করোনার রেশ পুরোপুরি শেষ না হতেই দেশজুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। দেশে ১ দিনে ৫ ডেঙ্গুরোগীর মৃত্যু আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে চলতি মওসুমে প্রথমবারের মতো সিলেটেও ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা এবং বর্তমানে মৌলভীবাজার সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্তাবধায়ক। তবে তিনি জেলার বাইরে কোথাও না গিয়ে আক্রান্ত হওয়ায় ডেঙ্গু আতঙ্ক আরো উস্কে দিয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৫ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫০ জনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে ২২৪ জন ঢাকার বাসিন্দা। এ সময়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা সর্বমোট ৮৫০ জনের মধ্যে ৭১১ জন ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর ঢাকার বাইরে ভর্তি রয়েছেন সর্বমোট ১৩৯ জন রোগী।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৬ হাজার ৪৮ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৪৯ জন।
ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৬ হাজার ৫১৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩২৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ছাড়প্রাপ্ত রোগী এক হাজার ১৯২ জন। এদিকে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে সারা দেশে মাত্র ১২৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরপর ফেব্রুয়ারী মাসে ২০ জন, মার্চ মাসে ২০ জন এবং এপ্রিল মাসে ২৩ জন ভর্তি হয়। মে মাস থেকে সংক্রমণ কিছুটা ঊর্ধ্বগামী হতে থাকে। ঐ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১৬৩ জন। জুন মাসে ৭৩৭ জন, জুলাই মাসে ১ হাজার ৫৭১ জন এবং গত মাসে (আগস্ট) সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ৬ দিনে এখন পর্যন্ত সংক্রমণ এসে দাঁড়িয়েছে ৮৫০ জনে।
এদিকে চলতি মওসুমে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে কোন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত না হলেও চলতি সপ্তাহে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়েছে। ঐ ডেঙ্গুরোগী মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা ও মৌলভীবাজার সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসাধিন রয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।মৌলভীবাজার সরকারী হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা: কে এম হুমায়ুন কবির দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, মৌলভীবাজারের এই রোগী ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। নমুনা পরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তবে ঐ ব্যক্তি নিজ জেলার বাইরে কোথাও যাননি বলে তার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। তবে রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি সুস্থ হওয়ার পথে আছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিলেট নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে এডিস মশার লার্ভা সার্চিং অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছেনা। দেশে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সেলক্ষ্যে শনিবার থেকে নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রমের পাশাপাশি এডিস মশার লার্ভা খুজে বের করার বিশেষ অভিযান চলবে। যা টানা কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা: চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ বলেন, চলতি মওসুমে জেলায় ১ম ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে ঐ ব্যক্তি জেলা বাইরে না গিয়েও আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। তবে আমরা মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের ডেঙ্গু দমনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালুর নির্দেশনা দিয়েছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা: হিমাংশু লাল রায় বলেন, মৌলভীবাজারে ডেঙ্গুরোগীর শনাক্তের তথ্য তার জানা নেই। সর্বশেষ ঐ জেলায় একজন রোগী ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল বলে তাকে জানানো হয়েছিল।
শেয়ার করুন