহুরুকে ছুঁতে যাচ্ছেন মোদি!

বিশ্ব

লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। আর সবকিছু ঠিক থাকলে টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।  

স্বাধীনতার পর থেকে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছাড়া ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীই টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনে সফল হননি। এই নির্বাচনে নেহরুর রেকর্ড ছোঁয়ার সুযোগ পাচ্ছেন মোদি।

লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, রাত ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত মোট ৫০০টি আসনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৮টিতে জিতেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ৮৮টিতে জিতেছে কংগ্রেস।

৩৬টি আসনে জয় পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি (এসপি), অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস জিতেছে ২৮টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) জিতেছে ১২টি আসন, ডিএমকে পেয়েছে ১৬টি আসন। তেলুগু দেশম ১২টি, শিব সেনা (উদ্ধব ঠাকরে) ৭টি ও শিব সেনা (এসএইচএস) জিতেছে ৭টি আসন।

লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) জিতেছে ৫টি আসনে। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসিস্ট) ৪টি।  তিনটি আসনে জিতেছে আম আদমি পার্টি (আপ), ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা ও যুবজন শ্রমিক রাইথু কংগ্রেস পার্টি।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে এটা নিশ্চিত যে, বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারছে না। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে সরকার গড়তে ২৭২টি আসন প্রয়োজন। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। সে সময় বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২টি  আসনে জয় পায়। কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ জোট পেয়েছিল ৯৪টি আসন।

এদিকে পূর্ণ ফলাফল পাওয়ার আগেই টানা তৃতীয়বারের মতো জয় এনে দেওয়ায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদি। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে তিনি বলেন, ‘মানুষ টানা তৃতীয়বারের মতো এনডিএ’র ওপর আস্থা রেখেছে। ভারতের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

এবার বারানসী থেকে দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী মোদি সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই ভালোবাসার জন্য আমি জনগণকে প্রণাম জানাই। তাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে গত দশকে যে ভালো কাজ করেছি তা অব্যাহত রাখব।’ যদিও বারানসী থেকে এবার মোদির জয়ের ব্যবধান ২০১৯ সালের নির্বাচনের ব্যবধানের তুলনায় অনেক কম।

অপরদিকে লোকসভা নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের অবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এবারের লড়াইটি ছিল (ভারতের) সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। নির্বাচনের ফলাফলে ভারতের জনগণ বলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদি আমরা আপনাকে চাই না। (অমিত) শাহকে চাই না।’

অন্যদিকে মোদির ধরাশায়ী হওয়ার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ’আমি খুশি যে প্রধানমন্ত্রী মোদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিসংখ্যান পাননি। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন, তার অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তিনি বলেছিলেন- এবার তারা ৪০০ আসন অতিক্রম করবে।’

তবে শেষ পর্যন্ত মোদির তৃতীয় মেয়াদ নির্ভর করবে এনডিএ জোটের শরিকদের ওপর। বিশেষ করে তেলেগু দেশমের চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতিশ কুমারের জনতা দল-ইউনাইটেডের (জেডি–ইউ) ওপর ভর করতে হবে বিজেপিকে। এছাড়াও একাধিক এনডিএ শরিকের ওপরে নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে, যা তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।

কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল আসা শুরুর পর নীতীশ-নাইডু ফ্যাক্টরই ঘুরে-ফিরে আসছে। কারণ নীতিশ ও নাইডুর অবস্থানের ভিত্তিতে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একইসঙ্গে আরও বেশ কিছু দল রয়েছে, যাদের কেউ দুই বা এক আসনে সারা ভারতে এগিয়ে। এদেরও সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে ভবিষ্যতের বিজেপিকে। আর এ বিষয়টি মাথায় রেখে নীতিশ এবং নাইডুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কংগ্রেস। ফলে যে কোনো মুহূর্তে বদলাতে পারে নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ।

১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট একাধিক শরিক নিয়ে পাঁচ বছর সরকার চালিয়েছিল। কিন্তু এখনকার বিজেপি তা নয়। মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি এককভাবে জিততেই অভ্যস্ত। শরিকদের ওপর নির্ভর করে এবং তাদের ভরসায় রাজ্য বা কেন্দ্র কোথাও সরকার চালাননি মোদি। তাই এই নতুন সমীকরণের সঙ্গে তিনি কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন, কীভাবে ওঠাবসা করছেন তার ওপরই নির্ভর করবে সরকারের বাঁচা–মরা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *