চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ কন্যাশিশু। এই সময়ে অপহরণ ও পাচার হয়েছে ১৩৬ জন এবং বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে দুই হাজার ৩০১ জন কন্যাশিশু।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) কন্যাশিশু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য তুলে ধরেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম। একই সঙ্গে সংগঠনটি এসব বন্ধে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জরিপের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, এ বছরের আট মাসে ১৮৬ জন হত্যার শিকার হয়েছে। ৭৬ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বিশেষ শিশুও ছিল। গত আট মাসে যৌতুকের কারণে নির্যাতিত হয়েছে ১৩ জন, তাদের পাঁচজন যৌতুক দেওয়ায় হত্যার শিকার হয়েছে। একই সময়ে আত্মহত্যা করেছে ১৮১ কন্যাশিশু।
সভায় সংগঠনটির সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশে কন্যাশিশুর জন্মকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। ছেলেসন্তান জন্ম দেওয়াকে সামাজিকভাবে গৌরবের বিষয় ভাবা হয়। বিষয়টিকে তিনি কন্যাশিশুর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন। এসব কারণে তারা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ঝুঁকিতে রয়েছে।
এসব বৈষম্যমূলক আচরণ তুলে ধরা দরকার জানিয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংস আচরণ শুরু হয় একেবারে জন্মের সময় থেকে। তার মতে, অনেক সময় ভ্রূণ অবস্থা থেকেই সহিংস আচরণ হয়। এ থেকে সমাজকে বের করে আনার জন্য গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় ফোরামের পক্ষ থেকে ১০ সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
শিশুদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা।
‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’ জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন করা।
ঘটনার শিকার কন্যাশিশু ও নারীর পরিবর্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সম্পর্কিত প্রচলিত আইনের বিধান সংশোধন করা।
সব ধরনের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধসহ পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ।
কন্যাশিশু নির্যাতনকারীদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করা।
শিশু সুরক্ষায় একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন করা।
বাল্যবিয়ে বন্ধের লক্ষ্যে সামাজিক সুরক্ষার বাজেট বাড়িয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কন্যাশিশু ও তাদের অভিভাবকদের এর আওতায় আনা। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচারণা।
সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা।
নির্যাতন বন্ধে বিদ্যমান আইনসমূহের সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ।
কন্যাশিশুর প্রতি সমাজের মনোভাব বদলাতে নারী-পুরুষ, সরকার, প্রশাসন, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, পরিবারসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
শেয়ার করুন