ছুটিছাটা এলেই টের পাওয়া যায় পর্যটন নগরী হিসেবে সিলেটের পরিচয় যে মিছে নয়। একটু বাড়তি ছুটির উপলক্ষ এলেই সিলেটে ঢল নামে পর্যটকদের। টানা তিনদিনের ছুটিতে সেই একই অবস্থা। কোথাও যেন ঠাঁই নেই। সবগুলো পর্যটন স্পটেই ভিড় চোখে পড়ার মতো। ইতোমধ্যে সব হোটেল- মোটেল, রিসোর্ট বুকিং দেওয়া হয়েছে
জাফলং, সাদা পাথর, রাতারগুল, লালাখাল, বিছনাকান্দি, পান্থুমাই জলপ্রপাত হবিগঞ্জের কমলারানীর সাগর দিঘি, সাতছড়ি, রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য মৌলভীবাজার জেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, হাকালুকি হাওর, মাধবপুর লেকে ছিল হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড়।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের চাপ দেখা যায়। তাদের গন্তব্য পুণ্যভূমি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন স্পট। কেউ আগেই হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছেন আবার কেউ ছুটছেন বুকিং দিতে। তবে অনেককেই রুম ফাঁকা না থাকায় যেতে হচ্ছে অন্য হোটেলে।
কুষ্টিয়া থেকে সাদা পাথর দেখতে আসা মিম আক্তার বলেন, টানা তিন দিনের ছুটি তাই পরিবারের সবাই সিলেটে এসেছি।
রাজশাহী থেকে আসা রিয়াজ বলেন, টানা তিনদিন ছুটি পেয়েছি। দেশে ছুটি কাটাতে সিলেটকেই পছন্দের তালিকায় রাখি।
সাদা পাথরে ঘুরতে আসা আব্দুস সামাদ বলেন, টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি সিলেট। বাকি দুদিন বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরব।
গোয়াইনঘাটের রাতারগুলে ঘুরতে আসা মৌসুমি বলেন, তিন দিনের ছুটি পেয়ে পর্যটন নগরী সিলেট চলে এসেছি। আমরা রাতারগুল বিছনাকান্দি ঘুরেছি। ভ্রমণের আনন্দটা কিছুটা ফিকে হয়েছে ভাঙা রাস্তাঘাটের কারণে। রাস্তা ঘাট আরও একটু ভালো আমরা বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে পারতাম। প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আর্কশন করি যাতে রাস্তা দ্রুত সংস্কার করার আহ্বান জানান।
এদিকে সকাল থেকেই সিলেটের প্রধান প্রধান পর্যটন স্পট যেমন রাতারগুল, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, জাফলংয়ে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকদের পদচারণা। ধারণা করা হচ্ছে এসব স্পষ্টগুলোতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হবে
জাফলং তামাবিল রোডের পরিবহন শ্রমিক আফতাব মিয়া জানান, সকাল থেকে আমাদের প্রতিটি বাস নির্ধারিত সময়ে সিলেট থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে। সকালের প্রথম গাড়িটি পর্যটকে ঠাসা ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ জাফলং ঘুরতে যাচ্ছেন আবার কেউ কেউ মেঘালয় ভ্রমণের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
সিলেট নগরীর হোটেল শেরাটনের স্বত্বাধিকারী সুজন মিয়া কালবেলাকে বলেন, গত কয়েকদিন থেকে আমার হোটেলে কোনো রুম খালি নেই। মানুষ আমাদের সিলেট ঘুরতে আসছেন এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তবে তাদের রুম দিতে পারতেছি না এটা একটু খারাপই লাগছে।
দরগা গেইটের সামনে হোটেল অর্কিড গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস দিনার কালবেলাকে বলেন, টানা তিনদিনের ছুটি পেয়ে সিলেট ঘুরতে আসতেছে পর্যটকরা। আমাদের হোটেলের সব রুমগুলো বুকিং হয়েছে। ব্যবসা হচ্ছে আমাদের।
জিন্দাবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী তারেক জামান বলেন, তিন দিনের জন্য হোটেল অনেকটা ফুল বুকিং ছিল। এতে দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে সিলেটের পর্যটনে যেন প্রাণ ফিরেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং জোনের ইন্সপেক্টর রতন শেখ বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমরা সবসময় নিয়োজিত আছি। পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য আমরা কাজ করছি
সিলেটে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় জন্য থানা পুলিশ, ডিবি, ট্রাফিক, ডিএসবি কাজ করছে। পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ও প্রশাসন কাজ করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্পটে প্রবেশের টিকিটের মূল্য, নৌকার ভাড়া নির্ধারণ করা আছে। কোনো অবস্থাতেই এর থেকে বেশি নেওয়া যাবে না। কেউ যদি এর ব্যত্যয় ঘটায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শেয়ার করুন