সিসিকে কাল ভোট,ভোটের পার্থক্য গড়বে নতুন ১৫ ওয়ার্ড 

সিলেট

ভোটের পার্থক্য গড়বে নতুন ১৫ ওয়ার্ড

স্টাফ রিপোর্টার : আর মাত্র একটি রাতের অপেক্ষা। রাত পোহালেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহন। এবারের ভোটে বিএনপি-জামায়াতের মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি। কাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে ইভিএমে।

এবারের ভোটে শুরু থেকেই আলোচনায় ইভিএম। এই প্রথমবারের মতো সিলেট সিটির সব কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে বহুল আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। ইসির দাবি, ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোটসহ নির্বাচনের সব অনিয়ম দূর করা সম্ভব হবে। সিলেট সফরকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও বলেছিলেন, ইভিএমে কোনো ভূত-প্রেত নেই। এটা সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি।

সিলেটে ইভিএম নিয়ে ভুল ভাঙাতে ও সুষ্ঠু ভোট সম্পাদনে প্রচারণাও চালায় নির্বাচন কমিশন। ডেমো ভোটের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
তবুও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অনেকেই বলছেন, এই মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমেই জনগনের ভোটাধিকার হোঁচট খাবে। কারণ ইভিএমে ফিঙ্গার জটিলতা, ভোটারদের অসচেতনতা, হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। এতে সময় নষ্ট হয়, ভোট না দিতে পেরে অনেকেই ফিরে যান।
বিভিন্ন সময় বিশ্লেষকরা দাবী করেন, ইভিএম ব্যবহারের আগে যথেষ্ট প্রচার হয়নি। তাই এ মেশিন নিয়েও জনমনে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ এখনো কাটেনি।দল অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেননি সিসিকের বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। তার অন্যতম অভিযোগ ছিলো ইভিএম নিয়ে। তাই মানুষের কৌতুহলও ছিলো ইভিএম নিয়ে। তবে দ্বিধা থাকলেও ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে হবে পছন্দের প্রার্থীদের।

কিন্তু ইভিএম ছাপিয়ে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় বৃষ্টিও। অনেকে বলছেন, এবার ইভিএম পরীক্ষার পাশাপাশি বৃষ্টি বিড়ম্বনায়ও পড়তে হবে ভোটারদের। গতকাল সোমবারও টানা বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। এতে নগরের অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ারও খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় এসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন সম্প্রসারিত সিটি করপোরেশনের নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটাররাই এবার গড়ে দেবেন ভোটের পার্থক্য। কারণ এই ১৫ ওয়ার্ডের ভোটাররা এবারই প্রথম ভোট দেবেন সিটি নির্বাচনে।

এছাড়া সিসিকের প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটারই তরুণ। তাদের বড় একটা অংশ যিনি নিজের দিকে টানতে পারবেন তিনিই হবেন সিলেটের মেয়র। এছাড়া নিজেদের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি হলেও ভোটের ফল পাল্টে যেতে পারে।
সিলেটে এবার মেয়র পদে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তবে এরমাঝে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। ফলে ধারনা করা হচ্ছে, নির্বাচনে ‘উইন উইন সিচুয়েশনেই’ থাকবেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। একটি জরিপও তাই বলছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলও।

গত শনিবার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। পরেরদিন অপর প্রার্থী নজরুল ইসলাম ২১ দফা ইশতেহারে পরিকল্পিত আধুনিক নগরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইশতেহার ঘোষণার পর থেকে সভা-সমাবেশে প্রার্থীরা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির দিকে ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় পার্টির প্রার্থীর চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে।
এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি ও জামায়াত। মেয়র পদে এই দুই দল থেকে কেউ প্রার্থী হননি। তবে কাউন্সিলর পদে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। এসব প্রার্থীর ভোট দিতে এই দুই দলের অনেক সাধারণ ভোটারই ভোটকেন্দ্রে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতদিন এই ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার ছক কষেছে আওয়ামী লীগ।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটে প্রার্থী হওয়া বিএনপি নেতাদের ইতিমধ্যে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে যেতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই ভোট দিতে যাবেন না। একই সুর জামায়াতেরও। জামায়তের নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ ভোটে যাবেন না। তবে যেসব ওয়ার্ডে জামায়াত ঘরানার কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন সেখানে জামায়াত সমর্থকরা ভোটে সক্রিয় বলে সরজমিনে দেখা গেছে।

তবে এবারের নির্বাচনী প্রচার সবচেয়ে বেশী চমক জাগানিয়া বিষয় হচ্ছে, প্রচারের শুরুর দিকে আওয়ামীলীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল দুজনই বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনায় মুখর ছিলেন। আরিফের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও লুটপাটের অভিযোগ তোলেন দুজনই। তবে হঠাৎই বন্ধ হয়ে যায় তাদের আরিফবিরোধী বক্তব্য। গত কয়েক দিন ধরেই আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুলকে আরিফের সমালোচনার বদলে প্রায়ই প্রশংসা করতে দেখা গেছে। অনেকে মনে করছেন, বিএনপি ও আরিফ অনুসারীদের ভোট নিজেদের পক্ষে আনতে আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুল এ কৌশল নিয়েছেন। তবে তাদের এ কৌশল কতটুকু ঠিকবে তার জন্য কেবল আজ রাতটুকুই অপেক্ষা।

মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য পাঁচ প্রার্থী হচ্ছেন জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র মো. আবদুল হানিফ কুটু, মো. শাহ জামান মিয়া, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
মেয়র পদে ৮ প্রার্থীর পাশাপাশি ৪২টি ওয়ার্ডে ২৭৩ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৪ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৭ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, নগরে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি। এবার ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২টিতে। ভোটার সংখ্যাও বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
এদিকে, নির্বাচন উপলক্ষে আজ ২০ জুন দিনগত মধ্যরাত (১২টা) থেকে ২১ জুন মধ্যরাত (১২টা) পর্যন্ত ট্রাক, পিকআপ এবং ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হযেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ নিষেধাজ্ঞা রির্টানিং অফিসারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের নির্বাচনী এজেন্ট, সাংবাদিক, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের (পরিচয়পত্র থাকা সাপেক্ষে) ক্ষেত্রে শিথিলযোগ্য।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *