জামিন পেয়েছেন ভারতে গ্রেফতার হওয়া সিলেট আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতা।আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ভারতের মেঘালয় রাজ্যের জুওয়াই ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের জামিন মঞ্জুর হয়।
এর আগে মঙ্গলবার মেঘালয়ের আদালতে তাদের জামিন শুনানির কথা থাকলেও শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। আজ বুধবার সে দেশের আদালতে তাদের হাজির করে জামিন আবেদন হয়।শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
যোগাযোগ করা হলে ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় এ তথ্য নিশ্চিত করে শ্যামল সিলেটকে বলেন, চার আওয়ামী লীগ নেতার জামিন মঞ্জুর হয়েছে। তবে জামিন প্রক্রিয়ার দাপ্তরিক কার্যক্রম চলমান থাকায় তারা এখনো মুক্তি পাননি। অবশ্য ইতিমধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এই নেতা জানান, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের চার নেতাকে যে ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, থানায় রেকর্ড হওয়া মামলার এজাহারে তাদের কারও নাম নেই। তাদের সন্ধিগ্ধ হিসেবে গ্রেফতার করা হয়।
যদিও গত দু’দিন ধরে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণ, গাড়ি ভাঙচুর, লুট ও অবৈধ অনুপ্রবেশের’ মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ভারতে আমরা বৈধভাবে অবস্থান করছি জানিয়ে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। যে কারণে স্থানীয় পুলিশও বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে। আমরা আশাবাদী ন্যায় পাবো এবং গ্রেফতারকৃত নেতারাও মুক্তি পাবেন।
এদিকে, মেঘালয়ের ডাউকি পুলিশ স্টেশনে দায়েরকৃত মামলার এজাহার শ্যামল সিলেট’র কাছে রক্ষিত আছে।
অভিযোগের কপি খতিয়ে দেখা যায়, ওয়েস্ট জৈন্তা হিলস ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ইউ হেনরি মানার গত ১৬ অক্টোবর গাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামির করা হয়নি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ অক্টোবর বেলা দেড়টার দিকে বাদির দু’টি ট্রাক (এম এল০৪-এ ৫২১২ এবং এমএল০৪ বি ৪১০৯) ভাঙচুর, লুটপাট ও চালককে মারধরের অভিযোগ আনা হয়। এতে অজ্ঞাত বাংলাদেশী নাগরিকও জড়িত থাকার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
ডাউকি থানা পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) অধীন ১১৮(১) মিথ্যা বিবৃতি/মিথ্যা নথি ব্যবহার), ৩০৯ (৪) ও ৩১০ (২) (ডাকাতি, ছিনতাই), ৩২৪ (৪) (বিপজ্জনক অস্ত্র দ্বারা আঘাত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্ট ধারায় এ মামলাটি (কেস নম্বর ১৯(১০)/২৪) রেকর্ড করে।
এই মামলায় সিলেট আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের চার নেতাকে গ্রেফতার করে ডাউকি পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ইলিয়াছ আহমদ জুয়েল, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ রিপনকে শনিবার গভীর রাতে কলকাতা শহরের হাতিয়াড়া এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে মেঘালয় পুলিশ।
গ্রেফতারের পর দিন রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বারাসাত কলকাতা জেলা দায়রা আদালতের বিশেষ ক্রিমিনাল আদালতে তাদের হাজির করা হয়। কিন্তু বিচারক উপস্থিত না থাকায় ভারতীয় আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিলংয়ের স্থানীয় আদালতে অপরাধীদের হাজির করা হবে এমন আশ্বাসে ট্রানজিট রিমান্ড না নিয়েই তাদের মেঘালয়ের জুওয়াই থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় পুলিশ।
সোমবার রাত ১১টার দিকে তাদেরকে ডাউকির জুওয়াই থানায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার সেখানকার আদালতে তাদের হাজির করা হয়। এ সময় আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের জামিনের আবেদন জানানো হলে আদালতে শুনানি হয়নি। আজ বুধবার আদালতে তাদের জামিন শুনানির দিন ধার্য্য ছিল এবং শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক।
শেয়ার করুন