বছর শেষ হতে আর মাত্র দশদিন। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাত্রছাত্রীদের হাতে উঠবে কবে? বিভিন্ন মহলের এমন প্রশ্নের জবাবে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। চব্বিশের শেষপ্রান্তে এসেও পঁচিশের পাঠ্যবই বিতরণের টাইমলাইন এনসিটিবির হাতে না থাকায় বইয়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জনের সিদ্ধান্তই যেন এখন সরকারের গলার কাঁটা। ইতোমধ্যে প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেটের কাছে সরকারের ব্যয় বেড়েছে আটশ’ কোটি টাকার বেশি।
এদিকে প্রাথমিকের বাংলা বইয়ে জাতীয় সংগীত ও পতাকার ছবি শেষে যাওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে এনসিটিবি। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অর্থ অপচয়ের বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্তে নেমেছে সরকার। তবে প্রশ্ন উঠেছে, বেশি টাকা গচ্ছা দিলেও গতির বিপরীতে মন্থরতা কেন? বই ছাপার কাজে এনসিটিবির নির্ধারিত টাইমলাইন মানা হলে অতিরিক্ত সময় লাগল কেন কিংবা এনসিটিবির প্রকৃত নিয়ন্ত্রণের পেছনে রয়েছে কে?
‘প্রথম একটি মিটিংয়ে তাকে ডাকা হলেও পরবর্তী কাজের বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য পাননি। কী কাজ হয়েছে সেটাও জানতে পারিনি। তবে কী কারণে ডাকা হয়নি সেটা জানি না। শুধু জানি আমাকে একটা কমিটিতে রাখা হয়েছে— অধ্যাপক মাইনুল হোসেইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জন্য মনোনীত বিশেষজ্ঞ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিনামূল্যের পাঠ্যবই এখন পর্যন্ত প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ছাপা হয়েছে। তবে ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা শুরুর প্রক্রিয়াগুলো এখনো পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। বেশকিছু বইয়ের এখনো টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। ফলে কাজ শেষ করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর নির্দিষ্ট টাইমলাইন জানাতে পারেনি এনসিটিবি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এত লম্বা সময় নেয়ার কোনো অযৌক্তিকতা ছিল না। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব অংশীজন কাজ করলে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না কাউকে।
পাঠ্যবই পরিমার্জন থেকে ছাপার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বডির সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী নতুন বই লেখন থেকে পরিমার্জনের কাজে সর্বোচ্চ ২০ কার্যদিবসের প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ২টি ফর্মাল ওয়ার্কশপ আয়োজন করে এনসিটিবি। প্রতিটি ওয়ার্কশপের জন্য ৫ দিন করে মোট ১০ কার্যদিবসের প্রয়োজন হয়। এরপরে যৌক্তিক মূল্যায়নের জন্য (ফর্মাল ওয়ার্কশপের কাজের মূল্যায়ন) আরও ৫ কার্যদিবস প্রয়োজন হয়। এর বাইরে ডিজাইন, বুক ফর্মেটের (প্রচ্ছদ এবং ইলাস্ট্রেশনের কাজ) জন্য ৫ কার্যদিবসের প্রয়োজন হয়।
এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি কাজের মাঝে সমন্বয়, পরিমার্জন কিংবা যৌক্তিক মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত বিরতি রাখলে এই কাজ শেষ করতে বড়জোর ২ মাস প্রয়োজন হয়। কিন্তু রাখাল রাহা অন্য কাউকে কাজের সাথে সম্পৃক্ত না করে একাই সব কাজ সম্পন্ন করায় প্রায় ৪ মাসেও পরিমার্জনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এনসিটিবি যে-সব বক্তব্য দিচ্ছে এগুলো নিজেদের বাঁচানোর জন্য।
কয়েক দশক থেকে বই ছাপানোর কাজ করেন এমন একজন প্রকাশকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এনসিটিবির বেশিরভাগ লোক অযোগ্য। তাদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতার অভাবে অযথা ভুল খোঁজেন। আবার যিনি যে কাজের উপযুক্ত নয় তাকে দিয়ে সে কাজ করালে ভুল বেশি হবে। কিন্তু যারা অভিজ্ঞ, তাদের মূল্যায়ন নেই। বই ছাপানোর কাজে বিলম্ব হওয়ার পেছনে এটাই আসল কারণ। আমার কাছে যে-সব তথ্য আছে, তাতে দেখেছি অন্য বছরের তুলনায় এবার ভুলের সম্ভাবনাও বেশি থাকছে। বছর শুরু হলেই আপনারা সেটা দেখবেন।
জানা গেছে, ২০২৫ সালের নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দর দিয়ে কাজ নেয় প্রেস মালিকরা। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) অনুযায়ী সিন্ডিকেট করে প্রেস মালিকরা বই ছাপার কাজ বাগিয়ে নিলেও দরপত্র যাচাই ও মূল্যায়নে পিপিআর ২০০৮ এর ৩১(৩) বিধি অনুযায়ী টেন্ডার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি হলে রি-টেন্ডার সুপারিশ করার কথা। কিন্তু প্রেস মালিকরা প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশিতে টেন্ডার জমা দিলেও এনসিটিবি পুনরায় টেন্ডার না করেই কাজ দিয়ে দেয়।
এমনকি পুনরায় টেন্ডার না করে কাজ দেয়ায় গত ২১ নভেম্বর এনসিটিবির বৈঠকে একজন সদস্য আপত্তি তুললে সেটাও আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এনসিটিবির দাবি, সময় স্বল্পতার কারণে তারা পুনরায় টেন্ডারিং করার সময় পায়নি। ফলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে আটশ’ কোটি টাকার বেশি। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে তদন্ত নেমেছ সরকার। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সময় স্বল্পতা হলো কেন? একটি নতুন বইয়ের কাজ তুলতে যেখানে সর্বসাকুল্যে ২ মাসের বেশি সময় ব্যয় হওয়ার কথা নয়, সেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে মাসের পর মাস অপেক্ষা কার স্বার্থে?
‘বই পরিমার্জনের কথা বলা হলেও এটা খুব বেশি কিছু পরিবর্তন হয়নি। এই স্বল্প পরিবর্তনের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই। আমি সরাসরি বলেছি এনসিটিবিকে। বই নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ভুক্তভোগী আমরা, অথচ সুবিধা নিচ্ছেন অন্যরা। এখনো মামলা থেকেই মুক্তি পেলাম না— আবুল হাসনাত কবীর, ২০২৩ সালে এনসিটিবির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ম্যথ ইজ গেমের কর্ণধার
বিগত সরকারের আমলে নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন ছিল বেশ জোরাল। সেই আন্দোলন দমাতে এনসিটিবির মামলায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৪ জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। পরে রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে নেয়া হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পরও এনসিটিবির সেই মামলা থেকে রেহাই পায়নি আন্দোলনকারীরা। মামলার ভুক্তভোগী না হলেও সাজ্জাদুর রহমান সেই আন্দোলনের সাথে জড়িত পরিচয়ে এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পান।
সেই মামলায় কারাগারে যাওয়া ম্যাথ ইজ গেমের কর্ণধার আবুল হাসনাত কবীর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বই পরিমার্জনের কথা বলা হলেও এটা খুব বেশি কিছু পরিবর্তন হয়নি। এই স্বল্প পরিবর্তনের জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করার কোনো কারণ নেই। আমি সরাসরি বলেছি এনসিটিবিকে। বই নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তাহলে তারা কেন এখানে আসলেন? কোন শ্রেণির বইয়ে কোন কন্টেন্ট যাবে এটা নিয়েও তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। এক্ষেত্রে বাড়তি যে অর্থ ব্যয় হলো সেটার দায় নেবে কে? ভুক্তভোগী আমরা অথচ সুবিধা নিচ্ছেন অন্যরা। এখনও মামলা থেকেই মুক্তি পেলাম না। মামলা অপসারণের কথা একাধিকবার বললেও এনসিটিবি গড়িমসি করছে।
এনসিটিবির বই পরিমার্জনে পূর্বের অভিজ্ঞতা আছে বিভিন্ন উইংয়ের এমন সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে পরিমাণ সময় ছিল তাতে সব কাজ সময়মতো শেষ করা সম্ভব হতো। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন উইং সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত সাবজেক্ট ভিত্তিক বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে তাদের কাজ করতে পারেননি। আবার যারা কাজ করেছেন তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ জমা দিলেও বাকি কাজে এনসিটিবিতেই বিলম্ব হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ে পরিমার্জন ও অন্যান্য কাজে প্রভাব বিস্তার করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বই পরিমার্জন কাজে মনোনীত বাংলার বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদুর রহমান। তবে সার্টিফিকেট সূত্রে সাজ্জাদুর রহমান হলেও এই বিশেষজ্ঞ সকল নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন রাখাল রাহা হিসেবে। এনসিটিবি’র একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সদস্য এমনকি চেয়ারম্যানের উপরও কৌশলে খবরদারি করেন এই বিশেষজ্ঞ। প্রভাব খাটাতে ব্যবহার করেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ছাত্র পরিচয়। বর্তমানে অলিখিতভাবে পুরো এনসিটিবির কাজের উপর প্রভাব রাখেন সাজ্জাদুর রহমান।
যদিও তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, লেখকের আইডেন্টিটি যখন তৈরি হয়, তখন সার্টিফিকেট নামের চেয়ে তার লেখক নামটিই বেশি প্রাধান্য পায়। এটা সব মহলেই গ্রহণযোগ্য। লেখনী এবং শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। সেই সূত্রে উপদেষ্টা আমাকে চেনেন। কিন্তু আগে তিনি আমাকে চিনতেন না। আর শিক্ষা নিয়ে আমার বিভিন্ন গবেষণা পত্র পুরস্কৃতও হয়েছে।
এনসিটিবির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) বাংলার বিশেষজ্ঞ পদে মনোনীত হলেও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের অন্য কাজগুলো একাই সামাল দিচ্ছেন। এরমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জন্য মনোনীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিপল-ই বিভাগের অধ্যাপক মাইনুল হোসেইনের সঙ্গে কথা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, প্রথম একটি মিটিংয়ে তাকে ডাকা হলেও পরবর্তী কাজের বিষয়ে তিনি আর কোনো তথ্য পাননি। ফলে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কাজ করতে পারেননি এই অধ্যাপক। তবে কী কারণে তাকে ডাকা হয়নি জানতে চাইলে এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমাকে পরে আর কোনো মিটিংয়ে ডাকা হয়নি। কী কাজ হয়েছে সেটাও জানতে পারিনি। তবে কী কারণে ডাকা হয়নি সেটা জানি না। শুধু জানি আমাকে একটা কমিটিতে রাখা হয়েছে।’
এদিকে রসায়ন, গণিত, ইসলাম ধর্ম, ফিজিক্স, বায়োলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ের পরিমার্জন পরবর্তী কাজও সম্পাদন করছেন সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা)। এসব বিষয়ের মনোনীত বিশেষজ্ঞদের সাথে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, তারা সবাই নির্দিষ্ট টাইমলাইনের মধ্যেই পরিমার্জনের কাজ শেষ করে এনসিটিবিতে জমা দিয়েছেন। তবে পরবর্তীতে কী কারণে পাঠ্যবই প্রিন্টে যেতে বিলম্ব হয়েছে সেটার বিষয়ে তারা জানেন না। উল্লিখিত সাবজেক্ট বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, তাদের সবাই সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পরিমার্জনের কাজ সম্পন্ন করে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তবে লম্বা সময় ব্যয় হলেও বেশ কয়েকটি বিষয়ের বই টেন্ডার সম্পন্ন করে এখনো প্রিন্টে পাঠাতে পারেনি এনসিটিবি।
জানা গেছে,
বাংলা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ পদে মনোনীত হলেও বাস্তবে সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এর বাইরে আইইআর থেকে প্রাক্-প্রফেশনাল মাস্টার অব এডুকেশন (প্রাক্-এমএড) এবং নিজে একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করেন। এই বিশেষজ্ঞের জন্য একটি গাড়ি বরাদ্দও দিয়েছে এনসিটিবি। বই পরিমার্জনের জন্য অন্য কোনো বিশেষজ্ঞ এমনকি এনসিটিবির একাধিক সদস্যও নিয়মিত গাড়ির সুবিধা পায়না।
বাংলা বিষয়ে পরিমার্জনের জন্য মনোনীত হলেও অন্য বিষয়গুলোরও দেখভাল করছেন সাজ্জাদুর রহমান। এমন বেশকিছু প্রমাণ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। এসব নির্দেশনায় পাঠ্যবইয়ের ফন্ট নির্ধারণ থেকে গ্রাফিক্স এবং বইয়ের প্রচ্ছদ এবং কোন অংশে কী থাকবে, এসব বিষয়ে নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। তার দিকনির্দেশনায় ইতোমধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের জাতীয় সংগীত ও পতাকার ছবি পেছনের অংশে স্থান পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এসব প্রসঙ্গে সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা) বলেন, আমি বাংলার পরিমার্জন টিমের সাথে আছি। তবে এক ধরনের কো-অর্ডিনেশনের কাজ কাউকে না কাউকে করতে হয়। বিভিন্ন টিমে কে আসবে, কোনটা কোথায় বসবে, পরিমাপ কেমন হবে এসব বিষয়ে কেউ না কেই কাজ করতেন। আমি সেটাই করছি।
তবে ভুলের দায় একা নিতে নারাজ সাজ্জাদুর রহমান (রাখাল রাহা)। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়ের পরিমার্জন এবং পরিবর্তনের জন্য আলাদা কমিটি কাজ করেছে। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’ তবে বইগুলোর পরিমার্জন এবং কোন অংশে কী থাকবে সেটা নির্দেশনা সাজ্জাদুর রহমানই দিয়েছেন, তার স্বাক্ষরিত একটি প্রমাণ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এনসিটিবির বর্তমান চেয়ারম্যানসহ উচ্চপদস্থা কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন সাজ্জাদুর রহমান। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এনসিটিবির আসল নিয়ন্ত্রক কে? নতুন পাঠ্যপুস্তকে কাগজের মান থেকে বিভিন্ন স্তরে ইতোমধ্যে নান অনিয়মের সন্ধান পাওয়া গেলেও প্রশ্ন উঠেছে এসবের দায় নেবে কে?
কাজের দীর্ঘসূত্রিতা ও অন্যান্য অভিযোগের প্রসঙ্গে সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমাদের কাজগুলো পরিমার্জন টিমের সাথে। কিন্তু এর বাইরে অনেক প্রক্রিয়া শেষ করে বই ছাপাখানায় যায়। কাজেই দীর্ঘসময় ব্যয় হওয়ার প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। তবে চলতি বছর কাজ শুরু হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। অন্য বছর এই সময়ে বইয়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে থাকে। তাছাড়া পুরোনো ঝঞ্ঝাল দূর করতে হয়ত সময় লেগেছে।
সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, বিশেষজ্ঞদের কাজ নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল। পরে আমরা সেটা সমাধান করে পরিমার্জনের কাজ শেষ করেছি। কিন্তু কাউকে ডাকা না হলে সেটার বিষয়ে আমার জানা নেই।
এসব প্রসঙ্গে কথা হয় এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসানের সঙ্গে। টেন্ডারিংয়ের আগে এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের বিষয়ে প্রেস মালিকরা কীভাবে জানত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, এটা আপনারা বলতে পারেন। তবে আমি মনে করি, তারা প্রাক্কলিত দরের বিষয়ে জানত কি না সেটা তদন্তের আগে বলা উচিত নয়। এর সঙ্গে কারো জোগসাজস আছে কি নেই সেটা প্রয়োজন মনে করলে সরকার তদন্ত করে দেখুক। আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। অর্থ খরচ বেশি হওয়ার পেছনে আসল কারণ হলো বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।
সময় বেশি লাগার বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নতুন পাঠ্যবইয়ের কাজ করিনি। পরিমার্জন, নতুন গল্প লেখন, ইলাস্ট্রেশন এবং সর্বোপরি আর্থিক সমন্বয় করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এছাড়া জুলাই বিপ্লবের গল্প নেয়ার বিষয়েও আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয়। আর শিক্ষার্থীরা গত বছরের কারিকুলাম থেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতোই এনসিটিবির গাড়ি দিয়ে তাকে (সাজ্জাদুর রহমান) নিয়ে ও দিয়ে আসা হয়। তবে একজন এনসিটিবির সদস্যকে গাড়ির সুবিধা দেয়া হলেও তিনি গাড়ি ব্যবহার করেন না দাবি চেয়ারম্যানের। কিছু জটিলতা আছে, এটার জন্য এনসিটিবি দায়ী নয়। নতুন গাড়ির জন্য আমরা কাজ করছি, সেটা আসলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
সাজ্জাদুর রহমান হলেও রাখাল রাহা নামে স্বাক্ষর করার প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, লেখক নাম ব্যবহারে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। তবে ভুুলের দায়ভার জড়িতদেরই নিতে হবে। এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।