সিলেটে বন্যায় ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত ৯৯ হাজারেরও বেশি বসতঘর

চায়ের দেশ

শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত পুরো সিলেট।ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ।দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ।পুরোপুরি বন্যার পানি না নামলেও বন্যায় ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র বেরিয়ে আসছে।ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহৃ।স্বজন ও ঘর বাড়ি হারিয়েছেন অনেকে। বানের পানিতে ভেসে গেছে গরু, মহিষ, হাঁস-মুরগি। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিঃস্ব অবস্থায় বাড়ি ফিরে গেছেন।বানের পানিতে বসতঘরসহ মালামাল হারানোর হাহাকার চলছে লাখো পরিবারে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় স্মরকালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৬৫ জন মানুষ।আর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৬ লাখ ২২ হাজার ৯৬৮টি।এরমধ্যে ৯৯ হাজার ৭৫৮টি বসতঘরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বানের পানিতে। আর গৃহহীণ হয়েছেন প্রায় ৭ হাজার পরিবার।যারা আশ্রয় নিয়ে পরের ঘরে।
সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জের প্রায় ৩০ লাখ লোকজন। সিলেট জেলা ও মহানগরীতে ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৩৬ এবং হবিগঞ্জে ৮৩ হাজার ৪৯০ জন।একইভাবে সিলেট বিভাগের সে চেয়ে বেশি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় বন্যায় ৪৫হাজার বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি বসতঘর।ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে সিলেট জেলা। এ জেলায় ৪০ হাজার ৯১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজার জেলায় ১৪ হাজার ৩০৯টি ও হবিগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০টি বসতঘর।

সিলেট জেলা: 
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) পর্যন্ত সিলেট জেলা প্রশাসনের বন্যা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশনসহ ১৩ টি উপজেলা ও ৫ টি পৌরসভার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩ পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ২৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩৩ জন। আর কাঁচা ঘরবাড়ি বন্যায় ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৯১টি।

সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলায় ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৩৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছেন ৩৭ হাজার ১৭৬ লোকজন।

পক্ষান্তরে বরাদ্দপ্রাপ্ত মোট ১ হাজার ৬১২ মেট্রিক টন চাল, ২০ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনা খাবারের মধ্যে ১৯ হাজার ৯১৮ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। নগদ এক কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বরাদ্দকৃত ৬৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়। সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুনামগঞ্জ:
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টি।পানিবন্দি ৫৫ হাজার ৬৬০ পরিবার।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণকৃত ত্রাণের পরিমাণ ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন। নগদ অর্থ ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। বর্তমানে চালের মজুত নেই। বিতরণকৃত শুকনো খাবার ২৩ হাজার প্যাকেট। এছাড়া ২৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫৩ হাজার ১০০ লোকজন রয়েছেন। এরমধ্যে পুরুষ ২১ হাজার, মহিলা ২০ হাজার, শিশু ১১ হাজার ৫০০ এবং প্রতিবন্ধী শিশু ৬০০ রয়েছেন। জেলায় দুর্গতদের সহায়তায় ১২৩টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ তৎপরতা-সম্পর্কিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি। এ ছাড়া বন্যায় ২৮ হাজার ৮০৫টি মুরগি ও ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু-কালভার্টের সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি আছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।

হবিগঞ্জ:
হবিগহঞ্জে ভয়াবহ বন্যায় ৮৩ হাজার ৪৯০ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ২৪ হাজার ২৩০টি।বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০টি।
এ তথ্য জানিয়ে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের (ট্রেজারি, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈন খান এলিস বলেন, বন্যায় জেলার ৬১৭ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়। জেলায় ৩৫০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৩৪৫ জন আশ্রিতদের মধ্যে বর্তমানে আট হাজার ১৯০ জন পুরুষ, আট হাজার ১৪ জন নারী, পাঁচ হাজার ১১ জন শিশু এবং ২০৪ জন প্রতিবন্ধী রয়েছেন।

পক্ষান্তরে ৮০০ মেট্রিকটন চাল, ৪০ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৩১ হাজার ৪১৬ ডানো শিশু খাদ্যের জন্য বিতরণ করা হয়।

মৌলভীবাজার: 
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাদু মিয়া বলেন, বন্যায় ৫৮ হাজার ৫৯৫ পরিবার এবং ২লাখ ৬২ হাজার ৭৩৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এছাড়া ১৪ হাজার ৩০৯টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে জেলায় ৮০৫ মেট্রিক টন চাল, ১৭শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখনো ১৪৮ টন চাল, ২৫ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি নির্মাণ/মেরামতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ/অনুদান পেতে পারেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *