সব মা–বাবাই চান তাঁদের সন্তান আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠুক, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারুক, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো মানসিকতার হোক, সবার সঙ্গে মিলেমিশে পথ চলুক। সন্তানের এই আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে ওঠার চাবিকাঠি কিন্তু মা-বাবার হাতেই থাকে।
অর্থাৎ তাঁরা সন্তানের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছেন, কীভাবে তাকে মূল্যায়ন করছেন, তার সঙ্গে কেমন সুরে কথা বলছেন, তার সামনে অন্যদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছেন, মা–বাবার মধ্যে সম্পর্ক কেমন—এসবই আত্মবিশ্বাসী মানুষ তৈরির অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
কোন কোন অভ্যাসের চর্চা করলে আপনার সন্তানও আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে উঠবে, চলুন জেনে নিই সেসব।
১. ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে দিন
শিশুকে তার জীবনের ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নিতে দিন। সেটি হতে পারে পছন্দের পোশাক বেছে নেওয়া কিংবা বিকেলের নাশতার দুটি খাবারের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ। এসব ছোট সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিলে তার নিজের মতামত দেওয়ার সক্ষমতা তৈরি হয়, তার নিজের চিন্তার ওপর আস্থাও তৈরি হয়।
২. শিশুর প্রচেষ্টাকে উদ্যাপন করুন
ক্লাসে প্রথম হলে কিংবা কোনো প্রতিযোগিতায় জিতলেই কেবল উদ্যাপন করতে হবে, এমন নয়। শিশু যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, কোনো প্রতিযোগিতার মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপন করার সাহস দেখিয়েছে, সে জন্যই তাকে বাহবা দিন। যেকোনো বিষয়েই তার প্রচেষ্টাকে উদ্যাপন করুন, জিতুক বা হারুক; অংশগ্রহণকেই বড় করে দেখাতে শেখান। আপনার এই অভ্যাস তাকে যেকোনো কাজের জন্য চেষ্টা করতে শেখাবে।
৩. ভালো শ্রোতা হোন
শিশু যখন কোনো কথা বলবে তখন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সে সময় মুঠোফোন কিংবা হাতের কাজ একপাশে সরিয়ে রাখুন। এতে সে বুঝবে, তার বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং নিজেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করতে পারবে।
৪. শিশুকে মতামত দেওয়ার সুযোগ দিন
যেকোনো বিষয়ে শিশুকে মতামত দেওয়ার সুযোগ দিন। আপনার কোনো সিদ্ধান্তে দ্বিমত থাকলে তার সম্পর্কে জানতে চান, তা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। এতে শিশু জানবে যে তার চিন্তাভাবনার মূল্য আছে। ফলে বাড়ির বাইরে স্কুল–কলেজে সহপাঠীদের সঙ্গে বা অন্য যেকোনো জায়গায় মতামত দেওয়ার বা নিজের সিদ্ধান্ত জানানোর মতো আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবে সে।
৫. ভালোবাসা প্রকাশ করুন
সন্তানকে জড়িয়ে ধরা, বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলা, তাকে ভরসা দেওয়ার মতো কাজ করা শিশুর মধ্যে একধরনের মানসিক নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে। যে শিশুরা বাড়িতে নিরাপদ ও উষ্ণ পরিবেশে বড় হয়, তারা অন্যদের তুলনায় শক্ত আত্মমর্যাদার মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে। সে যেমন, ঠিক তেমনভাবেই নিজেকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
৬. ব্যর্থতাকে শিক্ষা হিসেবে নিন
ছোট ছোট কাজে শিশু ব্যর্থ হতেই পারে, যেমন দুধ খেতে গিয়ে গ্লাস থেকে ছলকে যাওয়া, খেলায় হেরে যাওয়া। এসব ক্ষেত্রে শিশুকে তিরস্কার না করে তাকে তার ভুল বুঝতে দিন। এটি তার মধ্যে একধরনের স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করে। সে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পায় এবং সব সময় নিখুঁত থাকার চাপ থেকে মুক্ত থাকে।
৭. ভালো গুণের প্রশংসা করুন
অন্যের প্রতি দয়া দেখানো, কোনো বিষয়ে কৌতূহল প্রদর্শন, ধৈর্যধারণের মতো গুণাবলির জন্য শিশুর প্রশংসা করুন। এতে তার আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে, কাজে আরও মনোযোগী হবে।
৮. শিশুকে দায়িত্ব নিতে শেখান
শিশুকে ছোট ছোট কাজের দায়িত্ব দিন। যেমন রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করা, ব্যাগ গোছানো, বোতলে পানি ভরা ইত্যাদি। এতে সে নিজেকে যেকোনো কাজের জন্য সক্ষম ভাবতে শিখবে। সে বুঝতে পারবে যে মা–বাবা তার ওপর ভরসা করছেন, তারও যে কিছু ক্ষমতা আছে সেটির ওপর আস্থা রাখছেন। এতে শিশুর নিজের প্রতি বিশ্বাস গভীর হবে।
৯. শিশুকে ঝুঁকি নিতে দিন
নতুন কোনো খেলা হোক কিংবা উঁচু কোনো গাছে ওঠা, শিশুকে নতুন অভিজ্ঞতা নিতে দিন। যে ঝুঁকিগুলো তুলনামূলক নিরাপদ, সেসব নিতে তাকে উৎসাহ দিন। এতে সে তার সক্ষমতা আবিষ্কার করতে পারবে এবং নিজের সীমার বিকাশ ঘটাতে পারবে। এর মাধ্যমে ধাপে ধাপে তার সাহস বাড়বে।
১০. শিশুর কাছে আত্মবিশ্বাসের উদাহরণ হোন
শিশুরা মা–বাবাকে খুব কাছ থেকে দেখে বড় হয়। তাই তার সামনে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে উপস্থাপন করুন। যখন সে আপনাকে প্রত্যয়ের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দেখবে, সাহসের সঙ্গে নতুন কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখবে, নিজের প্রতি যত্নশীল দেখবে; তখন সে–ও তার নিজের মধ্যে এসব গুণ ধারণ করতে শুরু করবে। সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট