চিকিৎসক সনদপত্র নেই, নেই শিক্ষাগত কোনো উচ্চ সনদ। তবুও তিনি চিকিৎসক। নেই বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদও। তবুও ইচ্ছে মতো নিজের নামের আগে চিকিৎসক এবং পরে বড় বড় ডিগ্রি ব্যবহার করে সিলেট নগরে খুলে বসেছেন দাঁতের চিকিৎসালয়। রয়েছে তার চাকচিক্যময় ডাক্তারী চেম্বার। চেম্বারের সামেনে রয়েছে বিশাল সাইনবোর্ড। হরেক রকম চিকিৎসকের ভুয়া ডিগ্রি লাগিয়ে চিকিৎসক পেশার মতো একটি সুরক্ষিত পেশায় জড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলছেন এই ভুয়া ডাক্তার। তিনি আর কেউ নন, তিনি সিলেট নগরীর মদিনা মর্কেট কালিবাড়ি পয়েন্ট এরাকাস্থ ‘আশা ডেল্টার কেয়ার-এর কথিত ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়। তিনি চেয়ারে বসে শুধু ব্যবস্থাপত্র লিখেই রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট নিয়ে থাকেন ২শ’ টাকা করে। ডিপ্লোমা করা সুধীর চন্দ্র রায় সরাসরি ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করে দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসার নামে এ প্রতারণা ও অপচিকিৎসা বাণিজ্য করে আসছেন সিলেট মহাগনরীতে।
এ বছরের ৯ জুন আশা ডেল্টার কেয়ার ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় চেম্বারে মোস্তাক মিয়া (২৫) নামের এক ব্যক্তি আসেন তার বাম দাঁতে মাড়ির ব্যথার চিকিৎসা করাতে । কিন্তু বাম মাড়িতে চিকিৎসা না দিয়ে ভুয়া ডাক্তার সুধীর একটি মেশিন দিয়ে ওই রোগীর ডান পাশে মাড়ির উপর অংশে ভালো দাঁতে ছিদ্র করে ফেলে দেন। পরে বলেন ঔষধ সেবনের পর উভয় দাঁতে ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। এসময় ওই রোগী প্রতিবাদ করলে একটি প্যাডে
চিকিৎসাপত্র দিয়ে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে চেম্বার থেকে তাড়িয়ে দেন।
অপচিকৎসার ভুক্তভোগী মোস্তাক মিয়া জানান, ভুয়া ডাক্তারসুখীর চন্দে রায়ের চেম্বারে গিয়ে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার ডান পাশের ভালো দাঁতটিও হারিয়ে ফেলেছি।এভাবে ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়ের কাছে আসা শত শত রোগী প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রতারিত রোগী মোস্তাক মিয়া বাদী হয়ে সম্প্রতি ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়কে প্রধান আসামী করে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে (জালালাবাদ) সি আর মামলা (নং-১৪৪/২০২২) দায়ের করেছেন। ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের কলকতা গ্রামের মনরঞ্জন রায়ের পুত্র ।
প্রতারক ডাক্তার সুধীর রায় কাছে নিতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন ছাতক পৌর শহরের চরের বন্দ গ্রামে,হাজেরা বেগম,চমক আলী,রহিম আলী,দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের মোস্তাক মিয়া, সেবুব মিয়াসহ শতাধিক রোগী। চিকিৎসা নিতে গিয়ে নষ্ট দাঁতের বদলে তারা হারিয়েছেন ভালো দাত।
এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আশা ডেন্টাল কেয়ার এর ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায়-এর চেম্বারে আসেন ছাতক পৌর শহরের হাজেরা নামে এক মহিলা।ওই মহিলার বাম দাতের মাড়িতে প্রচন্ড ব্যথা হলে চিকিৎসা করতে গিয়ে পড়েছেন বড় বিপাকে। ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় তার বাম দাতের চিকিৎসা না কবে ডানে ভালো দাঁতের মাড়ির উপর মেশিন দিয়ে একটি ছিদ্র করে দেন। এ নিয়ে রোগীর ও ভুয়া ডাক্তার সুধীর চন্দ্র রায় চেম্বারে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিল বলে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নয়ন দাশ অপু ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য হাসান আহমদসহ উপস্থিত হয়েছেন। প্রতারিত রোগীর বক্তব্য শুনে তার পক্ষে প্রতিবাদ করায় তারা অপরাধী হয়েছেন। প্রতিবাদকারীদেরকে চাদাবাজ বানিয়ে ভুয়া ডাক্তার সুধীর রায় একটি নাটক সাজিয়েছেন। অথচ এখানে চাদাবাজি মতো কোন ঘটনা ঘটেনি বলে ছাতক থানার অফিসার ইনচাজ ওসি মাহবুবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,এর আগে সুধীর চন্দ্র রায় দাঁতের ডাক্তার সেজে সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকের ট্রাফিক পয়েন্টে “আশা ডেন্টাল কেয়ার” খোলে শত শত রোগীর সাথে প্রতারনা ব্যবসা চালিয়েছেন। এ অপরাধে প্রতারক সুধীর চন্দ্র রায়কে ২০১৫ সালে ১১ফেরুয়ারি ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আইনুর আক্তার পান্না আটক করেন। তার প্রতিষ্টানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বৈধ কাগজ পত্র ও ডাক্তারী কোন সনদ না থাকায় ডাক্তার নামের প্রতারক সুধীর চন্দ্র রায়কে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
জেল থেকে বের হয়ে ছাতক ছেড়ে সিলেট মদিনা মাকেটের কালিবাড়ি পয়েন্ট এসে তিনি আশা ডেল্টার কেয়ার নামে ফের চেম্বার খোলে প্রতারনা শুরু করেন।
অভিযোগের বিষয়ে সুধিীর চন্দ্র রায়ের সাথে সেলফোনে কথা হলে তিনি জানান, তিনি ডিপ্লোমা করেছেন মাত্র। তার কোনো ডাক্তারী সনদ নেই। তার চেম্বারে একজন দন্ত চিকিৎসক রেখে তিনি চিকিৎসা দেন, এজন্য তিনি নিজ নামের পূর্বে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে সিলেটে মামলা এবং এর আগে সুনামগঞ্জে জেল খাটা ও জরিমানার কথা অবলীলায় শিকার করেন তিনি।
