মাধবপুরে বিয়েতে মাইকে গান বাজানোয় নারীকে সমাজচ্যুত

হবিগঞ্জ

ছেলের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে মাইকে গান বাজানোর অপরাধে হবিগঞ্জের মাধবপুরে লালু বানু নামে এক নারীকে এক মাস ধরে সমাজচ্যুত করে রাখা হয়েছে। উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের সাতপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সমাজচ্যুতির কারণে ওই নারীর সঙ্গে গ্রামের সবাই কথা বলা বন্ধ রেখেছেন। বাড়ি থেকে বের হলেই লোকজন তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ করেছেন লাল বানু। ফলে চার সন্তান নিয়ে তিনি বিপাকে আছেন।

লাল বানু জানান, এক মাস আগে তাঁর ছেলে নূরুল হকের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ছোট সাউন্ডবক্সে বিয়ের গীত বাজছিল। সে সময় গ্রামের প্রভাবশালীরা এসে তাদের গান বন্ধ করতে বলেন। নিষেধ শুনে তারা গান বাজানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। গত ১৩ অক্টোবর বাড়িতে মিলাদ পড়ানোর জন্য লাল বানু স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা জাকির হোসেনকে দাওয়াত দিলে তিনি আসেননি। কারণ জানতে চাইলে জানানো হয়, লাল বানুকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতপাড়া গ্রামের প্রভাবশালী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই গ্রামের রীতি হচ্ছে বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো যাবে না। কারণ, ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা নিষেধ। এছাড়া মাইকের উচ্চ শব্দের কারণে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়। লাল বানু সমাজের কথা না মেনে উচ্চ শব্দে বিয়েবাড়িতে সাউন্ডবক্স বাজানোর কারণে তাঁর বাড়িতে মসজিদের ইমামকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে‌। লাল বানু সমাজের কাছে ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা হবে। লাল বানু ক্ষমা চাইতে রাজি নন। এ কারণে তাঁকে আপাতত সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

সাতপাড়া মসজিদের ইমাম জাকির হোসেন বলেন, ‘গ্রামের লোকজন নিষেধ করায় আমি লাল বানুর বাসায় মিলাদে যাইনি। ইসলামে গান-বাজনা নিষেধ। এছাড়া মাইক বাজলে অন্য মানুষের সমস্যা হয়।’

এ ব্যাপারে চৌমুহনী ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার সাতপাড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের বলে এসেছি বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য। কারণ কাউকেই সমাজচ্যুত করা যাবে না।’

মাধবপুরের ইউএনও মনজুর আহসান বলেন, সমাজচ্যুত করার ঘটনার বিষয়টি শুনে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। সমাজচ্যুত করা আইনত অপরাধ।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *