ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

খেলাধুলা

দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় শত্রু—’সেমি ফাইনাল’? লাইনের শেষটায় বোধহয় প্রশ্নবোধক চিহ্ন না দিলেও হয়! পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিতে খেলেও ফাইনালের টিকিট কাটতে পারেনি প্রোটিয়ারা। এবারের আসরে শুরু থেকেই দাপুটে ক্রিকেট খেলেছে, কিন্তু সেই সেমিতে এসে আরো একবার থামতে হলো বাভুমার দলকে। চোকার্সদের ৩ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের সঙ্গী হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১২ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০১ রান করেছেন মিলার। তাছাড়া ৪৭ রান এসেছে হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। অজিদের হয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেছেন প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক।

জবাবে খেলতে নেমে ৪৭ ওভার ২ বলে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। তাদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান এসেছে ট্রাভিস হেডের ব্যাট থেকে। তাছাড়া ৩০ রান করেছেন স্মিথ। প্রোটিয়াদের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন জেরাল্ড কোয়েটজে ও তাবরাইজ শামসি।

২১৩ রান তাড়া করতে নেমে খুব বেশি তাড়াহুড়োর প্রয়োজন ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। এমনকি দ্রুত রান তোলার চাপও ছিল না পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। তবুও ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রাভিস হেড মিলে কাগিসো রাবাদা এবং মার্কো জানসেনের বিপক্ষে রান তুললেন প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত। তাতে মাত্র ৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়া রান তোলে বিনা উইকেটে ৬০।

পেসাররা প্রত্যাশা মেটাতে না পারলেও ইনিংসের সপ্তম ওভারেই স্পিনারের দ্বারস্থ হন টেম্বা বাভুমা। বোলিংয়ে এসে উইকেট এনে দেন মার্করাম। একটু জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ওয়ার্নার। দারুণ ছন্দে থাকা বাঁহাতি এই ওপেনার আউট হয়েছেন ১৮ বলে ২৯ রানের ইনিংস খেলে। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করলেও এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি মিচেল মার্শ।

দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরও অস্ট্রেলিয়াকে চাপে পড়তে দেননি হেড ও স্মিথ। ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন হেড। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা হেডকে ফিরিয়েছেন মহারাজ। বাঁহাতি এই ওপেনার ফিরে যান ৬২ রানের ইনিংস খেলে।

মার্নাস ল্যাবুশেনকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শামসি। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি ১৮ রান করা এই ব্যাটারের। দ্রুতই ফিরে গেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শামসির শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বলের লাইন মিস করে ফিরে গেছেন বোল্ড হয়ে।

নিজের সবশেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল এদিন আউট হয়েছেন ১ রানে। সবশেষ ৬৭ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরে সাউথ আফ্রিকা। তবে তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্মিথ ও জশ ইংলিস জুটি। তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭ রান। স্মিথকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জেরাল্ড কোয়েতজে। লম্বা সময় টিকে থাকা স্মিথকে ফিরতে হয় ৬২ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে।

স্মিথ ফেরার পর স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ইংলিস। তখনও হাতে পর্যাপ্ত বল থাকায় চাপ নেয়ার তেমন প্রয়োজন ছিল না তার। অস্ট্রেলিয়া যখন জয় থেকে ২০ রান দূরে তখন সাজঘরে ফেরেন ইংলিস। কোয়েতজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ৪৯ বলে ২৮ রান করা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ব্যাটার। তবে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করেন কামিন্স ও স্টার্ক।

এর আগে ইডেন গার্ডেন্সের উইকেট আজ তার নিজস্ব রূপ বদলে মৃত্যু ফাঁদ হয়ে যেন অপেক্ষা করছিল প্রোটিয়াদের জন্য। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েন কুইন্টন ডি কক-টেম্বা বাভুমারা। নতুন বলে বাড়তি বাউন্স আর সুইংয়ে রীতিমতো চোখে সর্ষে ফুল দেখেছেন তারা।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাভুমাকে ফিরিয়েছেন স্টার্ক। এই প্রিমিয়াম পেসারকে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েছেন কিউই অধিনায়ক। ৪ বল খেলে ডাক খেয়েছেন তিনি।

সুবিধা করতে পারেননি আরেক ওপেনার ডিক ককও। আসর জুড়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা এই ওপেনার সেরা রান সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন দুই নম্বরে। তবে আজ ফিরেছেন মাত্র ৩ রান করে।

এর পর রাসি ফন ডার ডুসেন ও এইডেন মার্করাম চেষ্টা করেছেন দলকে টেনে তোলার। তবে ব্যর্থ হয়েছেন তারাও। ডুসেন ৩১ বলে করেছেন ৬ রান। আর মার্করাম ২০ বলে করেছেন ১০ রান। প্রথম ৪ উইকেট সমান ভাবে ভাগাভাগি করেছেন স্টার্ক ও হ্যাজলউড।

২৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রোটিয়াদের খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। এই দুই মিডল অর্ডার ব্যাটার যখন জুটি গড়ার চেষ্টা করছিলেন তখন কলকাতায় হানা দেয় বৃষ্টি। ১৪তম ওভার শেষে খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা। এরপর মিনিট ত্রিশেক বিরতির পর আবার শুরু হয় খেলা।

উইকেটে এসে ইনিংস গড়ার কাজে মন দেন মিলার-ক্লাসেন। দুজনের ব্যাটে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ায় দল। ৩১তম ওভারে ক্লাসেন বিদায় নিলে ভাঙে ৯৫ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। হেডের বলে বোল্ড হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৭ বলে ৪৮ রান। এর পরের বলেই ফিরেছেন মার্কো জানসেনও। এই অলরাউন্ডার লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন।

দুই বলে দুই উইকেট হারানোর পর জেরাল্ড কোয়েটজেকে সঙ্গে নিয়ে আবারও ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন ডেভিড মিলার। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোয়েটজে। ৩৯ বলে ১৯ রান করেছেন তিনি।

এক পাশে ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল চললেও অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মিলার। ১১৪ বলে তিন অঙ্কে পৌঁছেছেন তিনি। অবশ্য সেঞ্চুরি তুলে আর বেশি দূর যেতে পারেননি। ১১৬ বলে ১০১ রান করে ফিরেছেন তিনি।

শেষদিকে কেশব মহারাজ-কাগিসো রাবাদারা দ্রুত ফিরলে নির্ধারিত ৫০ ওভারের আগেই অলআউট হয় প্রোটিয়ারা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *