বিশ্বজুড়ে প্রতি ৮ জন শিশুর একজন ১৮ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা বা নিপীড়নের শিকার হয়। ১১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষ্যে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু অধিকার ও নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
যৌন নিপীড়নের শিকার মেয়েশিশুদের সবাই যে শুধু শারীরিকভাবেই নিপীড়নের শিকার হয়, এমন নয়। কত কয়েক বছর ধরে অনলাইনেও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে লাখ লাখ শিশু এবং এই পরিসংখ্যান শারীরিকভাবে নিপীড়নের শিকারদের তুলনায় আরও ভয়াবহ।
ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অনলাইনে হয়রানি ও নিপীড়নের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাওয়া মেয়েশিশুদের সংখ্যা আনুমানিক ৬৫ কোটি এবং এই মুহূর্তে বিশ্বে ১৮ বছরের কম বয়সি যত মেয়েশিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রতি ৫ জনে একজন অনলাইনে হেনস্তা, হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার। রাজনৈতিক ও যুদ্ধ-সংঘাতকবলিত দেশ ও অঞ্চলগুলোতে মেয়েশিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতার চিত্র আরও ভয়াবহ। এসব অঞ্চলগুলোতে প্রতি ৪ জন শিশুর একজন যৌন সহিংসতা বা নিপীড়নের শিকার।
ইউনিসেফের তথ্যানুযায়ী, মেয়েশিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতা/নিপীড়নের হার সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে বসবাসকারী মেয়েশিশুদের মধ্যে ৭ কোটি ৯০ লাখ জন জীবনে এক বা একাধিকবার এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে। এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া (৭ কোটি ৫০ লাখ), কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ এশিয়া (৭ কোটি ৩০ লাখ), ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা (৬ কোটি ৮০ লাখ) এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান (৪ কোটি ৫০ লাখ)।
যৌন সহিংসতা বা নিপীড়নের শিকার মেয়েশিশুদের অধিকাংশের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে এবং এই শিশুদের প্রায় সবাই তাদের জীবনে একাধিকবার এ ধরনের সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়। মেয়েশিশুদের পাশাপাশি যৌন সহিংসতা/নিপীড়নের শিকার ছেলেশিশুদের সংখ্যাও কম নয়।
ইউনিসেফের প্রতিবেদন বলছে যে, তাদের হিসেব অনুযায়ী আঠারো বছরে পৌঁছানোর আগে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন- এমন পুরুষের সংখ্যা এই মুহূর্তে অন্তত ৫৩ কোটি।
এক বার্তায় ইউনিসেফের শীর্ষ নির্বাহী ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘শিশুদের লক্ষ্য করে যৌন সহিংসতা এবং তার ক্রমবৃদ্ধি আমাদের বিবেক, আদর্শগত অবস্থানে মরিচা ধরার একটি বড় উদাহরণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন লোকজনের মাধ্যমে তারা যৌন সহিংসতা বা নিপীড়নের শিকার হয়- এ ধরনের অভিজ্ঞতা শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় ট্রমা, যা কাটতে দীর্ঘদিন লাগে। অনেকে পরিণত বয়সেও এই ট্রমা থেকে মুক্তি পায় না।’
শেয়ার করুন