স্টাফ রিপোর্টার : গত সোমবার মধ্যরাতে নগরীর বালুচরে পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ছাত্রলীগকর্মী আরিফ আহমদ। এ ঘটনায় নিহতের মা আঁখি বেগম বাদী হয়ে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু সহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ছাত্রলীগকর্মী আরিফ খুনের ঘটনার পর এলাকাতেই ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নিপু। কিন্তু মামলা দায়েরের পর পুলিশি অভিযানের খবরে এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দেন নীপু। বর্তমানে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। শুধু নিপুই নয়, তার সহযোগী অস্ত্রবাজরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
পুলিশ বলছে, নীপুকে গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে গত রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিপুসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।হিরণ মাহমুদ নিপু সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। পংকজ পুরকায়স্থের পর তিনি জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান। কিন্তু তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সেই সময় জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে দিতে বাধ্য হয়ে কেন্দ্র। সভাপতির পদ হারালেও ছাত্রলীগের বালুচর গ্রুপের আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন নিপু।
এলাকাবাসী জানায়, বালুচরে নিপুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বলয় গড়ে ওঠে। তার শেল্টারে এলাকায় জমি দখল, সন্ত্রাস, রাহাজানি চলতো। তারা প্রকাশ্যে এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতো। এতে সব সময় ভয়-আতঙ্কে থাকতেন সাধারণ মানুষ। র্যাব-পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন নিপু।
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নীপু মহানগরীতে নতুন অর্ন্তভুক্ত হওয়া ৩৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে নিপু জয়লাভ করার পর এলাকায় তার গ্রুপের কর্মীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গত ৫ মাসে একাধিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে তারা।
গত মাসে নিপু ও তার বাহিনীর এসব বেপরোয়া কর্মকা-ে বালুচর এলাকায় স্থানীয়রা মানববন্ধন করেছিলেন। এরপরও এলাকায় শান্তি ফেরাতে প্রশাসনের কোনো কার্যকর উদ্যোগ ছিল না।
এ অবস্থায় ১৫ই নভেম্বর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বলয়ের কর্মী আরিফকে পূর্ব বিরোধের জের ধরে হামলা করে নিপু গ্রুপের কর্মীরা। এ ঘটনায় আরিফের মা থানায় অভিযোগ দিলে নীপু ও তার বাহিনীর সদস্যরা হাসপাতাল থেকে ফেরার দিনই আরিফকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে। এ ঘটনায় নিহত আরিফের মা আঁখি বেগম বাদী হয়ে বুধবার রাতে এসএমপির এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিরণ মাহমুদ নিপুকে।
মামলায় অন্য আসামিরা হলো- উত্তর বালুচর আল ইসলাহ আবাসিক এলাকার আব্দুল কাইয়ুম আনাস, একই এলাকার মামুন মজুমদার, শান্তিবাগের হেলাল মিয়া, বালুচরের শরীফ আহমদ, বালুচর পয়েন্টের জুনায়েদ, বালুচর সোনার বাংলা এলাকার আনহাজ আহমদ রনি, আল ইসলাহ এলাকার আমির আলী, উত্তর বালুচর এলাকার সুলতান আহমদ ও সবুজ আহমদ। ঘটনার দিন ভোরে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে রনি ও মামুনকে গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজিত চক্রবর্তী জানান, গ্রেফতার হওয়া ২ আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযানে রয়েছে।
শেয়ার করুন