সিলেটে হিজড়াবেশী তুষার আহমদ (২০) নামের তরুণকে হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত ৬ হিজড়া। টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
বিষয়টি মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ।
তিনি জানান, হিজড়াদের এই গ্রুপ নানা অনৈতিক কাজে জড়িত। অনৈতিক কাজের মাধ্যমে তারা টাকা উপার্জন করতো। এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব হয় এবং এরই জের ধরে তুষার হত্যাকাণ্ড ঘটে।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে সিলেট মহানগরীর সােবহানীঘাটস্থ বনফুল এন্ড কোম্পানির দোকানের ২য় তলায় উঠার সিঁড়ির সামনে (নিচ তলায়) থেকে তুষারের মৃতদেহ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানাপুলিশ। খবর পেয়ে তুষারের মা নাছিমা বেগম ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। ময়না তদন্ত শেষে রবিবার বিকালে নগরীর মানিকপীর টিলায় তুষারের লাশ দাফন করা হয়।
প্রথমেই পুলিশ ধারণা করে- এটি একটি হত্যাকাণ্ড। কারণ- তুষারের গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো। এছাড়াও ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তির আলামত পায় পুলিশ।
এ ঘটনায় রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তুষারের মা নাছিমা বেগম। পরে পুলিশ দুটি অভিযান চালিয়ে ৬ হিজড়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন- সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার ছােটদেশ গ্রামের মৃত মনাই মিয়ার সন্তান হৃদয় (২৮), রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার মৃত সিদ্দিক মিয়ার সন্তান তানহা (২৫), সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার হােসেনপুর গ্রামের মৃত এমরাজুল হকের সন্তান সুমি উজ্জল (১৮), হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার পাঁচগাঁও গ্রামের মৃত কনাই মিয়ার সন্তান চাঁদনী সজল (৩০), পাপ্পু পাপিয়া ও হৃদয় রুপা।
এর মধ্যে পাপ্পু পাপিয়া ও হৃদয় রুপা ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
গ্রেফতারের পর সবাই তুষার হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, তুষার নিজেকে ৩য় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং সেই নারী বেশে থাকতে পছন্দ করতেন। তবে তুষারের ভাই হিমেল আহমদ রাফি জানিয়েছেন- তার ভাই হিজড়া নর। ছোটবেলায় একসঙ্গে তাদের খতনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রাইমারিতে পড়ার সময় সে অদ্ভূত আচরণ করতে থাকে এবং একসময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করে। সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিন রাতেই তুষার তার হিজড়া বন্ধুদের সঙ্গে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। ফিরে পরদিন সকালে। এ ব্যাপারে তাকে বার বার নিষেধ করেও কথা মানানো যায়নি। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকেও এভাবে তার এক হিজড়া বন্ধু তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন সকালেই পরিবার জানতে পারে- তুষারের লাশ সোবহানীঘাট থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শেয়ার করুন