সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের সিট নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে আরেক ছাত্রলীগ নেতার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে আবাসিক শাহপরাণ হলে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদ চৌধুরী তন্ময় (রিশান তন্ময়)।
জানা যায়, রিশান তন্ময় সজীবুর রহমানের গ্রুপের একজন অনুসারী ছিলেন। গত কয়েকমাস পূর্বে অন্তর্কোন্দলের জেরে রিশানকে গ্রুপ থেকে বের করে দেন সজীব। পরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় একটি মেসে উঠেন তন্ময়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার মধ্যরাতে মারধরের শিকার ওই নেতা শাহপরাণ হলের ৪২৫ নম্বর রুমে গেলে সজিবুর রহমানের অনুসারী সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্ব ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী তন্ময়কে মারধর করেন। পরে ওই রুম থেকে বের করে সিঁড়ি দিয়ে নিচতলা পর্যন্ত মারতে মারতে হলের গেস্ট রুমে নিয়ে আসেন তারা। এসময় তার দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় রাত আড়াইটায় উপস্থিত হন হলের প্রভোস্ট মীজানুর রহমান, হলের সহকারী প্রভোস্ট কৌশিক সাহা, সহকারী প্রক্টর মিজানুর রহমান ও সমুদ্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান সুব্রত সরকার।
এসময় তাকে মারধরের বিষয়টি তারা কোনোভাবেই সমাধানের চেষ্টা না করে তার পূর্ববর্তী নানা কর্মকান্ডের সমালোচনা করে বলতে থাকেন, ‘তুমি হল থেকে চলে গেছিলা। আবার কেনো হলে এসেছো ?’
এছাড়া গত ২৪ জানুয়ারি তন্ময় তার বিভাগ ছাত্রলীগের প্যাডে ‘গত বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কিন্তু রাতের ঘটনায় এ বিষয়টি নিয়েও শাসানো হয় তাকে। কিন্তু তন্ময়কে মারধরের বিষয়টি নিয়ে সেখানে কোনো সমাধান করেননি প্রশাসন।
এ বিষয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে মারধরের অভিযোগ তুলে তন্ময় বলেন, আমি শাহপরাণ হলের ৪২৫ নম্বর কক্ষে ভর্তি হয়েছি। রবিবার রাতে ওই রুমে গেলে তারা কয়েকজন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমি নাকি ছাত্রলীগ নেতা আসাদের রাজনীতি করি। এছাড়া গত বছরের জানুয়ারিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সমর্থন জানালেও তারা আমাকে শাসায়। এজন্য আমাকে তাদের গ্রুপের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে আমাকে হল থেকে বিতাড়িত করতে চায়। আমি না গেলে সাজ্জাদের নেতৃত্বে তারা আমাকে কিল, ঘুষি ,লাথি মারতে থাকে। তারপর রুম থেকে বের করার সময় ওই ব্লকের লাইট বন্ধ করে দিয়ে আমাকে তারা বেধম প্রহার করে। পরে গেস্ট রুমে নিয়ে আমার হাতও বেঁধে পেলে তারা।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে সজীবের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী সাজ্জাদ বলেন, ‘‘সে আমাদের জুনিয়রের রুমে ঢুকছিল। পরে সজীব ভাই আমাকে যাইতে বলছিল গ্রুপের সিনিয়র হিসেবে। আমি গেছি। তন্ময় আমাদের কাছের ও আদরের ছোট ভাই। তাকে মারার কোনো প্রশ্নই উঠে না। সিনিয়রদের সাথে তার ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। সে গতকাল মাইরের একটি প্রস্তুতি নিয়ে আসছিল। আমরা আরো মাইরাটা হতে দেই নাই। পরে স্যাররা কথা বলে তাকে মেসে পাঠিয়েছে।
এ ঘটনার অভিযুক্ত নেতা সাজ্জাদ ২০১৯ সালে সিলেটের লাক্কাতুরা মন্দিরের কাছ থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে এয়ারপোর্ট থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা করেন ওই থানার এক কর্মকর্তা।
অন্তর্কোন্দলে মারধরের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা সজীবুর রহমান বলেন, ‘‘তাকে মারধর করা হয়নি। সে মারার প্রস্তুতি নিয়ে গেছিল। পরে জুনিয়ররা মিলে জোর করে তাকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেছে। যদি মারধর করতো তাহলে সে সুস্থ থাকতো না।’
এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, তন্ময় রাতে হলে আসলে উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি বুঝে তাকে তার মেসে পাঠাই।
মারধরের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সে আমাকে কোনা অভিযোগ দেইনি।
শেয়ার করুন