ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। আজ পবিত্র শবে বরাত। সেই মুক্তির রাত বা ‘লাইলাতুল বরাত’।
হিজরি সনের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তাআলা।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।
পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে অনেকের বাড়িতে হালুয়ারুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করা হয় এবং তা আত্মীয়স্বজন, প্রতবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান এবং আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
আজ যেহেতু শুক্রবার তাই এই দিনটিতে এমনিতেই সিলেটের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নিজেদের কবরবাসী মা-বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। উপরন্ত এ দিন দিবাগত রাতে শবে বরাত হওয়াতে হযরত মানিক পীর রহ. এর সিটি গোরস্তানসহ অন্যান্য গোরস্তানে জিয়ারতকারীদের উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হতে পারে।
এদিকে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে সিলেট নগরীর হযরত শাহজালাল ও শাহপরাণ রহ. এর মাজার মসজিদ, সিলেটের প্রথম মুসলমান হযরত বুরহান উদ্দিন রহ. এর মাজার মসজিদ, হযরত শাহ সুন্দর রহ. এর মাজার মসজিদ, বন্দরবাজারস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদসহ পাড়া-মহল্লার মসজিদে মুসল্লিরা ইবাদতের জন্য সমবেত হবেন। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা জিকির-আজকার, নফল নামাজ, তেলাওয়াতে কাটাবেন।
পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবে বরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
এ রাতে যারা ক্ষমার অযোগ্য যারা
(১) মুশরিক, (২) যাদুঘর (৩) গণক (৪) হিংসুক (৫) হত্যাকারী (৬) গায়ক (৭) বাদক (৮) ভাগ্য ও ভবিষ্যত বর্ণনাকারী (গণক) (৯) আত্মীয়দের সাথে ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্নকারী (১০) পরস্পর শত্রুতার ভাবপোষণকারী (১১) জালিম শাষক ও তাদের সহযোগী (১২) মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রেতা (১৩) পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধানকারী (১৪) মদ পানকারী। (১৫) পরস্ত্রীগামী (১৬) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান (১৭) কৃপণ ব্যক্তি (১৮) পরোক্ষ নিন্দাকারী (১৯) অন্যায়ভাবে শুল্ক আদায়কারী (২০) দাবা পাশার খেলোয়ার।
শবে বরাতের রাতে আমাদের করণীয়
আমাদের সমাজে এমন অনেক মূর্খ লোক পাওয়া যায়, যারা এই রাতে দলবেঁধে পায়ে হেঁটে, গাড়িতে চড়ে জোড়েশোরে, হৈহুল্লোড় করে ‘আল্লাহর নাম অর্থাৎ যিকির করে রাস্তাঘাটে, মসজিদ-মাজারে ঘুরেবেড়ায় হাসিখুশী করে।
তাদের কাছে বিনীত অনুরোধ যে, আল্লাহর ইবাদত একাগ্রতার সাথে খালিছ দিলে হওয়া উচিত। দলবেঁধে মিছিল সহকারে আল্লাহর ইবাদত হয়না বরং ইবাদতকে নিয়ে মজাক করা হয়ে যায়, যা গুনাহ ছাড়া কিছুই নয়।
সুতরাং মনে রাখা উচিত আল্লাাহ তাআলা ‘সামিউন বাসির’ তথা তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
এছাড়া ওইরাতে মাজার যিয়ারত করা কোন গুনাহের কাজ নয়। কিন্তু মাযার যিয়ারতের নিয়মকানুন বজায় রেখে করা উচিত। মাজারে মোমবাতি, আগরবাতি, জ্বালানো গুনাহর কাজ। এ থেকে আমাদের বিরত থাকা চাই। অন্যকে বিরত রাখার চেষ্ঠা করবো।
পরিশেষে, আমি মহান আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেনো সারা জাহানের মুসলমানদেরকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ‘শবে বরাত’ আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দেয়ার তৌফিক দান করেন। আমিন।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘আর কিছুদিন পরেই আসছে পবিত্র রমজান মাস। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস তাঁর বাণীতে পবিত্র শবে বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’