‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব নিয়েছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ডিবির কাছে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এমন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রতারণা ও নানান অনিয়মের অভিযোগে আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার থাকায় সেখানে অবস্থান করা অসহায় ব্যক্তিদের সেবা প্রদান করবে ফাউন্ডেশনটি।
আজ সোমবার (৬মে) দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন। এসময়ে তার আশ্রমে থাকা বৃদ্ধ, অনাথ শিশু ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি যারা আছেন, তাদের কি হবে? সেই কথা চিন্তা করেই আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে আগ্রহ দেখানো হয়েছে। তারা সব ধরনের সেবা প্রদান করার কথা জানিয়েছেন। আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের কর্ণধার গতকাল ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন। তাকে অনুরোধ করা হলে, তিনি মিল্টনের আশ্রমে থাকা ব্যক্তিদের খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের দায়িত্ব নেন।’
এমন কি আশ্রমে সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকবেন এবং তিনি চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন বলেও জানানো হয়েছে।
ডিবির হারুন আরও জানান, আশ্রমে এসময়ে যে খরচ হবে সেই খরচ আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন থেকে ব্যয় করা হবে। আর আপাদত মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার আশ্রমেই সবাইকে সেবা ও চিকিৎসা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘মিল্টন সমাদ্দার মাদকসেবী এবং তিনি ইয়াবা সেবন করেন। নিজেই ইয়াবা সেবনের কথা স্বীকার করেছেন। ইয়াবা সেবন করে টর্চার সেলে শিশু ও বৃদ্ধদের পেটাতেন মিল্টন।’
মিল্টনের গ্রেপ্তারের পর থেকেই নানামুখী সংকটে পড়ে আশ্রয়কেন্দ্রটি। সেখানে থাকা আশ্রিতদের কী হবে তা নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে সেখানে থাকা শিশু-বৃদ্ধদের দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন।
এর আগে সাংবাদিকদের হারুন অর রশিদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দারকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এতে ভয়াবহ ও লোমহর্ষক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। মাদকাসক্ত মিল্টন মানুষের হাত-পা কেটে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতেন। মিল্টন বিভিন্ন জায়গা থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও রোগাক্রান্তদের ধরে আনতেন। তাদের দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান নিতেন, যা এসব মানুষের পেছনে খরচ করতেন না। বরং তারা অসুস্থ হলে নিজেই তাদের চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলতেন। তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রয়েছে। ডিএমপির ডিবি প্রধান বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথিক মানুষ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যে নির্যাতন করে, ব্লেড ছুরিতে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন তাদের যে বানর বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি স্বীকার করেছেন, এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড ছুরি জব্দ করেছি।
বিভিন্ন অভিযোগে গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগ। পরে তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় ৩টি মামলা হয়।
শেয়ার করুন