
টইটুম্বুর টাঙ্গুয়া। মেঘালয়ের ঢলে নেমে আসা পানিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আছে অপরূপ সৌন্দর্যে্যর এই জলরাশি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে হিজল ও করচ গাছ। দূরের পাহাড় যেন জলরাশিতে এসে মিলে গেছে। মেঘালয়ের ঢলের পানি নামার অপরূপ দৃশ্য মন জুড়িয়ে যাবার মত। হাওরের ঢেউ, পাখির ডাক সব মিলিয়ে বর্ষায় ভিন্নরূপের টাঙ্গুয়া দেখতে ঈদের ছুটিতে আসছেন হাজারো পর্যটক। লম্বা ছুটি শুরু হবার আগেই শত শত ভ্রমণ পিপাসু বুকিং করে রেখেছেন পর্যটকবাহী নৌযান।
খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের বিলাসবহুল ৯০ টি বোটসহ দেশীয় বোট বা কান্ট্রি বোট গুলোও ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। বোটের পরিচালনায় থাকা সকলেই ব্যস্ত পর্যটক বরণে।
এই মৌসুমে অপেক্ষাকৃত স্বাচ্ছন্দ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণ করা সম্ভব। এজন্য কোরবানির ঈদের এই ছুটিতে অনেক ভিড় হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জলরাশিতে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে এসে, সাহেববাড়ী ঘাট, বৈঠাখালী ঘাট ও ওয়েজখালী ঘাট থেকেই অনেকে বোটে সুরমা নদীর দুইপাড় ও করচার হাওরসহ পথের ছোট বড় হাওরের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে পেঁৗছে যাবেন টাঙ্গুয়ায়। আবার কেউ কেউ সুনামগঞ্জ জেলা শহরের পাশের আব্দুজ জহুর সেতু পাড় হয়ে তাহিরপুরের আনোয়ারপুর ব্রীজের পাশের ঘাট থেকে বা তাহিরপুর থানার সামনের ঘাট থেকে টাঙ্গুয়ার উদ্দেশ্যে বোটে ওঠবেন। বিলাসবহুল বোটগুলো এখন হাওর ভ্রমণকে আরামদায়ক করে দিয়েছে।
হাউসবোট ও দেশীয় বোট কতৃর্পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় দশদিনের ছুটি, এসময় বিপুল সংখ্যক পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওরের আসবেন, এমন চিন্তা থেকে বোটগুলো নতুন রং, নতুন পর্দা, নয়া বিছানাচাদরসহ নানা কাজ করে রীতিমত উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেছে। তাদের (নৌ—মালিকদের) আশাও এবার পূর্ণতা পেয়েছে। নয় জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত এই ছয়দিন প্রায় সকল বোটই অগ্রিম ভাড়া হয়ে আছে।
জানা গেছে, বিলাসবহুল হাউসবোটের দুই দিনের প্যাকেজ এবার বিক্রয় হয়েছে জনপ্রতি চার থেকে ১২ হাজার টাকায়। দুইদিনের প্যাকেজে পাঁচ বেলা ভাত, চার—পাঁচ বার নাস্তা, চা—কফি, পানি থাকছে ফ্রি। এছাড়া নিলাদ্রী, শিমুল বাগান, বারেকের টিলা, যাদুকাটা, টাঙ্গুয়া ওয়াচ টাওয়ার, লাকমাছড়া দেখানো এই প্যাকেজের মধ্যেই থাকছে।
খাবারের মেন্যুতে ভাতের সঙ্গে হাওরের মাছ, হাঁসের মাংস, কুয়েল পাখির মাংস, খাসির মাংস, ভর্তা, বাজি ও সবজী রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাউসবোট সংশ্লিষ্টরা।
একটি হাউসবোটে ১৫ থেকে ২৫ জন আয়েশ করে থাকতে পারেন। পারিবারিক ক্যাবিনসহ এটাস্ট বাথরুমও আছে কোন কোন হাউসবোটে। এয়ারকন্ডিশনের ব্যবস্থাসহ নোট জনপ্রতি প্রতি নয় থেকে ১২ হাজার টাকার প্যাকেজও আছে।
সুনামগঞ্জ হাউসবোট ওউনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ বললেন, আমাদের ৯০ টি হাউসবোটের প্রায় সবকয়টির বুকিং শেষ। এবার সকল বোটেরই অন্যান্য প্রস্তুতির পাশপাশি অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, পর্যটকদের জন্য লাইফ জাকেট ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা সন্তোষজনক করেই বোট ঘুরবে টাঙ্গুয়ার হাওরে। সমিতির পক্ষ থেকে কঠোর মনিটরিং থাকছে। পরিবেশ দোষণের বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
দেশী বোটে ১৫ থেকে ২০ জন পর্যটক ভালোভাবে রাত্রী কাটাতে পারবেন। এসব বোট খাওয়া ও রাত্রীযাপনসহ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দুইদিনের বুকিং নিচ্ছে। তারাও নিলাদ্রী, শিমুলবাগান, বারেকের টিলা, যাদুকাটা, ওয়াচ টাওয়ার, লাকমাছড়া এই খরচের মধ্যেই ঘুরিয়ে দেখাবে।
তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বললেন, ঈদের ছুটিতে টাঙ্গুয়ায় পর্যটকের ভিড় হবে চিন্তা করেই পুলিশকে আলাদাভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নৌ—পুলিশ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশও কাজ করবে হাওরে। তাহিরপুরের আনোয়াপুর ঘাট ও থানা ঘাটে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। টহলেও থাকবে পুলিশ। ঘাটগুলোতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের মোবাইল নম্বরগুলো টাঙিয়ে দেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম বললেন, টাঙ্গুয়ায় ভ্রমণ নীতিমালা মেনে সকল বোটকে নিয়ে ঢুকতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, ভরা বর্ষা মৌসুম এখন। তবে টাঙ্গুয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের যেতে কোন সমস্যা এখনো হয় নি। তবে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে বা হাওরে বিপদ হতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে পর্যটকবাহী বোট যেতে নিরুসাহিত করা হবে।