মাঠে মুগ্ধতা ছড়ানো কীর্তিমান মেসির জন্মদিন

খেলাধুলা

মেসির খেলা দেখাটাকে অনেক ফুটবল গ্রেটরা চোখের প্রশান্তির বলে তুলনা করেছেন। শৈল্পিক ফুটবলে এমন দৈহিক গড়নের কারণে এই মোহনীয় মহাতারকার নাম হয়েছিল খুদে জাদুকর। ফুটবলের সেই মহাতারকাই সর্বশেষ কাতার বিশ্বকাপে ফুটবল দুনিয়ারে তাক লাগিয়ে ব্যক্তিগত অর্জনের সকল অপূর্ণতা গুছিয়ে দিয়েছেন। একজীবনে লিখে রাখলেন ফুটবলের সফল মহাকাব্য।

গল্পের শুরুটা সেই রোজারিওতেই আটকে যেতে পারত। কিন্তু ওই যে শুরু হলো সেটা আর থামেনি। রোজারিও থেকে বার্সেলোনা ঘুরে পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন পায়ের জাদুতে। ফুটবল ক্যারিয়ারে হাতে স্বপ্ন ছোঁয়ার দূরত্ব থেকে বিশ্বকাপটা ফস্কে গেছে বহুবার। না পাওয়ার সেই দীর্ঘ আক্ষেপরে গুছিয়ে মেসি ফিরে আসছেন ফুটবল দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে। বারবার হৃদয় ভাঙা হতাশারে পেছনে ফেলে লাতিন আমেরিকা থেকে শুরু করে জয় করলেন বিশ্বটারে। একজীবনে বাদ যায় নাই কিছুই। সোনায় মোড়া শিরোপাটারে নিজের করে হয়েছেন গ্রেটেস্ট অব দ্যা অল টাইম।

বার্সেলোর সোনালি অধ্যায়ে লিও মেসি

ফুটবলের চেনা আসর ও সময়টা ক্রমেই ফুরিয়ে এলেও ফুটবল থেকে আর নতুন করে কিছুই পাওয়ার নেই অদম্য মেসির। যার বাঁ পায়ের জাদুতে মুগ্ধতার পাঠ দিয়েছেন কোটি ভক্তরে। মাঠের শৈল্পিক ছন্দে ছন্দে মাতিয়ে রাখলেন পুরো বিশ্বটারে। ফুটবল দুনিয়ায় সেরার জায়গাটা দখল করে রেখেছেন শ্রেষ্ঠত্বে, রাজত্বে, গৌরবে আর অর্জনে। বলা যায়- মাঠের পরিসংখ্যানে। সেই দুনিয়া দেখা ‘দ্য চ্যাম্পিয়ন ম্যাজিশিয়ান’ লিও মেসির জন্মদিনে এক আসমান শুভেচ্ছা।

বিশ্ব জয়ের পর তেইশ সালের ফিফা বর্ষসেরা হলেন ফুটবলে চমক দেয়া লিওনেল মেসি। গেলবার ফুটবলের দৌরাত্ম্যে সমান তালে টিকে থাকা কিলিয়ান এমবাপে ও আর্লিং হালান্ড কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে ইতিহাসে অষ্টমবারের মতো জিতলেন ফিফা দ্যা বেস্ট অ্যাওয়ার্ড। ফুটবলের মাঠে দিনের পর দিন সময় গড়িয়ে নিজের কীর্তির জানান দেন মাঠে মুগ্ধতা ছড়ানো কীর্তিমান মেসি।

গেল বছরেই অষ্টমবারের মতো মেসির হাতেই উঠলো রেকর্ড ব্যালন ডি-অর। ফুটবল দুনিয়ার স্মরণীয় ইতিহাস লেখা হলো যার পায়ের ছোঁয়ায়। হলেন ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার। আর্জেন্টিনার হয়ে পরলেন বিশ্বজয়ের মুকুট। এই ফুটবল বিশ্বরে দেখালেন সেরার প্রশ্নে নিজের কীর্তি আর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের সোনালী অধ্যায়। যেন দুনিয়ার ফুটবলে নজর দিলেই ভেসে ওঠে কীর্তিমান মেসি, স্বপ্ন জয়ের অনন্য নাম মেসি।

পিএসজিতে উড়ন্ত মেসি

ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে তিনটি আলাদা ক্লাবে থেকে ব্যালন ডি-অর জিতলেন স্বপ্নছোঁয়া মেসি। বার্সেলোনা, পিএসজি হয়ে গেলেন ইন্টার মায়ামিতে। যেদিকেই যান নজর ও নজির হয়ে যান নিজেই। ফুটবল দুনিয়ার স্রোত যেন তার পায়ে পায়ে। সব গুঞ্জনের শেষে লিস্টের শীর্ষে থাকা নামটি যেন অনুমিত, ওই এক লিওনেল মেসি।

এবারের সিজনেও ব্যালন ডি-অর জেতার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থেকে নিজেরে জানান দিলেন দুনিয়া দেখা এই প্লে মেকার। এবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে সুপার ব্যালন ডি-অরও ধরা দিতে যাচ্ছে লিওর কাছে। পেতে যাচ্ছে ফুটবল ভক্তদের মুগ্ধ করা মেসির ছোঁয়া।

এক বিশ্বকাপ জয়েই তো নিশ্চিত হয়েছিল ব্যালন ডি-অর। তবুও যেন তার রেকর্ড থেমে নেই। একের পর এক চমক দেখলেন ফুটবল দুনিয়াকে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে ১০ গোল করলেন মেসি। এমএলএস নিয়মিত মৌসুমে এটি আর্জেন্টাইন তারকার ৩০তম গোল। এর মাধ্যমে দিয়ে গঞ্জালো হিগুয়াইনের সাথে যৌথ রেকর্ড ভেঙে মিয়ামির ইতিহাসে এককভাবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড করেন মেসি।

একাই এক বিশ্বকাপে দিলেন সাত গোল। এসব নাটকীয় ফুটবলের গল্প মেসি বলেই সম্ভব। লিষ্টের আরো আরো তারকা ফুটবলারদের পেছনে ফেলে সাইত্রিশের সীমানা পেরিয়েও অদম্য খেলোয়াড় হিসেবে তরুণদের সাথে সমানে তালে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছেন জর্নিম্যান লিওনেল মেসি।

ফুটবলের সৌন্দর্য দেখার আনন্দ এখানেই। আর দশটা খেলা দেখে তো এমন আরাম পাওয়া যায় না। সম্প্রতি নজর দেয়ার মতো একটা দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে ইন্টার মায়ামির হয়েও ৫০তম গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন মায়ামির মেসি, বিশ্বজয়ী মেসি।

নিজের ঝুলিতে তুলে এনেছেন ৮টি ব্যালন ডি-অর, ৬টি গোল্ডেন বুট ও ৪টি ফিফা মেন্স, ২টি গোল্ডেন বলের নজির। আর দুনিয়ারে তাক লাগিয়ে নিজের ক্যারিয়ারে পূর্ণতার গল্প লিখলেন বিশ্বকাপ জয়ে, ২টি কোপা আমেরিকা, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা দিয়ে। পায়ের শৈল্পিক ছন্দে, মাঠের মুগ্ধতায় করেছেন ৮৬৫টি গোল একই সাথে ৩৮৪ অ্যাসিস্টে রাঙালেন সোনালি অধ্যায়ের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার।

মায়ামিতে এখনো অদম্য মেসি

একজীবনের সাফল্য আর কীর্তিতে যেন লেখা হলো ফুটবল ইতিহাসের মহাকাব্য। যেই কাব্যের পাঠ হবে যুগ থেকে যুগান্তরে। দুনিয়ার ফুটবলে এক স্মরণীয় নাম হয়ে থাকবেন জার্নিম্যান মেসি। নিজের মাতৃভূমি, দল ও দেশ আর্জেন্টিনাকেও ছাড়িয়ে হয়ে উঠলেন ফুটবল দুনিয়ার লিজেন্ড। খেলার গল্পের বাইরেও মানুষ হিসেবে অনন্য মেসি। মেসির মার্জিত জীবনযাপনের গল্পও জানা আছে ফুটবল প্রেমিদের কাছে। সবার কাছে যেন এই এক প্রেরণার নাম- লিওনেল মেসি, ফুটবলের মেসি।

ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেয়া মেসির জীবনে ফুটবল থেকে নতুন করে কিছুই পাওয়ার নেই। একে একে সব স্বপ্নকে ছুঁয়ে নিজেকেও বারবার, কতোবার যে ছাড়িয়ে গেলেন তা এখন যেন স্বপ্নের গল্প। টিকে থাকার আসরে নিজের সক্ষমতার জানান দিয়ে নজির হলেন ফুটবল দুনিয়ায়।

ওই ফুটবলের পেলে, ম্যারাডোনার সাথে নিজেকেও বসালেন কীর্তিমানের আসরে। হলেন গ্রেটেস্ট অব দ্য অল টাইম। একটা প্রবাদ আছে এমন—‘কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।’ সত্যিই মেসির নামটা এমনই বরণীয় হলো ফুটবল বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে, ভক্তের কাছে। যার বাঁ পায়ের জাদুতে ছন্দ ও মুগ্ধতার পাঠ দিয়েছেন বিশ্ব ফুটবলে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *