পেজার কী? হিজবুল্লাহ কেন এই পুরোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে

বিশ্ব

মধ্যপ্রাচ্যের শক্তি দেখানোর লড়াইয়ে এবার নতুন মোড়।  অস্ত্র, রকেট বা ক্ষেপণাস্ত্র নয়।  এবার ইসরাইল প্রতিপক্ষ হিজবুল্লাহকে ঘায়েল করতে বেছে নিয়েছে খুব কম আলোচিত বিষয়। বলা হচ্ছে হিজবুল্লার অভ্যন্তরীণ বিশেষ যোগাযোগ যন্ত্র পেজারের কথা।

তাইওয়ান থেকে আমদানি করে এই বিশেষ যন্ত্রে বিস্ফোরক লুকিয়ে রেখেছিল ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় এসব যন্ত্র বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম হয় ইসরাইল। যে পেজারগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেগুলো হিজবুল্লাহর বিভিন্ন ইউনিট ও ইনস্টিটিউশনের কর্মীরা ব্যবহার করত।

স্বাভাবিকভাবে আলোচনায় এখন, কী এই পেজার? এটা কীভাবে কাজ করে।

পেজার কী?

এটি একটি ছোট এবং বহনযোগ্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস।  সাধারণত এটি মূলত সংক্ষিপ্ত বার্তা বা সতর্কতা পাঠাতে ব্যবহৃত হয়।  বেশিরভাগ পেজার বেস স্টেশন থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ বা বার্তা পাঠায় ও গ্রহণ করে। এই বার্তা কোনো সংখ্যা হতে পারে, আবার কোনো শব্দও হতে পারে।  এই ডিভাইসটির ছোট স্ক্রিনে সেই বার্তা দেখা যায়।  যখন পেজারে কোনো বার্তা আসে, তখন এতে (বিপ) শব্দ হয়, ঠিক যেমন মোবাইলে মেসেজ আসলে নির্দিষ্ট টিউন বাজে।  অনেক দেশে বিপার নামেও পরিচিত পেজার।

১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে বহুল ব্যবহার হত পেজারের।  পেশাদার লোকজন অফিসের বাইরেও একে অপরকে দ্রুত কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য পেজার ব্যবহার করতেন।  জরুরি সেবা হিসেবে চিকিৎসক এবং  নার্সদের কাছে এটি একটি জরুরি ডিভাইস ছিল।

পেজারে মোবাইল নেটওয়ার্কের দরকার পড়ে না।  তাই এখানে আঁড়িপাতার সুযোগ কম।  তাই এটি যোগাযোগের একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসাবে বিবেচিত হয়।

পেজারের ব্যবহার কমে গেল কেন?

পেজারগ ডেডিকেটেড রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে।  পেজারের পরিসীমা সীমিত পরিসরে।  তাছাড়া এটি নির্ভর করে ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এবং পেজিং নেটওয়ার্কের কভারেজ এরিয়ার উপর।  মোবাইল ফোনের আধুনিকায়নের পর থেকেই পেজারের ব্যবহার কমতে থাকে। আজকাল আর কেউ পেজার ব্যবহার করে না।  স্মার্টফোনে ফোনকল, মেসেজ  থেকে ইন্টারনেটের যাবতীয় সুবিধা পাওয়া যায়।

কোথায় এখনও ব্যবহার হয় পেজার?

অনেকাংশেই পেজার ব্যবহার কমে গেলেও, এখনও কিছু ক্ষেত্রে পেজার ব্যবহার করা হয়। আমেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশে স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবা খাতে পেজার এখনও ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি এবং নেটওয়ার্ক ছাড়াই কাজ করার ক্ষমতার জন্য এগুলো নির্ভরযোগ্য৷ এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে হিজবুল্লাহর সদস্যরাও পেজার ব্যবহার করে।

গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই লেবানন-ইসরাইল সীমান্তে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলি বাহিনী পরস্পরের বিরুদ্ধে গোলাগুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এতে ওই অঞ্চলজুড়ে বড় ধরনের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।  এই উত্তেজনা সর্বশেষ ঘটনা এই পেজার বিস্ফোরণ।

মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, তাইওয়ান থেকে পেজার আমদানি করেছিল হিজবুল্লাহ। আর কয়েক মাস আগে ওই যন্ত্রগুলোতে বিস্ফোরক উপাদান লুকিয়ে রেখেছিল ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত ও ৩ হাজার মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ছাড়াও আছেন লেবাননে নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *