পাঁচ গ্রুপের কব্জায় চিনির বাজার

বাংলাদেশ

দেশে চিনির চাহিদার সিংহভাগই মূলত আমদানিনির্ভর। আর এসব চিনি আমদানি করছে পাঁচটি কোম্পানি। তাদের ইচ্ছাকৃত দামে চিনি বিক্রি হওয়ায় বাজারে সর্বকালের রেকর্ড তৈরি হয়েছে। কৃত্রিম সংকটে বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কোম্পানিগুলো বলছে, গ্যাসের সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ তারা দিতে পারছে না।

মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চিনির ব্যবসা মূলত সিটি, মেঘনা, এস আলম, ইগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপের হাতে। বাজারে দাম কম বা বেশি হওয়া মূলত তাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। কারণ সরকার গত সেপ্টেম্বর মাসে দাম নির্ধারণ করলেও সেটি তারা মানেনি। এরপর চলতি মাসে তাদের উপস্থিতিতেই দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়ানো হলো। এর পরও তারা সরবরাহ দিচ্ছে না।

মৌলভীবাজারে ৩৮ বছর ধরে পাইকারি চিনি বিক্রি করছেন মোহাম্মদ আলী ভুট্টো। তিনি জানান, চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ তাঁরা পাচ্ছেন না। এ কারণে এক সপ্তাহ ধরে তিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী বলেন, চিনি আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক হারে ব্যবধান থাকায় তৈরি চিনি আমদানিতে ব্যবসায়ীদের পড়তা পড়বে না। ফলে তাঁরা আমদানির সাহস পাচ্ছেন না। তাঁরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন যাতে তৈরি চিনির শুল্ক কাঁচামালের মতো সমান করা হয়। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়ে নীরব রয়েছেন। আর এই সুযোগে মিলাররা তাঁদের ইচ্ছেমতো দামে চিনি বিক্রি করছেন।

মৌলভীবাজারের খুচরা চিনি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁদের বাজারে পরিবেশক পর্যায়ে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বস্তাপ্রতি ৫ হাজার ২০০ টাকা দিলে গোপনে কেউ কেউ বিক্রি করছেন। এতে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১০৪ টাকা। এই দামে চিনি বিক্রি করলে প্রশাসন অভিযান চালাতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকে ব্যবসা বন্ধ রেখেছেন তাঁর মতো অনেকেই।

জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাঁদের কাছে চিনির কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় চিনি উৎপাদন করতে পারছেন না। তাঁদের দৈনিক ৫ হাজার মেট্রিক টন চিনি পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সেখানে করতে পারছেন ১ হাজার টনের মতো। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলেই বাজারে দাম সহনীয় হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি বশির উদ্দিন বলেন, মিল থেকে চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ তাঁরা পাচ্ছেন না। মিলে চিনির জন্য অনেক ট্রাক অপেক্ষমাণ থাকলেও সরবরাহ পাচ্ছে না। ফলে বাজারে দামের কোনো ঠিক নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে চিনি পরিশোধনকারী মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে প্রতি কেজি খোলা চিনি খুচরা পর্যায়ে ৯০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৪ টাকা আর প্যাকেটজাত ৮৯ টাকা। নির্ধারিত দামে চিনি সরবরাহ না দেওয়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হয় সরকার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *