আমি একজন সংখ্যালঘু বলছি-রুমিন ফারহানা

মুক্তমত

এখন শুধু বিরোধী দলই না, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠন নির্বিশেষে বলছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই, প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এই সব বীভৎস কাণ্ডগুলো ঘটেছে। তারাই এসব ঘটনা বারবার ঘটার পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন। তারাই এখন স্পষ্টভাবে বলছেন, এই সরকারের আশ্বাসে তারা এখন আর কোনো আস্থা রাখেন না

আমি নিজে সংখ্যালঘু। নানাক্ষেত্রে, বহুভাবে আমি সংখ্যালঘু। আমি যখন পথে চলি, কাজে যাই, গণপরিবহনে উঠি- আমি ঠিক টের পাই আমি সংখ্যালঘু। মানুষের চোখের দৃষ্টি, শরীরের ভাষা নানামুখী বৈরিতায় বুঝিয়ে দেয় আমি তাদের ঠিক সমান নই। পরিবারে খুব বেশি টের না পেলেও কর্মক্ষেত্রে একজন নারী হিসেবে, সংসদে বিরোধী রাজনৈতিক দলের একজন সদস্য হিসেবে এবং সর্বোপরি তীব্র নারীবিদ্বেষী সমাজে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে করতে আমি খুব ভালো বুঝতে পারি সংখ্যালঘু হওয়ার যন্ত্রণা আসলে কতোটা।

একটা বিষয় বোধ করি পরিষ্কার হওয়া দরকার। আমার নারী হিসেবে, রাজনৈতিক দলের একজন কর্মী হিসেবে সংখ্যালঘু হওয়া আর আজকের ভারত কিংবা বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু হওয়া কোনোভাবেই এক নয়। এই অঞ্চলে বর্তমান সময়ে ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হওয়া এক বীভৎস বিষয়। জীবন, সম্পদ, ঘর, পরিবার সবই এই পরিচয়ের কারণে ঝুঁকিতে পড়ে।

সবচেয়ে বড় ভয়ঙ্কর বিষয় হলো এই মানুষগুলোর পাশে রাষ্ট্রও দাঁড়ায় না। তাদের যুদ্ধটা নিষ্করুণ এবং একা। আর তাই নিয়মিত বিরতিতে যখন ধর্মীয় কারণে মানুষকে নানাবিধ ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে দেখি তখন আমার নানাক্ষেত্রে সংখ্যালঘু হওয়াজনিত সংকটকে বহুগুণ বাড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করি তারা কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন।

 

এদেশে সংখ্যালঘু হওয়া একটা গালি। জানতাম কথাটা, হাতেনাতে এর প্রয়োগ দেখলাম কিছুদিন আগেই (পয়লা জুলাই)Ñ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যকার ও গবেষক ড. রতন সিদ্দিকীর বাসার সামনে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনারের ভাষ্যমতে ‘দুপুরে ড. রতন সিদ্দিকী স্ত্রীসহ নিজ গাড়িতে বাসায় ফিরছিলেন। সে সময় তার বাসার সামনে রাখা একটি মোটরসাইকেলের জন্য গাড়িটি সরাসরি ভবনে প্রবেশ করতে পারছিল না। মোটরসাইকেল সরানোর জন্য ড. সিদ্দিকীর গাড়িচালক হর্ন দেন এবং পরে গাড়ি থেকে নেমে মোটরসাইকেলের মালিককে খোঁজেন। সে সময় তার বাসার পাশের মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে লোকজন বের হচ্ছিলেন। তাদের একটি অংশ সেখানে এসে হর্ন দেয়া নিয়ে প্রথমে ড. সিদ্দিকীর গাড়িচালক ও পরে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন’।

বিষয়টি যে স্রেফ একটি বাকবিতণ্ডা ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় মিডিয়ায় আসা ছবিতে। জনাব সিদ্দিকীর বাসার সামনে অসংখ্য মানুষের জমায়েত দেখা গেছে। ঠিক কী হয়েছিল সেটা সম্পর্কে আমরা অনেকটা স্পষ্ট ধারণা পেতে পারি অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর মেয়ে পূর্ণাভা হক সিদ্দিকীর বক্তব্য থেকে। একটি নিউজ পোর্টালকে তিনি বলেন, ‘একটি চক্র বাসার গেটের সামনে নিয়মিত বাজার বসায়, গেটের সামনে সবজির ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকে। এসব কারণে আমরা বাড়িতে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারি না। আজও গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছিলো না। গেটের সামনে একটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল, বাবা মোটরসাইকেলটি সরাতে বলেন। তারা বলেন সরাবেন না।’ এরপরই ঘটে আসল কাণ্ড। যা ছিল চিন্তা, মেধা, মননে, আজন্ম লালিত সংস্কারে সেটাই বেরিয়ে আসে হঠাৎ। পূর্ণাভা আরও বলেন, ‘নাস্তিক নাস্তিক বলে চিৎকার করে বাসার গেটে হামলা শুরু করে। এ সময় অনেকেই হিন্দু, হিন্দু বলে চিৎকার করেন। এদের মধ্যে কেউ ঢিল ছোড়েন, তারপর গেট ভাঙার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নারায়ে তাকবির বলে স্লোগান দিতে থাকেন।’

ধর্ম নিয়ে সুড়সুড়ি, ধর্মকে ঢাল হিসেবে সামনে এনে করে ফেলা যায় যেকোনো কিছু। এতে মানুষের সমর্থন যেমন আদায় করা যায় তেমনি নিজের লুকানো উদ্দেশ্য হাসিল করতেও সমস্যা হয় না কোনো। না হলে রামু, নাসিরনগর,  হোমনা, বানারিপাড়া, কলমাকান্দা, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী সহ জেলায় জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর বীভৎসতা চলে কি করে? এই ঘটনাগুলোর কোনো একটির বিচার হয়েছে, দোষীদের শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে তো জানা যায়নি। একটি ঘটনার যদি বিচার হতো তাহলে আর পরবর্তী ঘটনার পথ প্রশস্ত হতো না।

একই ধরনের আরও একটি ঘটনা ঘটে গত ১৭ই জুন নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজে। ঐ কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক পেজে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি’র বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। পরদিন সকালে পোস্টদাতা ছাত্রকে নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজের শিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাদের কাছে সোপর্দ করেন। সাদা পোশাকে যাওয়া তিন পুলিশ সদস্য ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগত কয়েকজন বাধা দেয়। বিকাল চারটার দিকে হ্যান্ডমাইকে জুতার মালা পরানোর ঘোষণা দেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরে তাদের কক্ষটি থেকে বের করা হয় এবং গেটের সামনে আনার পর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়া হয়।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে এই ঘটনা যখন ঘটে তখন ওই কলেজ ক্যাম্পাসে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ অনেক পুলিশ উপস্থিত ছিল। গলায় জুতার মালা নিয়ে যে ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, তার সবগুলোতেই দেখা গেছে তার পাশে পুলিশের উপস্থিতি। আচ্ছা, একবার কি চিন্তা করে দেখেছি তখন ঠিক কি মানসিক অবস্থা হয়েছিল জনাব স্বপনের? দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এক মুহূর্তের জন্য কি তিনি কল্পনা করেছিলেন এমন দিন দেখতে হবে তাকে? ঠিক কি অপরাধ ছিল তার? জনতার রোষানলে পড়া একজন শিক্ষার্থীকে ক্রুদ্ধ জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা? ছেলেটিকে জনতার হাতে তুলে দেয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি কি ছিল না গণপিটুনিতে ছেলেটির মৃত্যু? একজন শিক্ষক কি পারেন এমন অবস্থায় সন্তানতুল্য ছাত্রকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া, যত বড় ভুলই সে করুক না কেন? একটা প্রশ্ন মাথায় বার বার ঘুরছে। আজ যদি তিনি স্বপন কুমার বিশ্বাস না হয়ে রহমান বা আহমেদ হতেন তাহলেও কি এই পরিণতি ভোগ করতে হতো?

যখন মাইকে কয়েকবার জুতার মালা পরানোর ঘোষণা দেয়া হয় তখনকার অনুভূতি তিনি জানিয়েছিলেন এক জাতীয় দৈনিককে। তিনি বলেন, ‘তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমি ভবনের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করি। কিন্তু তিন সন্তান, স্ত্রী ও মায়ের কথা ভেবে সেটা পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিনা অপরাধে শত শত শিক্ষার্থীর সামনে জুতার মালা গলায় দিয়ে ছবি-ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হলো। এ লাঞ্ছনার পরে আমি আর কাউকে মুখ দেখাতে চাইনি।’
আমার নানা তার সারা জীবন শিক্ষকতা পেশায় থেকে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসরে যান। আমার পাঁচ খালার প্রত্যেকেই কলেজের শিক্ষক ছিলেন। আমার মা সারা জীবন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থেকে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে অবসর নেন। সুতরাং বলা যায়Ñ আমার পুরো পরিবারটিই শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই পরিবারের একজন হিসেবে এই শিক্ষকের ঘটনা আমাকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। আমি ওনার মুখে দেখেছি আমার পরিবারের মুখ। এই লজ্জা, এই যাতনা ওনার না, এটি জাতি হিসেবে আমাদের সকলের। নতুন প্রজন্মকে সভ্য করতে না পারার এ দায় এড়াই কি করে?

গত ১৪ই নভেম্বর ২০২১, প্রথম আলোতে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়Ñ গত ৫০ বছরে ৭৫ লাখ হিন্দু কমেছে দেশে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের বিষয় নিয়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো মানুষ নিজের মাতৃভূমি, নিজের বাড়িঘর, ভিটামাটি ছেড়ে অন্য দেশে যেতে চান না। অত্যাচারের কারণে বাংলাদেশের হিন্দুরা দেশ ছাড়ছেন, তাদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনের কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এটা বেশি ঘটেছে গ্রামের দুর্বল হিন্দুদের ক্ষেত্রে। কারণ আরও আছে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করেছে। প্রথমত, হিন্দুদের আউট মাইগ্রেশন হচ্ছে, অর্থাৎ হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে। দ্বিতীয়ত, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট তুলনামূলক কম। অর্থাৎ হিন্দু দম্পতিরা তুলনামূলকভাবে কম সন্তান জন্ম দেন। যদিও বিবিএস বা সরকারের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীভিত্তিক প্রজনন হারের কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। অর্থাৎ দেশত্যাগ বা মাইগ্রেশনই হলো হিন্দু জনগোষ্ঠী কমার মূল কারণ।
কিছুদিন আগে বাংলা ট্রিবিউনে আমি একটা কলাম লিখেছিলাম ‘গেলে জমি থাকলে ভোট, এই চক্র বন্ধ হোক’। লেখাটিতে আমি শারদীয় দুর্গাপূজার সপ্তমীর দিন কুমিল্লার এক পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফ রাখাকে কেন্দ্র করে যে তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার একটা চুলচেরা বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছিলাম। সেখানে আমি পরিষ্কার বলেছিলাম বাংলাদেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আছে, জঙ্গিবাদ আছে, এসব আন্তর্জাতিক প্রচারণা দীর্ঘদিন থেকে সরকার করছে। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এগুলোকে দেখিয়ে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার ন্যারেটিভ তৈরি করা। আর সম্ভবত এ কারণেই এই সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরে যত হামলা হয়েছে তার একটিরও বিচার তারা করেনি। বিচার অবশ্য না করারই কথা, সরকার যে আসলে এই ঘটনাগুলো ঘটাতে চায়, তার প্রমাণ হলো এসব ঘটনা যারা ঘটায় তাদের ক্ষমতাসীন দল বরং পুরস্কৃত করে।

নাসিরনগরের ঘটনার চার্জশিটভুক্ত তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে আমরা দেখেছি। মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে দুই আসামির মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এই ধরনের জঘন্য অপরাধীদের পুরস্কৃত করা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসনে একটাই বার্তা দেয় আর তা হলো সরকার হয় ন্যূনতম পরোয়া করে না আর না হলে সরকার নিজেই চায় এই ধরনের ঘটনা ঘটতে দিতে।

মোট জনসংখ্যায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্রমশ কমে আসা অনুপাত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, এ দেশে তারা ভালো নেই। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সবচেয়ে ভালো সরকার হিসেবে দাবি করা আওয়ামী লীগের শাসনামলের গত ৯ বছরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৯টি। এই হিসাব বিএনপি করেনি, করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এখন শুধু বিরোধী দলই না, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠন নির্বিশেষে বলছেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই, প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই এই সব বীভৎস কাণ্ডগুলো ঘটেছে। তারাই এসব ঘটনা বারবার ঘটার পেছনে বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করছেন। তারাই এখন স্পষ্টভাবে বলছেন, এই সরকারের আশ্বাসে তারা এখন আর কোনো আস্থা রাখেন না।

সম্প্রতি ‘অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যার প্রতিবাদে’ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশে’ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেনÑ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যদি সিদ্ধান্ত নেয় ভোট দেবে না, তাহলে জাতীয় সংসদের নির্দিষ্ট ৬২টি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আপনারা আবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কি জবাব দেবেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে? আপনাদের বলতে হবে, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম রক্ষা করিনি। ৬২টি নির্বাচনী এলাকা (সংসদীয় আসন) আছে, যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নেয় যে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেবো নাÑএসব নির্বাচনী এলাকা থেকে আপনারা নির্বাচিত হতে পারবেন না। আপনাদের স্বার্থে, আওয়ামী লীগের স্বার্থে বলছি, সংখ্যালঘু স্বার্থকে আলাদা করে দেখবেন না।’
তার এই কথাগুলো স্বভাবতই কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়-

১. আওয়ামী লীগ কি সত্যিই বিশ্বাস করে নির্বাচনে আসন পাবার জন্য তাদের ভোটের কোনো প্রয়োজন আছে?
২. আওয়ামী লীগ সরকার তবে কেবল তাদেরই নিরাপত্তা দেবে যারা তাকে ভোট দেয়?
৩. যদি আওয়ামী লীগের স্বার্থ আর সংখ্যালঘু স্বার্থ আলাদাও হয় তারপরও কি রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের সমান নিরাপত্তা বিধান রাষ্ট্রের কর্তব্য নয়?

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *