ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেট। সকালে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চারপাশ। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালেও কুয়াশার চাদরে আবৃত ছিল সিলেট। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে দেখা মিলেছে সূর্যের।
আগামী ১০ দিন এভাবেই চলবে, তবে কমবে না তাপমাত্রা। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে থাকবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বৃহস্পতিবার সকালে এমন তথ্য জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সিলেটে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে আগামী ১০ দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির নিচে নামার আশঙ্কা কম। এ সময়ের মধ্যে ঘন কুয়াশা থাকলেও তাপমাত্রা কমবে না। তিনি আরও বলেন, কুয়াশা থাকায় শীতের অনুভূতি বেশি থাকলেও তাপমাত্রা বাড়বে। দেরিতে হলেও আকাশে সূর্যের দেখা মিলবে।
সকালে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সিলেট নগর ও আশপাশ। ঘন কুয়াশার কারণে মধ্যরাত থেকে সকাল অবধি শহর ও গ্রামের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরিব অসহায় মানুষ। কুয়াশার প্রভাব বেশি লক্ষ করা গেছে সুরমা নদীসংলগ্ন এলাকাগুলোয়। লোকজন শীত নিবারণের জন্য ভারী কাপড় পড়ে যে যার গন্তব্যে ছুটছেন।
সিলেটে চা বাগানের শ্রমিকরা জানান, দুদিন ধরে কুয়াশা না থাকলেও মেঘলা পরিবেশ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ঠাণ্ডা বাতাস। এ বাতাসের কারণে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। রাতে মনে হয় তাপমাত্রা শূন্যতে চলে আসে। চা বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয় আমাদের।
এছাড়া পাথর শ্রমিকরা জানান, ঠাণ্ডায় নদীর পানি বরফের মতো মনে হয়। তারপরও আমাদের পাথরই জীবিকা। তাই কাজে বের হয়েছি। কয়েক দিন ধরে নদীর ঠাণ্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগেছি। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। একই কথা জানান কয়েকজন দিন মজুর ও নারী পাথর শ্রমিক।
এদিকে শীতে প্রকোপে বেড়েছে নানা শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এসময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত বছরের ৯ জানুয়ারি সিলেটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এবার শীত শুরুর পর গত ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ৪ দিনেও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নামেনি। গতকাল বুধবার সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শেয়ার করুন