ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস চোখের ছোঁয়াচে রোগ রোধে

লাইফস্টাইল

ডা. মো. আরমান বিন আজিজ

সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাছে-পিঠে এখন প্রচুর মানুষের চোখ উঠছে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ সব চোখ ওঠাই সাধারণ চোখ ওঠা নয়। কখনো কখনো তা আরও বেশি কিছু। সাধারণ চোখ ওঠার বাইরে অনেকেই ভাইরাল কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। এটি চোখ ওঠার মতো রোগ হলেও মারাত্মক ছোঁয়াচে ভাইরাস সংক্রমণ।

অনেকেই একে স্বাভাবিক চোখ ওঠা মনে করে প্রথম থেকে কোনো গুরুত্ব দেন না। মূলত এটি একধরনের এলাকাভিত্তিক মহামারি। অনেক বিশেষজ্ঞ এটিকে ইকেসি বা এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। অন্য সব মহামারির মতো এটিকেও গুরুত্ব
দেওয়া উচিত।

এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস প্রথমে এক চোখে, পরে দুই চোখেই আক্রান্ত হয়। সাধারণত এডিনোভাইরাস দিয়ে এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস হয়ে থাকে। পরে তা সেকেন্ডারি ইনফেকশন ডেভেলপ করতে পারে, যা কনজাংটিভালে আর্টিফিশিয়াল লেয়ার, জায়ান্ট সেল পেপিলমা এবং কিছু নতুন উন্মুক্ত রক্ত নালিকা তৈরি করতে পারে। ফলে চোখ স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি মাত্রায় ফুলে যায়, যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।

এডিনোভাইরাস ছাড়া আরও কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বা কেমিক্যাল সংস্পর্শের দ্বারাও এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। এগুলোর মধ্যে আছে হার্পেস সিম্প্লেক্স, স্টেফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস, অ্যাসিড, লাইম, অ্যামোনিয়া এক্সপোজার ইত্যাদি।

লক্ষণ

  • চোখ লাল হওয়া। প্রথমে এক চোখ পরে দুই চোখ লাল হয়।
  • চোখ ব্যথা করা।
  • চোখে খচখচ অনুভব করা।
  • রোদ বা উজ্জ্বল ও স্বাভাবিক আলোয় তাকাতে অস্বস্তি।
  • চোখে সাদা ময়লা আটকানো।
  • চোখ থেকে পানি পড়া।
  • চোখ স্বাভাবিকের থেকে একটু ছোট হয়ে যাওয়া।
  • চোখ ফুলে যাওয়া।
  • চোখ থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া।

এসব লক্ষণের সঙ্গে জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গগুলো দেখা দিলে বাসায় বসে থাকাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। চিকিৎসা কমিউনিটি মেডিসিনের ভাষায়, ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।’ যেহেতু এটি ছোঁয়াচে রোগ, তাই প্রতিরোধের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে

  • যথাসম্ভব আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত গ্লাস, গামছা, সানগ্লাস, মোবাইল, কলম ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
  • বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রছাত্রী আক্রান্ত হয়ে থাকলে, তাকে বা তাদের কিছুদিন আইসোলেশনে রাখা, সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়লে স্কুল বা নির্দিষ্ট শ্রেণি ৭ থেকে ১৪ দিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে।
  • অফিসের কেউ আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়া থেকে তাকে ছুটি নেওয়া অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিজ উদ্যোগে ছুটি দেওয়া।
  • যেহেতু এটি একটি নির্দিষ্ট চোখের রোগ, অনেক এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস রোগী চিকিৎসা নিতে গিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসে জীবাণু ছড়িয়ে দিয়ে আসতে পারে। তাই নোজোকোমিয়াল সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যান্য চক্ষু চিকিৎসা গ্রহণের জন্য চক্ষু হাসপাতালগুলোতে গিয়ে জরুরি নয় এমন জিনিসপত্র ছোঁয়া বা ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া হাসপাতালের দায়িত্বশীল এবং চিকিৎসকদের উচিত এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ করে হাসপাতাল বা ক্লিনিক ত্যাগের পর রোগীর সংযোগ এলাকা বা জিনিসপত্র বা যন্ত্রপাতিগুলো নিজ দায়িত্বে ডিজ-ইনফেক্টেন্ড করে নেওয়া।
  • আর যদি কেউ নিজে বা পরিবারের কেউ এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হয়েই যায়, তাহলে সাধারণ চোখ ওঠা না মনে করে এবং অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে চোখে ব্যবহার করা যাবে না।

এপিডেমিক কেরাটো-কনজাংটিভাইটিস জটিল আকার ধারণ করলে চোখের কনজাংটিভাল লেয়ারে একটি কৃত্রিম আবরণ তৈরি হতে পারে। যদি সেটির যথাযথ চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে আপনাকে দীর্ঘদিন বা দীর্ঘ মেয়াদে চোখের জন্য ভুগতে হতে পারে। এ ছাড়া চোখের কর্নিয়া ও এন্টেরিয়র সেগমেন্ট আক্রান্ত হলে সাময়িক, এমনকি স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে।

লেখক: চক্ষুরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *