সিলেটে একাধিক মামলার আসামী আওয়ামীলীগ নেতা জবলুকে নিয়ে চাঞ্চল্য

সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক:সিলেটে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের একাধিক মামলার এক আসামীকে নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিজেকে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের এক নিষ্ট কর্মী প্রমাণে সক্রিয় ছিলেন। লন্ডন ও সিলেটের একাধিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার প্রচারণাসহ বিশাল অংকের অর্থায়ন করেছেন। অথচ ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর কখনো নিজেকে জামায়াতের কর্মী আবার কখনো বিএনপির কর্মী পরিচয় দিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন। লন্ডন-সিলেটের এই মাফিয়া সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের ঘনিষ্ট সহচর। তিনি ওসমানীনগর থানার গহরপুর গ্রামের আজিদ মিয়ার ছেলে জবলু মিয়া তালুকদার।


জবলু মিয়া তালুকদার বহুরুপ চরিত্রের অধিকারী এক আওয়ামীলীগ নেতা। অনুসন্ধানে জানাযায়, তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামের আশীর্বাদে তার উত্তান শুরু। নিজেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বলে দাবী করলেও তিনি চোরাচালানের সাথে জড়িত। ভারত ও যুক্তরাজ্য থেকে মাদক দ্রব্য ও সোনা চারাচালান করে অবৈধভাবে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। এসব টাকা দিয়ে বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের দিয়ে করিয়েছেন নানা অবৈধ কাজ। নিজের গ্রামের বাড়ী সিলেটের ওসমানীনগর হলেও সিলেট সিটির মেজরটিলায় করেছেন আলীশান প্রাসাদ। সিলেটের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সাথে রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। আনোয়ারুজ্জামানের সিলেট সিটি নির্বাচনের সময় জবলু তালুকদার যুক্তরাজ্য থেকে লন্ডনীদের বিশাল বহর নিয়ে সিলেটে এসে আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনের জোরেসোরে প্রচারণা চালান। এমনকি আনোয়ারুজ্জামানের নির্বাচনে তিনি ২ কোটি টাকা প্রদান করেন বলে জানাযায়। তার বাবা ছিলেন এলাকার স্থানীয় বাজারের সাদা বিক্রেতা। একজন সামান্য সাদা বিক্রেতার ছেলে কি করে এতো অঢেল সম্পদের মালিক হলো তা নিয়ে চলছে এলাকায় কানাঘোষা। সিলেট মেজরটিলা এলাকার প্যারাগন টাওয়ারে ২/৩ টি ফ্ল্যাট, খাদিমপাড়া এলাকায় রয়েছে বিশাল ভূসম্পত্তি। নিজ জন্মস্থান তাজপুরে বাজারে ২ কোটি টাকা ব্যায়ে নিম্যাণ করেন ‘এম এ আজিদ’ নামে ইনডোর স্টেডিয়াম।


নিষিদ্ধ সংগঠন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামের সাথে রয়েছে তার বিশেষ দহরম মহরম সম্পর্ক। ৫ আগস্টের পর নাজমুলকে তিনি তার প্যারাগনের বাসায় বিশেষ পাহারায় থাকার জায়গা করে দিয়েছিলেন। এরপর নাজমুলকে ভারতে যেতে আর্থিক সহযোগিতা করেন জবলু মিয়া। বর্তমানেও জবলু মিয়া নাজমুলকে ভারতে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠান বলে জানাযায়।


৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর গিরগিটি স্বভাবের জবলু মিয়া এখন কখনো জামায়াত, কখনো বিএনপির ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে জানাযায়। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন তার ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে। প্রকাশ্য দীবালোকে এই ফ্যাসিস্টদের অর্থ যোগানদাতা ঘুরলেও প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করছে না। বরং ফ্যাসিস্টদের সহযোগী আওয়ামীলীগের এই চোরাকারবারী, অবৈধ বিত্ত ভৈববের মালিক জবলুকে বিএনপির লোকজন অর্থের বিনিময়ে শেল্টার দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। জবলুও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কৌশলে ছবি তুলে তা প্রশাসনের লোকজনকে দেখিয়ে বিভ্রান্ত করছে বলে জানাযায়।


অদ্য জবলু মিয়ার নির্দেশে ও এলাকার আরেক আওয়ামীলীগ নেতা নেফা মিয়া, কোহেলুর রহমান চৌধুরীর সহযোগিতায় স্থানীয় মাদার বাজারে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের উদ্যোগে সরকারী বিরোধী মিছিল হয়। এ মিছিল থেকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উস্কানীমূলক শ্লোগান দেওয়ায় স্থানীয় বালাগঞ্জ থানায় তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। জবলু মিয়া সিলেটে আওয়ামীলীগকে সংগঠিত করতে গোপনে মিশন চালাচ্ছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।


জবলুকে অতিসত্ত¡র গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন সিলেটের লোকজন। তার অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের জন্য এনবিআর ও দুদক তদন্ত করা উচিত। সিলেটের বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত একাধিক মামলার এই ফেরারী আসামীকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন সাধারণ জনতা।
এ ব্যাপারে সিলেট কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল হক বলেন, জবলু মিয়া তালুকদারের বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালী থানায় মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *