সিলেটকে বন্যামুক্ত রাখতে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

সিলেট

সিলেট নগরীসহ জেলার ১৩ উপজেলাকে স্থায়ীভাবে বন্যা মুক্ত রাখতে সুরমা ও কুশিয়ারা খনন, নদী ভাঙনরোধ, কৃষিজমির চাষ বৃদ্ধি, মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধি সর্বপোরি এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ‘সিলেট জেলার সুরমা-কুশিয়রা নদীর অববাহিকায় সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পটি  বাস্তবায়ন করতে সম্ভাব্য ব্যয় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।

গত বছর আসাম ও মেঘালয়ের ঢল নেমে সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে সিলেট  অঞ্চলের অন্তত ৫০ লাখ মানুষকে বিপন্ন করে তুলে ফসল বাড়িঘর অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড পূর্ব রিজিয়নের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটির সমীক্ষা শেষ হয়েছে।  জুলাই মাসের মধ্যেই ডিপিপি প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে। তারপর একনেকে উঠবে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলবাসী মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। প্রকল্পটি প্রণয়নে বিশেষ করে কৃষি, মত্স্যসম্পদসহ বিভিন্ন বিষয়াদির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এর জন্য স্থানীয়দেরও মতামত নেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেঘালয়ের পাদদেশে সিলেটে বর্ষা এলেই বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।  এতে বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ক্ষতি রোধেই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে রয়েছে : সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৬০ কিলোমিটার চর খনন, ছয়টি শাখা, উপনদী ও খাল খনন ১৪০ কিলোমিটার, ১৩০টি স্থানে ৫২ হাজার ১৯৬ মিটার, ৩১৬ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ-পুনর্নির্মাণ, সিলেট শহরে নতুন রেগুলেটর নির্মাণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ, রেগুলেটার নির্মাণ, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ, পাম্পস্টেশন নির্মাণ ইত্যাদি। প্রকল্পটি বস্তবায়নের  মেয়াদ ধরা হয়েছে তিন বছর । কর্মকর্তারা বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে, বিশেষ করে সুরমা-কুশিয়ারা নদী এবং শাখা, উপনদীসমূহ খনন করা হলে প্রকল্প এলাকার পানি দ্রুত ভাটির দিকে নেমে যাবে। দ্রুত বন্যার প্রকোপ হ্রাস পাবে। ভৈরব থেকে কানইঘাট পর্যন্ত সুরমা-বাউলাই নৌপথ ও  ভেরব-বিয়ানীবাজার নৌপথ ব্যবহার উপযোগী হবে। এতে সিলেট শহরে সহজে পানি ঢুকতে পারবে না। এ জন্য ফ্লাড ওয়ালও নির্মাণ হবে। শহরে ভিতর যে পানি জমবে তা পাম্পের মাধ্যমে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে। কর্মকর্তারা জানান, নদীগুলো খননের পর বর্ষা মৌসুমে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হবে। কৃষকেরা আগের তুলনায় এক সপ্তাহ আগেই ধান তুলতে পরবেন।

এদিকে ‘সিলেট জেলার সুরমা-কুশিয়রা নদীর অববাহিকায় সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ ও উন্নয়নের  সম্ভাব্যতা’ সমীক্ষা শীর্ষক প্রকল্পের এক মতবিনিময় সভা ও কর্মশালা জুন মাসের প্রথম দিকে সিলেটের একটি অভিজাত হোটেল কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন, এই ধরনের প্রকল্পের উপযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘তবে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যকে অক্ষুণ্ন রেখে যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, অতীতে প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে, খালবিল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করায় দুর্যোগ ত্বরান্বিত হয়েছে। ফলে প্রতি বছর ভয়াবহ বন্যায় সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। অবকাঠামো দুর্বল হচ্ছে। মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটবাসী তথা হাওরবাসীর প্রতি খুবই আন্তরিক,’ উল্লেখ করে বলেন, এই প্রকল্পটি যেন অদূর ভবিষ্যতে ক্ষতির কারণ না হয়ে উঠে সেদিকে নজর রাখতে  হবে। অর্থাত্ সরকারে টাকার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে ও ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং আই ডব্লিউ এম এবং সেন্টার ফর এনভারমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফি ইনফর্মেশন সার্ভিসেস সিইজিআইএস-এর যৌথ সহযোগিতায় ঐ কর্মশালা আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী পৌর মো. রেজাউল করিম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী খুশি মোহন সরকার সভাপতিত্ব করেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. রমজান আলী প্রামানিক  বলেন,  এই প্রকল্পে স্থানীয় লোকজনের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সিলেটবাসীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ফল বয়ে আনবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *