পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ ভাঙচুরের শব্দ শুনি, তখনো স্যার বলছিলেন পরীক্ষায় মনোনিবেশ করতে। কিন্তু হঠাৎ ভাঙচুরের তীব্রতা বেড়ে যায় তখন স্যার বলছিলেন তোমাদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে এবং তোমরা দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যাও।
এভাবেই পরীক্ষা হলের পরিবেশের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে আসা কবি নজরুল কলেজের পরীক্ষার্থী মুফতি।
আজ রবিবার (২৪ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রথম বর্ষের ফাইনাল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পরীক্ষা যথাসময়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হয়। পরীক্ষা শুরুর খানেক পরেই হঠাৎ অতর্কিত হামলা চালায় ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ ৩৫ কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউটে ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীর ভুল চিকিৎসা ও অভিযোগে মৃত্যুর ঘটনায় মানববন্ধন করে।
মানববন্ধনকারীদের অভিযোগ, সেসময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের ড্রেস পরিহিত কিছু শিক্ষার্থী মানববন্ধনকারীদের উপর হামলা চালায়।
এ ঘটনার জেরে রবিবার (২৪ নভেম্বর) হঠাৎ একদল শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রধান ফটক অতিক্রম করে ঢুকে পড়ে মূল ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাসে প্রাঙ্গণে থাকা কলেজের মাইক্রোবাস, একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রাইভেট কার, দুইটি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে। এসময় ক্যাম্পাসের ডিজিটাল নোটিশ বোর্ডটিও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা।
নিচতলা থেকে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও অফিসরুমে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে শিক্ষার্থীরা। একই ভবনে অবস্থিত ইসলামিক স্টাডিজ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগেও ভাঙচুর করেন তারা। বাদ যায়নি পরীক্ষার হলে থাকা বেঞ্চগুলো ও উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ও। তৃতীয় তলায় অবস্থিত প্রাণিবিদ্যা বিভাগের গবেষণাগারে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এসময় গবেষণাগারে থাকা কঙ্কালটিকেও লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কলেজের এবং বিভাগের কোন কিছু বাদ রাখেনি শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার খাতার বান্ডিলগুলোও লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। এমনকি বিভাগে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্ক্যানারও ভাঙচুর থেকে বাদ যায়নি।
এসময় শিক্ষা মিলনায়তনের সামনে আটকা পড়েন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, পুলিশকে ফোন করেছি, সেনাবাহিনীকে ফোন করেছি, কেউই এগিয়ে আসেনি।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখনও আটকে আছি বাহিরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে যেটুকু অনুমান করছি কলেজের বেশিরভাগ কম্পিউটারগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো কলেজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তারা যদি শিক্ষার্থীই হয়ে থাকে তবে কোন আর্দশে তারা আরেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে এমন ধ্বংসস্তূপে পরিণত করলো এ নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।
আজ প্রথমে ডা. মাহবুবর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেলের প্রধান ফটক আটকে ভাঙচুর করেন পরবর্তীতে তারা কবি নজরুল সরকারি কলেজে প্রবেশ করে ভাঙচুর করেন।
শেয়ার করুন