যেভাবে গায়েব হলো ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনা

জাতীয়

সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এমন বক্তব্য দেওয়ার পর এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।

গতকাল রোববার কুমিল্লার কোটবাড়ীতে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) বার্ষিক পরিকল্পনা সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই ব্যাংকের সোনা কীভাবে গায়েব হলো, সেটি নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে।

ব্যাংকটির কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, ঘটনাটি তিন বছর আগের এবং প্রায় আট হাজার ভরি সোনা কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া গ্রাহকরা তুলে নিয়েছিল। পরে এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে, যা এখনো বিচারাধীন আছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংকের তরফ থেকে দুদককে জানানো হলে তারা তদন্ত শুরু করে। তদন্তের পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তখনকার চেয়ারম্যানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির একজন উপপরিচালক। এরপর পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, এসব ব্যক্তি ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা সাত হাজার ৩৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে, যার তখনকার বাজার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৪০ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ টাকা।

এর মধ্যে ভুয়া ব্যক্তিকে গ্রাহক সাজিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার সোনা তারা আত্মসাৎ করেন। এ মামলা এখনো চলছে।

কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি নামের একটি সমবায় সমিতির সদস্যরা মোট প্রায় ১২ হাজার ভরি সোনা ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণ গ্রহণ করেছিল।

এক পর্যায়ে ওই সমবায় সমিতি দেউলিয়া হয়ে যায়। এর মধ্যে করোনা মহামারি চলে আসে। সবমিলিয়ে যথাসময়ে ঋণ শোধ না করায় এক পর্যায়ে ব্যাংক সেই সোনা নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

সমবায় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আহসানুল গনি বলেছিলেন, ‘ব্যাংক তখন বলেছিল যে সমিতির সদস্যরা জমা রাখা সোনা লোন পরিশোধ সাপেক্ষে নিতে চাইলে নিতে পারবে। এ সুযোগটি নিয়েছিল কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা ভুয়া ব্যক্তিকে ওই সমিতির সদস্য সাজিয়ে ভুয়া রশিদ বানিয়ে লোন হিসেবে নেওয়া টাকা জমা দিয়ে সোনা তুলে নেয়।’

মূলত সোনার বাজার দর অনেক বেশি হওয়ায় লোন শোধ করেই ভুয়া ব্যক্তিরা সোনা তুলে নিয়ে লাভবান হয়েছিল বলে জানান তিনি।

‘মামলার চূড়ান্ত চার্জশিটে সাবেক চেয়ারম্যান নাম ছাড়া বাকিদের নাম রেখেছিল দুদক। চার্জশিটে নাম থাকা ব্যক্তিরা এখন জামিনে আছেন। তবে মামলাটি বিচারাধীন আছে’ বলছিলেন তিনি।

অর্থাৎ ওই ব্যাংকের সোনা নিয়ে যা ঘটেছে, তা হলো নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটির সদস্যরা সোনা বন্ধক রেখে লোন নিয়েছিল। পরে ওই নামেই ভুয়া রশিদ ও কাগজ তৈরি করে কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লোনের টাকা ফেরত দিয়ে সোনা তুলে নেয় একদল ব্যক্তি। প্রায় আট হাজার ভরি তুলে নেওয়ার পর ব্যাংকের মধ্যে প্রকাশ হয়ে যায় ঘটনাটি।

ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, ‘তারা যেই নামের বিপরীতে যত টাকা লোন নিয়েছিল, সেই টাকা দিয়েছিল ব্যাংককে। কিন্তু যারা এসব নামে এটি করেছে, তারা ছিল ভুয়া।’

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *