অ্যাপলপ্রেমীদের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে উন্মোচিত হলো আইফোন ১৬ সিরিজ। গতকাল (৯ সেপ্টেম্বর) অ্যাপলের কুপার্টিনো হেডকোয়ার্টারের স্টিভ জবস থিয়েটারে অনুষ্ঠিত ‘গ্লোটাইম’ ইভেন্টের মাধ্যমে পর্দা উঠে আইফোনের নতুন সিরিজের।
নতুন অপারেটিং সিস্টেম ও অত্যাধুনিক প্রসেসরের পাশাপাশি আইফোনের নতুন সিরিজে বিশেষভাবে চোখে পড়ে ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’-কেন্দ্রিক এআই ফিচারের আধিক্য। স্বাভাবিকভাবেই ফোনটিকে অ্যাপল তাঁদের প্রথম এআই ফোন হিসেবে তুলে ধরেছে।
পূর্ববর্তী প্রজন্মের আইফোনের মতোই আইফোন ১৬ সিরিজেও আছে ৪টি মডেল। বেজ মডেলের পাশাপাশি বাকি ৩টি মডেল হলো: আইফোন ১৬ প্লাস, প্রো ও প্রো ম্যাক্স। উল্লেখ্য, আইওএস ১৮ অপারেটিং সিস্টেমের পূর্ণাঙ্গ ভার্সনটি বাজারে আসবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর।
এবারে চলুন আইফোন ১৬ সিরিজের ফিচার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক:
ডিসপ্লে
আইফোনের নতুন সিরিজের বেজ ও প্লাস মডেলের বডি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। ডিসপ্লের আকারেও আসেনি কোনো পরিবর্তন। ৬.১ ইঞ্চি ও ৬.৭ ইঞ্চি ওলেড ডিসপ্লের মডেল দু’টিতে সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস উপভোগ করা যাবে ২০০০ নিটস।
আইফোন ১৬ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেল দুটিতে আগের জেনারেশনের চেয়ে ২ ইঞ্চি বড় ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রো মডেলে ৬.৩ ইঞ্চি এবং প্রো ম্যাক্সে ৬.৯ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লে আছে। এছাড়া এদের ডিসপ্লেতে থাকা বেজেল অ্যাপলের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘পাতলা’ বলেও দাবী করা হয়েছে। পাশাপাশি এই মডেল দুটির বডির পেছনের অংশটা সিরামিক শিল্ড দিয়ে তৈরি- যেটা অন্যান্য স্মার্টফোনে ব্যবহৃত গ্লাস ম্যাটেরিয়ালের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী।
প্রসেসর
আইফোন ১৬-এর এই স্ট্যান্ডার্ড দুটি মডেলেই প্রসেসর হিসেবে থাকছে এ১৮ চিপসেট। ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি প্রসেসরটিতে সিপিইউ কোর রয়েছে ৬টি যার মধ্যে ২টি পারফর্মেন্স কোর এবং ৪টি ইফিসিয়েন্সি কোর। অ্যাপলের দাবী অনুযায়ী, পূর্ববর্তী জেনারেশনের তুলনায় আইফোন ১৬ এর বেজ ও প্লাস মডেলের সিপিইউ ৩০ শতাংশ এবং জিপিইউ ৪০ শতাংশ দ্রুত গতিতে কাজ করতে সক্ষম। পাশাপাশি আগের প্রজন্মের চেয়ে ব্যাটারির শক্তিও কম খরচ হয় আইফোন ১৬-এর এই দুই মডেলে।
তবে প্রসেসরের দিক থেকে প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে অত্যাধুনিক এ১৮ চিপসেট- যেটা আইফোন ১৬ এর প্রো ও প্রো ম্যাক্স মডেলে পাওয়া যাবে। এটিও ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি। তবে ৬ কোরের সিপিইউ ও জিপিইউ এর পাশাপাশি ১৬ কোরের নিউরাল ইঞ্জিনও থাকছে এ১৮ প্রো প্রসেসরটিতে। ফলে এআই ফিচার ব্যবহার করার জন্য প্রো ও প্রো ম্যাক্স মডেল দুটি আরও বেশি কার্যকর হবে।
ক্যামেরা
‘ক্যাপসুল’ আকৃতির উলম্ব বা ভার্টিক্যাল ক্যামেরা লেআউট থাকছে আইফোন ১৬-এর বেজ ও প্লাস মডেল দুটিতে। ২এক্স অপটিক্যাল জুম সমৃদ্ধ ৪৮ মেগাপিক্সেলের ফিউশন ক্যামেরার পাশাপাশি আরও আছে ১২ মেগাপিক্সেলের আলট্রা-ওয়াইড লেন্স, যার কল্যাণে ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করা সম্ভব।
প্রো মডেল দুটির ক্যামেরা ফিচার স্বাভাবিকভাবেই আরও উন্নত। ৪৮ মেগাপিক্সেলের ফিউশন ক্যামেরা দিয়ে ডলবি ভিশনে ৪কে রেজোলিউশন ও ১২০ ফ্রেম রেটে (প্রতি সেকেন্ডে) ভিডিও ধারণ করা যাবে। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে রেজোলিউশন ও ফ্রেম রেটের এটাই সেরা যুগলবন্দী। ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ও ম্যাক্রো শটের জন্য প্রো মডেল দুটোতে ৪৮ মেগাপিক্সেলের আলট্রা-ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া প্রো ও প্রো ম্যাক্স দুটি মডেলেই এবার ৫এক্স টেলিফটো লেন্স থাকছে- যেটা আগের প্রজন্মের আইফোনে ৩এক্স ছিলো এবং সেটাও কেবলমাত্র প্রো ম্যাক্স মডেলের জন্য।
‘ক্যামেরা কন্ট্রোল’ বাটন
আইফোন ১৬ সিরিজের সবকটি মডেলেই পাওয়া যাবে ‘ক্যামেরা কন্ট্রোল’ বাটন। এই টাচ-সেনসিটিভ বাটনটি ব্যবহার করে ক্যামেরা অ্যাপ চালু করা থেকে শুরু করে ছবি তোলা, ভিডিও করা, ছবিতে জুম ইন ও আউট করা, এমনকি সেটিংস-এ এক্সপোজার ও ফিল্ডের ডেপথ্ অ্যাডজাস্ট করার মতো কাজগুলোও সহজেই করা যাবে।
‘অ্যাকশন বাটন’ এবার শুধু বেজ ও প্লাস মডেলেই থাকছে
আইফোন ১৬ সিরিজের বেজ ও প্লাস মডেলে পাওয়া যাবে অ্যাকশন বাটন। মজার বিষয় হচ্ছে আইফোন ১৫ সিরিজে এটা কেবলমাত্র প্রো ও প্রো ম্যাক্স মডেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু এবার হয়েছে উলটো আইফোন ১৬ সিরিজে অ্যাকশন বাটনটি বেজ ও প্লাস মডেলে সীমাবদ্ধ- যেখানে এটি মিউট বাটনের জায়গা নিয়েছে।
অ্যাকশন বাটনের কল্যাণে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই ক্যামেরা, ফ্ল্যাশলাইট, ভয়েজ মেমো, ট্রান্সলেট, ম্যাগনিফায়ারের মতো বিভিন্ন ফিচার একবার প্রেস করেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এই বাটনটিতে বিভিন্ন ফাংশনের শর্টকাটস কাস্টমাইজ করা যায়। এছাড়া অ্যাকশন বাটনটের মাধ্যমে কন্ট্রোল সেন্টারের বিভিন্ন সেটিংসও অ্যাডজাস্ট করা যায়। এমনকি এই বাটনটি দিয়ে দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফাংশন সেট করা সম্ভব।
৫টি ভিন্ন রঙে পাওয়া যাবে আইফোন ১৬ সিরিজের ফোনগুলো
আইফোন ১৬ সিরিজের ফোনগুলো ৫টি ভিন্ন ভিন্ন রঙে বাজারে পাওয়া যাবে। এগুলো হলো: কালো, সাদা, গোলাপী, টিল এবং আলট্রামেরিন।
প্রি-অর্ডার এবং আউটলেট শপিং
নতুন আইফোনের প্রি-অর্ডার শুরু হবে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এবং আউটলেটগুলো থেকে কেনা যাবে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে।
‘গ্লোটাইম’ ইভেন্ট ও অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স
কিছুদিন আগে গতকালের বহুল আলোচিত এই ইভেন্টটির সময়, তারিখ ও ভেন্যু ঘোষণা করার সময় ‘ইটস গ্লোটাইম’- এই ট্যাগলাইনটি ব্যবহার করে অ্যাপল। ট্যাগলাইনটির সাথে রঙিন আভা পরিবেষ্টিত অ্যাপলের লোগো দেখতে পাওয়া যায়। গত জুনে এআই প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাপল ইন্টিলিজেন্স’ ঘোষণা করার সময়ও ঠিক এরকম একটি হলোগ্রাফিক লোগোই ব্যবহার করেছিলো অ্যাপল। আবার অ্যাপলের ডিজিটাল অ্যাসিসট্যান্ট সিরি ‘অন’ করার সময়ও স্ক্রিনে একই ধরণের অ্যানিমেটেড রঙিন আভা (গ্লো) দেখা যায়।
বাংলায় ট্যাগলাইনটির আক্ষরিক অনুবাদ না করে ভাবানুবাদ করলে এরকম একটা অর্থ দাড়ায়- সময় এখন দীপ্তিময় বা আলোকময়। তবে এই দীপ্তিময় বা আলোকময় আভা যে আদতে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর দিকে ইঙ্গিত করছে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। আর তাই এআই ফিচারে আইফোন ১৬ যতটা আলোকিত, ‘গ্লোটাইম’ নামকরণের স্বার্থকতাও ততটাই।
আইফোন ১৬ সিরিজের ফোনগুলোর দাম
নতুন আইফোনের দাম ৭৯৯ ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫৯৯ ডলার পর্যন্ত হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় বেজ মডেলের ১২৮জিবি ভার্সনের দাম পড়বে ৯৫,৫০০ টাকার মতো। অন্যদিকে প্রো ম্যাক্স মডেলের ১টিবি ভার্সনটি পেতে চাইলে গুণতে হবে ১ ,৯১,২০০ টাকা।
উল্লেখ্য, আইফোন ১৬ এর বেজ ও প্লাস মডেল দুটিতে মেমোরির জন্য ১২৮জিবি, ২৫৬জিবি ও ৫১২জিবি ভার্সন রয়েছে। এছাড়া প্রো ও প্রো ম্যাক্স মডেল দুটিতে ব্যবহারকারী চাইলে ১টিবি মেমোরিও নিতে পারেন।
আইফোন ১৬ বেজ মডেল
১২৮জিবি- ৭৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৯৫,৫০০ টাকা)
২৫৬জিবি- ৮৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,০৭,৫০০ টাকা)
৫১২ জিবি- ১,০৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৩১,৪০০ টাকা)
আইফোন ১৬ প্লাস মডেল
১২৮জিবি- ৮৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,০৭,৫০০ টাকা)
২৫৬জিবি- ৯৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,১৯,৪০০ টাকা)
৫১২ জিবি- ১,১৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৪৩,৪০০ টাকা)
আইফোন ১৬ প্রো মডেল
১২৮জিবি- ৯৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,১৯,৪০০ টাকা)
২৫৬জিবি- ১০৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৩১,৪০০ টাকা)
৫১২ জিবি- ১,২৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৫৫,৩০০ টাকা)
১টিবি- ১,৪৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৭৯,২০০ টাকা)
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স মডেল
২৫৬জিবি- ১,১৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৪৩,৪০০ টাকা)
৫১২ জিবি- ১,৩৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১,৬৭,৩০০ টাকা)
১টিবি- ১,৫৯৯ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ ,৯১,২০০ টাকা)