শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

জাতীয়

ছাত্র-জনতার স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, গত মাসে, আমাকে যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তখন আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং সমস্ত জানা এবং অজানা শহীদদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমার সকল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের তরুণ বিপ্লবীরা দেশের মানুষের মনে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে, তা পূরণে আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

শহীদদের আত্মত্যাগে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করতে চাই। এক নতুন যুগের সূচনা করতে চাই।

“তোমরা তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের শপথ নিয়েছিলে। শহর ও গ্রামীণ জনপদের দেয়ালে আঁকা তোমাদের স্বপ্নগুলো এখনো নানা রঙের সাজ নিয়ে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

বিপ্লবের সময়, তোমরা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ঘুমহীন রাত কাটিয়েছো এবং দিনে নিষ্ঠুর শাসনকে প্রতিহত করার জন্য পরস্পরের থেকে চিরবিদায় নিয়ে রাস্তায় নেমেছো। বিপ্লব শেষ হওয়ার পর তোমরা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় পাহারা দিয়েছ এবং সারা দেশে ট্রাফিক পরিচালনা করার দায়িত্ব নিয়েছ।

 

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি জানি তোমাদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই এখন সময় পড়াশোনায় ফেরার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে। আমি তোমাদের ক্লাস ও ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কেননা বিপ্লবের সুফল ঘরে তুলতে আমাদের একটি সুশিক্ষিত ও দক্ষ প্রজন্মের দরকার।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের একমাস পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বার্তায় এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, মাত্র একমাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আমরা বিপ্লবের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রথম কাজ জুলাই ও আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। গণহত্যার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করার জন্য আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এদেশে এসেছেন এবং তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি জুলাই এবং আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ট্রাইব্যুনাল তৈরি করার প্রয়াসে শীর্ষ আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের সাথেও কথা বলেছি। আমরা খুনিদের প্রত্যর্পণ এবং স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ ও আমলারা যে পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তা দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই। এজন্য বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা নিলাম শহীদদের রক্ত এবং আহত ভাইবোনদের আত্মত্যাগকে জাতি হিসেবে আমরা কিছুতেই ব্যর্থ হতে দেব না। যে সুযোগ তারা আমাদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন, সে সুযোগকে আমরা কখনো হাতছাড়া হতে দেব না। আজ তাদের স্মৃতিময় দিনে আবারো প্রতিজ্ঞা করলাম, তাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ আমরা গড়বই।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *