বুঝতে পারলাম আমার পিঠে কেউ একজন হাত বুলাচ্ছে। প্রথমে পাত্তা দেইনি। পরে দেখি দাড়িওয়ালা এক মধ্যবয়স্ক পিঠ থেকে হাত সরিয়ে নিল। মাথায় রক্ত উঠে গেল। সিএনজি থেকে নামিয়ে রাস্তার মোড়ে সবার সামনে ৩০ মিনিট ধরে চড়ালাম। গুনে গুনে শ’খানে চড় দিয়েছি।
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সুমি উর্মি। সুমি বর্তমানে ঢাকা ব্যাংকের সিলেট শহরের একটি শাখায় কর্মরত। যৌন হয়রানির ভুক্তভোগী সুমি বলেন, রোববার (৩ জুলাই) রাতের দিকে অফিস শেষ করে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলাম। রাত ৮টা ১০ এর দিকে বন্দর এলাকা থেকে শাহপরান রুটের সিএনজিতে উঠি। পেছনের সিটে আমার পাশে একটি ছোট ছেলে ও তার পাশে একজন মধ্যবয়স্ক লোক ওঠেন। ছোট ছেলেটা মাঝখানে বসেছিল। আমার শপিং ব্যাগগুলো পেছনে রেখেছিলাম। শুরুতে ভাবলাম ব্যাগগুলো আমার পিঠে লাগছে। অর্থাৎ আমার পিঠে কোনোকিছুর স্পর্শ অনুভব করছিলাম। কয়েকমিনিট পাত্তা দেইনি। সিএনজি যখন শাহপরান উপশহর মোড়ের কাছে পৌঁছল তখন বুঝলাম আমার পিঠে আঙুল দিয়ে আঁচড় দিচ্ছে কেউ। ততক্ষণে মাঝের কিশোর নেমে গেছে।
হয়রানিতে অভিযুক্তকে হাতেনাতে ধরে ফেলার বর্ণনা দিয়ে সুমি বলেন, পিঠে তার হাত থাকা অবস্থায় তাকে আমি ধরে ফেলি। শুরুতে সে অস্বীকার করলেও চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতেই, বলতে শুরু করে ভুল হয়েছে। মাথায় তখন রক্ত উঠে যায়। ইচ্ছেমতো চড়াতে শুরু করি। শাহপরান মোড়ের কাছে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে অনেকগুলো চড় মেরেছি।
সুমি জানান, অনেকক্ষণ মারার পর অভিযুক্ত তার পা ধরে মাফ চাইতে থাকে। ধীরে ধীরে সেখানে লোক জড়ো হয়। স্থানীয়ার এসে তাকে পুলিশে দিতে বলে। কেউ কেউ মাফ চেয়েছে দেখে ছেড়ে দিতে বলে। তখন তাকে ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে যান সুমি। সুমি জানান, পাশেই থানা ছিল, কিন্তু তাকে থানায় ধরিয়ে দেয়ার সময় পায়নি। আর এতো তাড়াতাড়ি সব ঘটে গেছে যে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল দেয়ার সময় পাইনি। চড় মারা শেষে মধ্যবয়স্ক লোকটা নিজেকে কোনো এক মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তার নাম বলেননি বলে জানান সুমি।
পাশে থানা থাকতে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে গেলেন কেনো এমন প্রশ্নে ব্যাংকার সুমি উর্মি বলেন, এ বছর ৮ মার্চে সিএনজির ভেতরে হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিবাদ করায় তখন সিএনজি থেকে অভিযুক্ত তাকে উল্টো নামিয়ে দেয়। সুমি বলেন, সিলেট এলাকায় গণপরিবহনে নারীদের যৌন হয়রানি নিত্য ঘটনা। সিলেট রক্ষণশীল এলাকা হওয়ায় কোনো নারী প্রতিবাদ করতে পারে না। উল্টো নারীদের দোষ ধরা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সুমি।
শেয়ার করুন